মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে খেলাধুলার বিকল্প নাই : রনি
Published: 15th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেছেন, অপরাধী এবং খারাপ প্রকৃতিক লোকজন কখনো ভাল লোকদের সাথে মিশতে পারে না।
খারাপ লোকজন ভাল লোকদের সাথে মেশার চেষ্টা করে। খারাপ লোকদের দুরে রেখে ভাল লোকদের সামনের সারিতে এনে সামাজিক কাজ করতে হবে।
বিশেষ করে মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে হলে খেলাধুলার বিকল্প নাই। তাই প্রতিটি এলাকায় খেলাধুলার আয়োজনে যুবকদের উৎসাহিত করতে হবে। আর সন্ত্রাস ও মাদক ব্যবসায়ী কোন দলের লোক হতে পারে না। সমাজে যারা মাদক ব্যবসার সাথে লীপ্ত রয়েছে তাদের কাছ থেকে দুরে থাকার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহবান করেন তিনি।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) বিকালে ফতুল্লার মাসদাইর পতেঙ্গার মাঠে যুব শক্তি সামাজিক সংগঠনের আয়োজিত শহিদ জিয়া স্মৃতি প্রাইজ মানি ফুটসাল ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সমাজে অনেক বিত্তবান ব্যক্তি রয়েছে যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয় তাদেরকে দিয়ে সমাজের ভাল কাজে পাশে রাখা উচিৎ। সমাজের বিত্তবান ভাইদেরকে বলতে চাই আপনারা সমাজের ভাল কাজের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন।
তাহলে দেখবেন যারা সমাজে খেলাধুলা সহ ভাল কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করে তারা উৎসাহিত হবে। সমাজ থেকে মাদক সহ সকল ধরনের অপরাধ দুর করতে হলে বেশি বেশি খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরএন ফ্যাশন এমডি আব্দুল্লাহ আল লিমন এবং আরটি ফ্যাশনের এমডি মো সাকিব যৌথভাবে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে যুব শক্তি সামাজিক সংগঠনের সভাপতি মেহেদী হাসান রাব্বি'র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এসএম মাহমুদুল হক আলমগীর, ফরিদপুর জেল সুপার আবু ফাতহা, স্থানীয় সমাজ সেবক প্রমুখ।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি রোজিনা আক্তার, এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান প্রধান, এনায়েতনগর ইউনিয়ন ৭ ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান প্রধান, ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রধান, ২নং ওয়াডর্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মানিক, যুবদল নেতা রুবেল, সুমন সহ আরো অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ব এনপ র স র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝপথে বারবার বিকল ট্রেনের ইঞ্জিন, দুর্ভোগ যাত্রীদের
কক্সবাজার এক্সপ্রেস ঢাকা-কক্সবাজার যাতায়াতের সময় শুধু চট্টগ্রাম স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। পর্যটন মৌসুমে এই ট্রেনের টিকিটের চাহিদা প্রচুর। এই ট্রেনে চড়ে গত ৯ জানুয়ারি বিপাকে পড়েন শত শত যাত্রী। কেননা ওই দিন রাত সোয়া আটটায় ঢাকায় যাওয়ার পথে নরসিংদীতে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। বিকল্প ইঞ্জিন এনে ট্রেন চালু করতে হয়। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের ৩ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট বিলম্ব হয়।
শুধু কক্সবাজার এক্সপ্রেস নয়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে একের পর এক আন্তনগর, লোকাল, কমিউটারসহ যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে মাঝপথে। এভাবে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। বারবার ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনায় ঈদযাত্রা পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদের ছুটিতে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়ে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ২ মাসে ৫৬ বার ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারি মাসে ২৬ বার আর ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ বার। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বিকল হয়েছিল ৩১ বার। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে সর্বনিম্ন সোয়া ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে আট ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তি সময় লেগেছে যাত্রীদের।