ইউরোপীয় ফুটবল: রাতে রেকর্ড গড়ে সকালে স্কুলে নোনান
Published: 15th, February 2025 GMT
‘আমার মনে হয় এটা বলা নিরাপদ যে, আজ রাতে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে গর্বিত মা।’
কথাটি স্যান্ডি নোনানের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ছেলের ছবিসহ শার্মক রোভার্সের পোস্ট রি-পোস্ট করে কথাটি লিখেছিলেন বৃহস্পতিবার রাতে। তাঁর ছেলে সেদিন রাতে উয়েফা কনফারেন্স লিগ নকআউট রাউন্ড প্লে-অফ প্রথম লেগে দলের হয়ে অভিষেকেই গোল করে ইতিহাসে গড়ে। নরওয়ের ক্লাব মোলদের বিপক্ষে শার্মকের (১-০) জয়ে একমাত্র গোলটি স্যান্ডির ১৬ বছর বয়সী ছেলে মাইকেল নোনানের।
আরও পড়ুনইংল্যান্ডে সব রেকর্ড সিটির—মনে করিয়ে দিলেন গার্দিওলা১ ঘণ্টা আগে১৬ বছর ১৯৭ দিনে করা নোনান সেই গোল দিয়ে কনফারেন্স লিগে এখন সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। উয়েফার অধীনে ইউরোপের সব ক্লাব প্রতিযোগিতা মিলিয়েও দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা নোনান। এমন একটা রাতের পর স্বাভাবিকভাবেই নোনানের পরিবারে গর্বের ঢেউ লাগার কথা। কিন্তু নোনানের শান্তি নেই। নরওয়ে থেকে সেদিন রাতেই তাঁকে বিমান ধরে ফিরতে হয়েছে জন্মভূমি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। কেন? স্কুল কামাই দেওয়া যাবে না। পরদিন সকালেই তো স্কুল!
কাল নোনানের স্কুলে যাওয়ার সেই ছবিও পোস্ট করেছেন স্যান্ডি। কালো জ্যাকেট পরে কাঁধে স্কুলব্যাগ নিয়ে নোনানের হেঁটে যাওয়ার ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে স্যান্ডি লিখেছেন, ‘এখন স্কুলে ফিরে যাচ্ছে সে।’ আয়ারল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলা এই সেন্টার ফরোয়ার্ডকে নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’কে স্যান্ডি বলেছেন, ‘সে স্কুলে ফিরেছে। যেতে চেয়েছিল। ভাই-বোনদের সঙ্গে খুশিমনেই গিয়েছে। আর ক্লাস হয়েছে অর্ধদিবস। দিনটা তাই খারাপ কাটেনি। (দুপুর) একটার দিকেই ছুটি পেয়েছে।’
গোল করে যেহেতু ইতিহাস গড়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে নোনানকে বাকিদের একটু তোয়াজ করার কথা। স্যান্ডি অবশ্য সেসব নিয়ে কিছু না বললেও মজা করতে ছাড়েননি, ‘আমি নিশ্চিত তারা তাকে হোমওয়ার্ক দেয়নি। আশা করি তারা দেবে।’
আরও পড়ুননেইমারের আবার বার্সায় ফেরার গুঞ্জন, সম্ভাবনা কতটা৪ ঘণ্টা আগেআয়ারল্যান্ডের কাউন্টি কিলদেয়ারে নোনানের পরিবারের বসবাস। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে বাসায় ফেরেন নোনান। স্যান্ডি জানিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানাতে প্রতিবেশীরা থালা-বাসন বাজিয়ে অভ্যর্থনা জানান। স্যান্ডির ভাষায়, ‘ঘরে ফিরতে তার রাত দুটো বেজেছে। প্রতিবেশীরা বাসন-কোসনে বাদ্য বাজনা করেছে। ঘরে ফেরার দারুণ অভ্যর্থনা ছিল এটি।’
নোনান বাসায় ফিরে কি করেছেন, সেটাও জানিয়েছেন স্যান্ডি, ‘গোলটি সে দেখতে চেয়েছে। সেটা দেখে নানা বিশ্লেষণ করে তবে ঘুমোতে গিয়েছে। এরপর সকালে স্কুলে। আমাদের খুব ভালো লাগছে। তাকে নিয়ে আমরা খুব গর্বিত ও সুখী।’
নোনানের কোনো ম্যাচ এমনিতে মিস করেন না তাঁর মা স্যান্ডি এবং বাবা অ্যান্ড্রু। কিন্তু কনফারেন্স লিগের ম্যাচে তাঁদের সন্তান আইরিশ ক্লাবটির একাদশে সুযোগ পাবে, সেটা তাঁরা ভাবতে পারেননি। এ কারণে ম্যাচটি দেখতে আর নরওয়েতে যাওয়া হয়নি স্যান্ডি ও অ্যান্ড্রুর। স্যান্ডির ভাষায়, ‘গত ডিসেম্বরেই সে রোভার্সে সই করেছে। এত দ্রুত একাদশে সুযোগ পেয়ে যাবে ভাবিনি.
