বিদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
Published: 15th, February 2025 GMT
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে শীর্ষে অবস্থান করছে এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষার মান এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা থাকায় দেশিদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও মুগ্ধ করেছে।
প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন উচ্চশিক্ষার জন্য। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে এখানে পড়াশোনা করা যায়। এজন্য এটা শিক্ষার জন্য সর্বাধিক উপযুক্ত একটি স্থান।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগে ৩২ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে ২৪ জন স্নাতক এবং ৮ জন স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী এসেছেন নেপাল থেকে, যারা প্রধানত ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগে পড়ছেন। এছাড়া সোমালিয়া, সোয়াজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।
ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন (২০২৪) অনুসারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২৯ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২ জন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাতজন, বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭২ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতজন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৯ জন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৭ জন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ জন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩ জন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ১২ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জে ১৯১ জন এবং খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।
ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগে অধ্যায়নরত নেপালি শিক্ষার্থী সুমিত শর্মা বলেন, “আমি শুনেছি এখানকার পড়াশোনা মানসম্মত। আমাদের দেশে ভেটেরিনারি বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানকার ডিগ্রির মান ভালো। ভারতে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও এখানে এসেছি। এছাড়া পড়াশোনা ও আনুষঙ্গিক খরচও কম।”
তবে বাংলা ভাষার কারণে শুরুর দিকে কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “ক্লাসে প্রথম দিকে বাংলার জন্য কষ্ট হতো। কোনকিছু বুঝতে পারতাম না, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না। দুই বছর আগে আমাদের জন্য বাংলা ভাষার কোর্স ছিল। কিন্তু নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বাতিল করা হয়েছে। এটি থাকলে নতুনদের জন্য ভালো হতো।”
গণিত বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত সোমালিয়ার ফারহান আবদি আলি বলেন, “আমার ভাই এখান থেকে পড়াশোনা করেছেন। তার কাছ থেকে শুনেই আমি এখানে এসেছি। এখানে পড়াশোনার খরচ কম এবং শিক্ষার মান ভালো। বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীরা খুবই বন্ধুসুলভ। বাংলা বলতে না পারলেও বিভাগের বা ডরমেটরির পরিবেশে আমি কোন সমস্যায় পড়িনি। এখানকার সংস্কৃতি আমার খুবই ভালো লেগেছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, মানসম্মত শিক্ষা এবং তুলনামূলক কম খরচ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত করেছে। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় আরো আধুনিকায়ন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, “বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরে। আমরা চেষ্টা করি, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে। কিছু সমস্যা থাকলেও তা সমাধানের জন্য কাজ করছি।”
তিনি বলেন, “কিছু বিদেশি শিক্ষার্থী আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়। তাদের জন্য বৃত্তি এবং টিউশন ফি ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তারা কোন সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মোহা.
তিনি বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক বন্ধুত্বসুলভ। তারা বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য আম দ র পর ব শ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
জাহাঙ্গীরনগর-সংলগ্ন মহাসড়কে চলন্ত বাসে ছিনতাই, চালকসহ আটক ৩
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ফটক এবং সিঅ্যান্ডবি এলাকার মাঝামাঝি স্থানে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শুভযাত্রা নামে একটি বাসে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একজন ছুরিকাহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাসটির চালকসহ তিনজনকে আটক করে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আটক তিনজন হলেন শুভযাত্রা বাসের চালক আলী হোসেন, তাঁর সহকারী মো. সোহেল ও কন্ডাক্টর আতিকুর রহমান।
প্রত্যক্ষদর্শী বাসের কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শুভযাত্রা বাসটি সাভারের সিটি সেন্টার এলাকায় এলে চারজন যাত্রী বাসে ওঠেন। এরপর বাসটি সিঅ্যান্ডবি এলাকায় এলে তাঁরা বাসের লাইট বন্ধ করে দিয়ে যাত্রী রবিউল হায়দারকে ছুরি ধরে তাঁর কাছে যত টাকা আছে তা দিতে বলেন। রবিউল টাকা বের করতে করতে তাঁরা পকেট থেকে টাকা ছিনিয়ে নেন এবং হাতে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় বাসের আরও কয়েকজনের কাছ থেকে মুঠোফোন, টাকা ও বাসে থাকা দুটি নতুন টেলিভিশন সেট ছিনিয়ে নিয়ে তাঁরা বাস থেকে নেমে যান। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে পৌঁছালে বাসে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী ও যাত্রীরা বাসটি আটক করে ক্যাম্পাসে নিয়ে যান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাসের চালক ও তাঁর দুই সহকারীকে আটক করে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
ছুরিকাহত রবিউল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সাভারের গেণ্ডা এলাকা থেকে বাসে উঠি। ছিনতাইকারীরা বাসে উঠে সরাসরি আমার কাছে এসে ছুরি ধরে বলে, যা টাকা আছে দে। আমি টাকা বের করতে করতে তারা আমার পকেটে হাত দিয়ে ১৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং আমার হাতের বাহুতে ছুরি মারে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছি।’
আরেক ভুক্তভোগী মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের একজন আমার গলায় ছুরি ধরে বলে মোবাইল দিয়ে দিতে। আমি ভয়ে ভয়ে মোবাইল দিয়ে দিছি। তারা আরও দুজনের কাছ থেকে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে গেছে। এ ছাড়া বাসে থাকা দুটি টেলিভিশন সেটও নিয়ে গেছে।’
বাসে থাকা যাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের একটা প্রোগ্রাম শেষে আমরা সাভারের মডেল মসজিদের সামনে থেকে বাসে উঠি। বাসটি সিটি সেন্টার এলাকায় এলে চারজন বাসে ওঠে। বাসে থাকা একজন মেয়ের পায়ে পাড়া দিয়ে ঝামেলা করে উত্তেজনা তৈরি করে। পরে বাসটি সিঅ্যান্ডবি এলাকায় পৌঁছালে তারা বাসের হেলপারের গলায় ছুরি ধরে এবং আমার পাশে থাকা এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। আমার ধারণা, তারা আগে থেকেই জানত, আমার পাশে যিনি বসা তার কাছে টাকা আছে।’
তানজিল হায়দার আরও বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা তিন মিনিটের মধ্যে ছিনতাই করে বাস থেকে নেমে যায়। আমরা বাস থেকে নেমে তাদের ধাওয়া দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ছিনতাইকারীরা বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে বাস ড্রাইভার বাসটি ছেড়ে দেয়। আমার ধারণা বাসের হেলপারের গলায় তারা যে ছুরি ধরে ছিল, সেটা নাটক হতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীরা টাকা ও মোবাইল নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানা-পুলিশ বাসের চালক, তাঁর দুই সহকারীকে আটক করেছে। তদন্ত করে দ্রুত ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।