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী ট্রেন চালাতে যে পরিমাণ ইঞ্জিনের প্রয়োজন, তা নেই। জোড়াতালি দিয়ে ট্রেন সচল রাখতে হচ্ছে। ইঞ্জিনগুলো বিরতিহীনভাবে ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাই বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটছে। তবে ঈদের সময় যাতে মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল না হয়, সে জন্য তাঁরা তৎপরতা শুরু করেছেন। ইঞ্জিন–সংকটের কারণে ঈদের সময় এবার পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা ১০ জোড়া থেকে কমিয়ে ৫ জোড়া করা হয়েছে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীন প্রথম আলোকে বলেন, ইঞ্জিন–সংকটের পাশাপাশি বিকল হওয়ার সমস্যাও রয়েছে। তবে ঈদের সময় যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন যাতে মাঝপথে বিকল হয়ে না যায়, সে জন্য তাঁরা কাজ করছেন।
বর্তমানে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ২৯ জোড়া আন্তনগর, ৩০ জোড়া কমিউটার ও মেইল ট্রেন, ১৯ জোড়া লোকাল, ৪ জোড়া পণ্যবাহী ট্রেন, অর্থাৎ ১৬৪টি ট্রেন পরিচালনা করে। ঈদের সময় ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়বে। কেননা ঈদযাত্রায় যাত্রীবাহী ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নিয়মিত ট্রেনের বাইরে বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। তখন চাপ আরও বেড়ে যাবে।
বারবার ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে, শঙ্কা ঈদযাত্রায়
গত ২৭ জানুয়ারি সিলেট থেকে ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন দৌলতকান্দি-মেথিকান্দা সেকশনে এসে বিকল হয়ে যায়। ঢাকা থেকে ইঞ্জিন নিয়ে আসতে হয়। এতে ট্রেন পৌঁছাতে বিলম্ব হয় ৫ ঘণ্টা ১০ মিনিট। চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গিয়েছিল শমসেরনগরে। বিলম্ব হয় ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। চট্টগ্রাম থেকে ভূঞাপুরগামী ময়মনসিংহ মেইলের ইঞ্জিন গত ৫ জানুয়ারি রাত ১২টা ১০ মিনিটে বিকল হয়ে পড়ে। এতে দেরি হয়েছিল পৌনে ৯ ঘণ্টা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী বিরতিহীন আন্তনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়ে গত ২২ জানুয়ারি। ওই ট্রেন ঢাকায় পৌঁছায় আড়াই ঘণ্টা দেরিতে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী কনটেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন আখাউড়ায় বিকল হয়ে যায়। এতে দেরি হয় ৮ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।
আবদুল্লাহ আল মামুন নামের চট্টগ্রাম নগরের এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, গত ১ ডিসেম্বর সকালে সোনার বাংলা ট্রেনে করে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন। কিন্তু মাঝপথে ট্রেনের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। পরে ইঞ্জিন মেরামত করে ট্রেন ছাড়লেও তা চট্টগ্রামে পৌঁছায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘণ্টা পর। ওই দিন একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে তাঁর অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে ১৪০টি ইঞ্জিন আছে। এর মধ্যে ২০ বছরের পুরোনো রয়েছে ৮২টি। রেলের ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ বছর। ২০ বছরের কম, এ রকম ইঞ্জিন আছে ৫৮টি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে রেল খাতে লাখকোটি টাকা ব্যয় হয়। বিশেষ করে রেলপথ নির্মাণ ও দৃষ্টিনন্দন স্টেশন নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তবে ইঞ্জিন ও কোচের সংকটে নিরসনে মনোযোগ ছিল কম। শেষ ১২ বছরে মাত্র ৩৯টি ইঞ্জিন কেনা হয়েছিল। যার মধ্যে সর্বশেষ ২০২১ সালে কেনা হয় ২৯টি ইঞ্জিন। যেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
রেলওয়ের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন ১১৩ থেকে ১১৬টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। কাগজে-কলমে ১৪০টি ইঞ্জিন থাকলেও পাওয়া যায় ৮০ থেকে ৮২টি। একটি ইঞ্জিন গন্তব্যে পৌঁছার পর কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামে রাখতে হয়। কিন্তু তা সম্ভব হয় না। ফলে মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রেলে সেবার মান ও যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা একেবারেই বাড়েনি। অর্থ ব্যয়, বিনিয়োগ সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। ইঞ্জিন-কোচ সংগ্রহ করার চেয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে নজর ছিল রেলের। প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও ব্যয় হয়েছে বেশি। যার খেসারত দিচ্ছেন যাত্রীরা।