রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে মসজিদে শবে বরাতের নামাজ শেষে মিলাদের মিষ্টি খেয়ে ১৪ জন মুসল্লি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার বহরপুর পশিচমপাড়া জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।

অসুস্থরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন, মাহিম, মুস্তাফিজুর রহমান, মোরসালিন, সোহান, রিমন, শিহাব, আরিফ, মিন্টু, মিনার, মোজাম, সুমন, মাহিন ও সাইফুল ইসলাম সোহান।

মসজিদের সভাপতি মো.

গোলাম মোস্তফা জানান, শবে বরাত উপলক্ষ্যে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন তারা। দোয়া শেষে উপস্থিত মুসল্লিদের তবারকের (খিচুড়ি) প্যাকেট তৈরির কাজ করছিলেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন যুবক। এরমধ্যে মসজিদে মিলাদ দেওয়ার জন্য মসজিদের কমিটির কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক সরদারের কাছে হৃদয় নামের এক যুবক ১০০ টাকা ও এক কেজি চমচম মিষ্টি দিয়ে যান। মিলাদ শেষে সেই মিষ্টি যারা খিচুড়ির প্যাকেট তৈরি কাজে যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সেই মিষ্টি খেয়েই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি সুমন শেখের (৩০) বাবা শফিউদ্দিন শেখ জানান, শবে বরাতের নামাজ পড়তে তার সন্তান মসজিদে যান। নামাজ শেষে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত শেষে উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে তবারক বিতরণ করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। যারা ওই তবারক প্যাকেট করেছিলেন তাদের মিষ্টি খেতে দেওয়া হয়। মিষ্টি খাওয়ার পরই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। পরে চারজনের অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, ওই মিষ্টিতে হয়তো এমন কিছু ছিল যা খাওয়ার পর শরীরে প্রভাব পড়েছে। মূল কারণ জানতে অবশিষ্ট মিষ্টি সংরক্ষণ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। যারা ভর্তি রয়েছেন তারা আপাতত ঝুঁকিমুক্ত। সবার চিকিৎসা চলছে।

বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই এএসপি সার্কেল (পাংশা) দেবব্রত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক সরদার ও মিষ্টি দেওয়া যুবক হৃদয়ের পরিচিত জিল্লুর রহমানকে থানায় নিয়ে আসা হয়। হৃদয়কে পাওয়া গেলেই মূল রহস্য জানা যাবে। ঘটনার পর থেকে হৃদয় পলাতক রয়েছেন। এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেননি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার লোকজন খাজনা ওঠাবে, বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি’

নীল পাঞ্জাবি পরা একজন সবার সামনে। তার পেছনে একদল লোক। তাদের মাথাসহ মুখ লাল গামছায় বাঁধা। কারও হাতে রামদা, কারও হাতে বাঁশের লাঠি। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে পাঞ্জাবি পরা লোকটির নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আতঙ্কে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে সাধারণ মানুষ।

আজ শনিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এমসি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্রের মহড়ায় নেতৃত্বে দেওয়া নীল পাঞ্জাবি পরিহিত লোকটি শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। শুধু মহড়া নয়, প্রকাশ্যে বাজারের দোকানিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা-পয়সা লুট করে তার লোকজন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এভাবে অস্ত্রের মহড়া ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনা জানাজানির পর গতকালই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুরের তেলিহাটী ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে তার নেতৃত্বে অর্ধশত সন্ত্রাসী এমসি বাজারে সশস্ত্র মহড়া দেয়। মাঝে মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শুনতে পাওয়া যায়। তখন আতঙ্কে সাধারণ মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যান। 

১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, মহাসড়কের ওপর চেয়ারে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইক নিয়ে কথা বলছেন জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। তাঁর লোকজনের ‘জাহাঙ্গীর ভাইয়ের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান থামলে তিনি বলেন, ‘প্রিয় দোকানদার ভাইয়েরা, আমি জেল থেকে এসে ঘোষণা দিয়েছিলাম, এমসি বাজারটাকে আমি আমার নিজস্ব লোক ও আপনাদের সহযোগিতার সুন্দরভাবে পরিচালনা করব। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য আমি পারি নাই। আজকে লোকজন নিয়ে এসেছি। আজকের পর থেকে আমি জাহাঙ্গীর যত দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তত দিন পর্যন্ত আমার নিয়ন্ত্রণে চলবে এমসি বাজার এবং আপনাদের দয়া করে বলছি, এখন এই মুহূর্তে আমার লোকজন খাজনা ওঠানো শুরু করবে। কেউ বাধা দেবেন না। বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের এক নেতা জানান, মহড়া দিয়ে পুরো এমসি বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে পিন্টু। অন্তত ১০০ দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের কাছে বিদেশি পিস্তলও ছিল। তবে গুলি ছোড়েনি। 

আব্দুল লতিফ নামে বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, বিকেলে হঠাৎ লোকজন নিয়ে এসে বক্তব্য দেয় পিন্টু। এর কিছুক্ষণ পর রামদার ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসীরা ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রের মহড়া দিল, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখলাম না।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু বলেন, ‘আমি টেহা পয়সা উঠাইনি। এগুলো আমাকে হেয় করার জন্য করা হয়েছে। যারা আমার বাড়ি ভাঙচুর করছিল, অফিস ভাঙচুর করছিল, তাদের খুঁজতে গেছিলাম। না পেয়ে চলে আসছি।’

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লাহ সমকালকে জানান, ঘটনার পরপরই যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, যুবদল নেতার বক্তব্য ও মহড়ার ভিডিও পেয়েছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