সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বরুণার মতো এক তরুণী আমার জীবনেও এসেছিল। আমার চেয়ে পড়ালেখায় ভালো। এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। দেখতে সূর্যের বাঁধভাঙা রোদের মতো উজ্জ্বল, চাঁদের মতো মায়াবী।

তখন উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। দুই মামার উপনয়ন। অনুষ্ঠানের চার-পাঁচ দিন আগে এক বিকেলে বাড়ির সামনে বসে ছোট মামার সঙ্গে গল্প করছি। হঠাৎ কানে এল, ‘আমার কাছে তো ভাংতি নেই। আপনি দাঁড়ান, বাসা থেকে এনে দিচ্ছি।’

নারী কণ্ঠ। সামনে ফিরতেই মায়াময় মুখটা দেখে মনে হলো ভীষণ আপন। ভালোবাসা, প্রেমের বিয়ে ইত্যাদি ব্যাপারগুলো বয়োজ্যেষ্ঠরা পছন্দ করেন না। কিন্তু মনকে সামাল দিতে পারি না। নাম কী, কোন ক্লাসে পড়ে? জানার চেষ্টা করি। বেশি সময় লাগে না, দ্রুতই জেনে যাই। উষসী ব্যানার্জি, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, বালিকা বিদ্যালয়ে।

আর অপেক্ষা করি না। লেগে পড়ি। তার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। দ্বিতীয় কি তৃতীয় দিনের দিন আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয় উষসী। একেই বুঝি লোকে বলে ‘হাসি তো ফাঁসি’। তার পর থেকে আমাকে দেখলেই উষসী হাসে। আমি নিশ্চিত হয়ে যাই, আমাকে সে পছন্দ করে। আরও আশ্চর্য ঘটনা, মামাদের উপনয়ন অনুষ্ঠানের দিন জানতে পারি, পারিবারিক সূত্রে সে আমাদের পরিচিত। আঙুলের কর গুনে তখনই হিসাব করে ফেলি, উষসী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করতে করতে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাব। আমাদের বিয়েতে কোনো সমস্যা হবে না।

অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পর পড়ালেখা মাথায় ওঠে। নানা অজুহাতে মামার বাড়ি যাওয়া শুরু করি। উষসীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকি। আমাকে দেখে একইভাবে হাসে ও। আমার প্রাণ জুড়িয়ে যায়। মনে হয়, এই হাসির জন্য জীবনও দিয়ে দেওয়া যায়। বাড়ি ফিরে টানা বই পড়ি। এর মধ্যে একদিন কলেজে বন্ধুদের সূত্রে ভারতীয় অভিনেত্রী সাই পল্লবীর একটা ছবি দেখে আশ্চর্য হয়ে যাই। উষসী আর পল্লবী যেন যমজ বোন। পার্থক্য শুধু উষসীর গজদাঁত আছে। বাড়ি ফিরে ডায়েরিতে কবিতার মতো করে লিখি, ‘ঠিক যেন সাই পল্লবী, আমার গজদন্তিনী।’

ভালো রেজাল্ট নিয়ে এইচএসসি শেষ করে মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি নিই। কিন্তু অল্পের জন্য চান্স হয় না। এর মধ্যে বহুবার মামার বাড়ি গেছি। কিন্তু কথা বলার সাহস করে উঠতে পারিনি। একদিন সাহস করে উষসীর পেছন–পেছন হেঁটে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি, ‘তোমার নাম কী?’ জবাবে ‘আশ্চর্য তো!’ বলে ধীরপায়ে হাঁটতে থাকে। কয়েকবার পেছন ফিরে দেখে। ভয়ে-উৎকণ্ঠায় আমার বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়। আর হেঁটে যাওয়ার সাহস হয় না। উষসী বাড়িতে ঢুকতেই তাঁর একজন অভিভাবক বেরিয়ে আসেন। আমাকে ডেকে বলেন, ‘কী জিজ্ঞাসা করছিলে? তোমাকে যেন আর না দেখি।’

আমি কিছু বলি না। দৌড়ে চলে আসি।

ওই আমার প্রথম ও শেষ প্রত্যাখ্যান। তারপর কোনো দিন চোখ তুলে আর কাউকে দেখিনি। উষসীর সঙ্গেও আর কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি।

আরও পড়ুনভালোবাসা দিবসের আগেই ব্রেকআপ নাকি পরে, কোনটা ভালো?০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রমনা বটমূলে গান–কবিতা–উচ্ছ্বাসে ছায়ানটের বর্ষবরণ, বিভাজন ভাঙার প্রত্যয়

পুব আকাশে সবে লাল সূর্য উঠতে শুরু করেছে। মঞ্চে প্রস্তুত শিল্পীরা। সামনে দর্শকসারিতে ভিড় জমে গেছে। শিল্পী সুপ্রিয়া দাশ গেয়ে উঠলেন ‘ভৈরবী’ রাগালাপ। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণের পালা। আজ সোমবার ভোরে রাজধানীর রমনা বটমূলে এর আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।

রাগালাপের পর ‘নূতন প্রাণ দাও, প্রাণসখা’ সম্মেলক গান শোনান ছায়ানটের শিল্পীরা। ‘তিমির দুয়ার খোলো’ একক গান পরিবেশন করেন শিল্পী দীপ্র নিশান্ত। পাখিডাকা ভোরে, সবুজের আচ্ছাদনে দর্শনার্থীরা যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেন এ আয়োজন।

এরপর একে একে ২৫টি রাগালাপ, গান আর আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়। সকাল সাড়ে আটটার দিকে ছায়ানটের শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত। এ সময় কণ্ঠ মেলান উপস্থিত হাজারো দর্শক। এর মধ্য দিয়ে এবারের আয়োজন শেষ হয়।

তবে অনুষ্ঠান শেষের আগে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ভয়াবহ মানবতার বিপর্যয় এবং গণহত্যায়, বিশেষ করে শিশু হত্যার তীব্র নিন্দা জানান তাঁরা। ফিলিস্তিনিরা আপন ভূমি রক্ষায় যে সংগ্রাম করছেন, তার প্রতিও সংহতি জানানো হয়।

এবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মূল বার্তা ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। রমনার বটমূল, ঢাকা, ১৪ এপ্রিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