শার্মকের একাদশে নোনান জায়গা পাওয়ার পর স্থানীয় এক পানশালায় ‘ওয়াচ পার্টি’র আয়োজন করা হয় তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের জন্য। দুটি টিভি ছিল খেলা দেখার জন্য। একটিতে ২০ সেকেন্ড আগে খেলা দেখানো হচ্ছিল, সেই টিভির সামনে বসেছিল নোনানের বন্ধুরা। অন্য টিভির সামনে বসেছিলেন নোনানের মা-বাবা। স্যান্ডির ভাষায়, ‘উদ্যাপনটা দুবার হয়েছে। সবাই কাঁদছিল এবং একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছে। আনন্দে কেউই চোখে জল আটকে রাখতে পারেনি।’
আয়ারল্যান্ডের প্রথম দল হিসেবে এবারই প্রথম কোনো ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার নকআউট পর্বে খেলছে শার্মক। ফিরতি লেগ আগামী বৃহস্পতিবার।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা তরুণদের হাতে বাংলাদেশ তুলে দিতে চাই: জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা তোমার কোরআনের ভিত্তিতে একটা ইনসাফের মানবিক বাংলাদেশ চাই। যেখানে সবাই সবাইকে সম্মান করবে, ভালোবাসবে। তুমি আমাদের সেই বাংলাদেশ দান করো।’’
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘হে তরুণেরা তোমরা জেগে ওঠো। যে সমাজে তরুণরা জেগে ওঠে, সেই সমাজ আল্লাহ বদলায়ে দেন।’’
২৪ এর আন্দোলনকারীদের ‘স্যালুট’ জানিয় জামায়াতের আমির বলেন, ‘‘তোমরা জীবন বাজি রেখে লড়াইয়ের কারণে আল্লাহ আমাদের আপাতত মুক্ত করেছেন। এবার চিরমুক্তির জন্য জেগে ওঠো। শপথ নাও, বাংলাদেশকে কোরআনের আলোকে গড়বই ইনশাআল্লাহ। চুল পাকা, দাঁড়ি পাকা আমিও তোমাদের সঙ্গে সামনের কাতারে থাকব।’’
তিনি বলেন, ‘‘তরুণেরা আমাদের স্বপ্ন। আমরা আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতে তুলে দিতে চাই।’’
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, ‘‘অতীতে সোনার বাংলা কায়েম করতে গিয়ে শ্মশান বাংলা কায়েম করা হয়েছে। কোরআনই একমাত্র সোনার বাংলার গ্যারান্টি দিতে পারে, আর কিছু দিতে পারবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘যারা কোরআন সহ্য করতে পারেন না, তাদের বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই। এই দেশের আপামর জনতা বাঁচতে চায় কোরআন বুকে নিয়ে, মরতে চায় কোরান বুকে নিয়ে; আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে চায় কোরআন বুকে নিয়ে। আমাদের কোরআন থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘দেশে যতগুলো ইসলামী দল আছে, তাকিয়ে দেখুন- ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো নেতাকর্মী কারো ওপর জুলুম, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করেছে? উত্তরা না। এর কারণ তারা কোরআনকে সম্মান করে এবং বুকে ধারণ করে। তারা আল্লাহকে ভয় করেন। যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে, তারা জুলুম করতে পারে না। তারা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দেখে।’’
জেলা জামায়াতের আমির মাস্টার রুহুল আমিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও মো. ফারুক হোসাইন নুর নবীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, শাহজাহান চৌধুরী, ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান প্রমুখ।
দীর্ঘ ২৮ বছর পরে লক্ষ্মীপুরে খোলা ময়দানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে, ১৯৯৬ সালে লক্ষ্মীপুরে খোলা ময়দানে জামায়াতের সমাবেশ হয়।
ঢাকা/লিটন/রাজীব