‘বুকের ধন ছাড়া আমি কী নিয়ে বাঁচমো’
Published: 15th, February 2025 GMT
শুক্রবার ছিল পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও পবিত্র শবে বরাত। কলেজ বন্ধ থাকায় বন্ধুদের সঙ্গে বগুড়ার ধুনটে যমুনা নদীর বাঁধে ঘুরতে গিয়ে কলেজছাত্র জুনায়েদ রহমান (১৮)। শবে বরাতের কারণে সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে ফিরতে বলেছিলেন মা। ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। একদিন পর ছেলে ফিরেছেন, তবে লাশ হয়ে।
জুনায়েদ বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের দাঁড়কিপাড়া মহল্লার জাহিদুর রহমানের ছেলে এবং বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের (আরডিএ) উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। জুনায়েদের বাবা জাহিদুর রহমান শেরপুরের ফুলতলা দাখিল মাদ্রাসার এবং মা শামীমা আক্তার শেরপুর পৌরসভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক। এ দম্পতির একমাত্র ছেলে ছিলেন জুনায়েদ। তাঁদের সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া একটি মেয়ে আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে জুনায়েদসহ চার বন্ধু ধুনটের বানিয়াজান বাঁধে ঘুরতে যান। পরে তাঁরা নদীতে গোসল করতে নেমে তীব্র স্রোতে নদীতে তলিয়ে যান। তখন স্থানীয় ডুবুরি আবদুর রাজ্জাক তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করলেও জুনায়েদ নিখোঁজ ছিলেন। পরে আজ রাজশাহী থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসেও ব্যর্থ হয়। পরে ডুবুরি আবদুর রাজ্জাক তল্লাশি চালিয়ে জুনায়েদের লাশ উদ্ধার করেন।
শনিবার বিকেলে জুনায়েদের লাশ বাড়িতে নেওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা শামীমা আক্তার। প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়া চেষ্টা করেন। জুনায়েদের লাশ দেখতে ভিড় করেন উৎসুক লোকজন। বিলাপ করতে করতে শামীমা বলেন, ‘বাবাটা সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে ফিরে আসার কথা ছিল। ফিরল এক দিন পর লাশ হয়ে। বুকের ধন ছাড়া আমি এখন কী নিয়ে বাঁচমো।’
জুনায়েদ রহমান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ার কাছে রেকর্ড রানও নিরাপদ নয়!
ওয়ানডে ক্রিকেটে তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কেন তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারই আরেকটি প্রমাণ মিলল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চে। ইংল্যান্ডকে স্রেফ নাকানিচুবানি খাইয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির যাত্রা শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া।
লাহোরে দুই দলই ইতিহাসের পাতায় নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে। ইংল্যান্ড আগে ব্যাটিং করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রান ৩৫১ জমা করে। এই রানও অস্ট্রেলিয়ার কাছে নিরাপদ নয়। পাল্টা জবাব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতেছে ৫ উইকেটে, ১৫ বল হাতে রেখে।
ইংলিশ ওপেনার বেন ডাকেট চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান করেছিলেন প্রথম ইনিংসে। ১৬৫ রানের ইনিংস খেলেন। তার দেড়শ’র জবাব সেঞ্চুরিতে দিয়েছেন জশ ইংলিস। তাতেই অস্ট্রেলিয়ার বিজয়ের রূপকথা লিখা হয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
সাকিবসহ ১০৪ ক্রিকেটারের দলবদল সম্পন্ন, আগামীকাল করবেন তামিম
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের কোনো উত্তাপ টের পাচ্ছে না ভারত!
অজি দলে নিয়মিত একাধিক ক্রিকেটার নেই। কামিন্স, স্টার্ক, মার্শ, হ্যাজেলউড, স্টয়নিসকে ছাড়া অস্ট্রেলিয়া দলটি কেমন হবে তা নিয়ে চিন্তায় ছিল সমর্থকরা। কিন্তু স্কোয়াডের গভীরতা যে এতোটা বেশি তা কেউ ভাবতে পেরেছিল?
তার ওপরে ট্র্যাভিস হেড (৬), অধিনায়ক স্মিথ (৫) ও মার্নাস লাবুসানে (৪৭) ফেরার পর সাড়ে তিনশর বেশি রান তাড়া করা যাবে এমন ভাবনার লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল। কিন্তু পাঁচে নামা জশ ইংলিস সব হিসেব পাল্টে দিলেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন অ্যালেক্স ক্যারি। দুজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ১১৬ বলে ১৪৬ রানের জুটি গড়েন।
ক্যারি ফিফটি ছুঁয়ে ৬৯ রানে ফিরে গেলে ইংলিস তুলে নেন ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরি। তাতে লিখা হয়ে অনবদ্য এক বিজয়ের গল্প। ৮৬ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কায় ইংলিস তার ইনিংসটি সাজান। এছাড়া ম্যাক্সওয়েল ১৫ বলে ৩২ রান করেন ৪ চার ও ২ ছক্কায়।
এর আগে বেন ডাকেটের একক ব্যাটিং প্রদর্শনীতে রানের পাহাড়ে চড়ে ইংল্যান্ড। ওপেনিংয়ে নেমে ৪৮তম ওভার পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন। প্রায় পৌনে চার ঘণ্টার ইনিংসে ১৭ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬৫ রানের ইনিংস খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন জো রুট। ১৫৫ বলে ১৫৮ রান যোগ করেন দুজন। রুট ৭৮ বলে ৬৮ রান করে ফিরে গেলেও ডাকেট তুলে নেন ওয়ানডে ক্রিকেটের তৃতীয় সেঞ্চুরি।
এই দুই ব্যাটসম্যান বাদে বিশের ঘর পেরিয়েছেন কেবল জস বাটলার ও জোফরা আর্চার। বাটলার ২১ বলে ২৩ ও আর্চার ১০ বলে ২১ রান করেন। শেষ দিকে আর্চারের অতি গুরুত্বপূর্ণ রানের সুবাদে ইংল্যান্ডের রান সাড়ে তিনশ পেরিয়ে যায়।
ইনিংসের শুরুতে অ্যালেক্স ক্যারি দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে আলো কেড়ে নেন। বেন ডোয়ার্শুইসের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। সেখানে ক্যারি ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে অসাধারণ দক্ষতায় বল তালুবন্দি করেন।
অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ে তেমন ঝাঁজ ছিল না। ডোয়ার্শুইস ৬৬ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া ২টি করে উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা ও মার্নাস লাবুসানে।
প্রথমে রেকর্ড রান গড়া। সেই রান তাড়া করে জয়। দুই ইনিংসে দুটি অনবদ্য সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে বলা যায় ওয়ানডে ক্রিকেট দারুণ একটি দিন কাটাল। আর ক্রিকেটপ্রেমীরাও সেটা মনভরে উপভোগ করলো।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল