পুচকে ব্রাইটনের বিপক্ষে উড়ে গেল বিলিয়ন ডলারের চেলসি
Published: 15th, February 2025 GMT
টড বয়েলি ইংলিশ ক্লাব চেলসির মালিকানা কেনার জন্য খরচ করেছিলেন ‘সোয়া ৩ বিলিয়ন’ মার্কিন ডলার। এরপর ফুটবলার কেনা-বেচা এবং কোচ নিয়গে খরচ করেছেন আরও ১.৩২ বিলিয়ন ডলার। এত কিছুর পরও চেলসি যেন হারিয়ে খুঁজছে নিজেদের।
গেল ৮ ফেব্রুয়ারি ইংলিশ এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডে ব্রাইটনের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছিল চেলসি। এরপর শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) রাতে সেই ব্রাইটনের বিপক্ষেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে এবার ৩-০ ব্যবধানে উড়ে গেল চেলসি। ম্যাচ হারের পর দলটির ইতালিয়ান কোচ এনজো মারেসকা জানান তার অধীনে এই এটিই চেলসির সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স।
ঘরের মাঠ আমেরিকান এক্সপ্রেস স্টেডিয়ামে ম্যাচের ২৭ মিনিটে কাওরু মিতোমার চমকপ্রদ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাইটন। ঠিক তার ১১ মিনিট পর ইয়ানকুবা মিন্তেহ গোল করলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা। এই গাম্বিয়ান রাইট মিডফিল্ডার ম্যাচের ৬৩ মিনিটে পুনরায় গোল করে চেলসির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন।
সপ্তাহ ঘুরার আগেই ব্রাইটনের বিপক্ষে দুইবার হারল হেভিওয়েট চেলসি। ম্যাচে ৭১৭ পাস খেলেও প্রতিপক্ষের গোলবারে একটি শটও নিতে পারেনি ব্লুজরা। চটের কারণে নিকোলাস জ্যাকসন এবং মার্ক গুইউ মাঠে না থাকলেও চেলসি পেয়েছিল স্কোয়াডের বাকি বড় নামদের।
ফ্যাবিয়ান হুজেলারের ব্রাইটনের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ হেরে মারেসকা বলেন, “আমি সবকিছু নিয়েই হতাশ। যারা কষ্ট করে সমর্থন দিতে এসেছিলেন তাদের জন্য দুঃখিত। আমাদের হাতে এখনও ১৪টি ম্যাচ বাকি (ইপিএলে)। আমাদের দারুণ কিছু করতে হবে। আমরা এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে সহজেই গোল হজম করছি এবং গোল শোধ করতে সংগ্রাম করছি।”
মারেসকা এরপর হতাসধার সুরে বলেন, “এখন আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে। আমি সব সময় চাপ অনুভব করি, কিন্তু আমি যোগদান (চেলসিতে) করার পর সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স ছিল এটি। আমরা এখনও ইপিএলে চতুর্থ অবস্থানে আছি, চ্যাম্পিয়ন লিগের দৌড়ে (পরবর্তী মৌসুমের) এখনও টিকে আছি।”
চেলসি শেষ ৯টি ইপিএল ম্যাচে মাত্র দুটি জিতেছে। ২৫ ম্যাচ শেষে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে রয়েছে চেলসি। তবে ম্যানচেস্টার সিটি বা নিউক্যাসল ইউনাইটেড তাদের শনিবারের (১৫ ফেব্রিয়ারি, ২০২৫) ম্যাচে জিতলে মারেসকার দলের উপরে চলে যেতে পারে। অন্যদিকে ব্রাইটন ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের হাতিয়ার মিলতে পারে বাংলাদেশেও
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। ঠিক এক বছরের মাথায় চীনের প্রেসিডেন্ট তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত খেল দেখিয়েছিলেন। তিনি চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শিল্পনগরী গানঝোতে এক উচ্চ পর্যায়ের সফর করেন। সেখানকার কারখানায় তৈরি হওয়া ধাতব পাত হাতে নিয়ে বলে ওঠেন, ‘এটাই এখনকার পৃথিবীর কৌশলগত সম্পদ।’ আর এই পাত ‘রেয়ার আর্থ’ বা বিরল খনিজ (মৃত্তিকা ধাতু) দিয়ে তৈরি, যার উৎপাদন চীনেই সর্বোচ্চ।
শি যখন এই চ্যালেঞ্জের কথা ঘোষণা করছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বাঘা বাঘা নেতা। এখন নতুন করে ট্রাম্প যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, সেই লড়াইয়ে বিরল খনিজের তৈরি ধাতবই আসল হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
এদিকে বাংলাদেশেও এই বিরল খনিজের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনও এসব নিয়ে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। যাচাই করা হয়নি বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা।
বিরল ওই মাটি দিয়ে যেমন তেমন জিনিস তৈরি হয় না। এই মাটি দিয়ে এমন সব যন্ত্রাংশ তৈরি করা যায়, যেগুলো উন্নত প্রযুক্তিগত পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেগুলো আইফোন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক সব যানবাহনেও ব্যবহার করা সম্ভব। যা ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে বদলে দিতে সক্ষম।
শুল্কের বিপরীতে এটি এমন একটি খাত, যেখানে ট্রাম্প প্রতিশোধমূলক কোনো কৌশলই কাজে লাগাতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই মৌলটি পাওয়া গেলেও পরিমাণে চীনের তুলনায় খুবই কম। তাছাড়া এগুলো উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কঠিন ও ব্যয়বহুল। এমনকি পরিবেশগত দূষণের ঝুঁকি রয়েছে।
কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ চীনের এই প্রক্রিয়াজাত ধাতব পদার্থের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) মতে, বিশ্বব্যাপী খনি থেকে উৎপাদিত এই বিরল মাটির ৬১ শতাংশই চীনে পাওয়া যায়। তবে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে এই খাতে চীনের নিয়ন্ত্রণ উৎপাদনের ৯২ শতাংশ।
এই বিরল খনিজ থেকে উৎপাদন হয় এক প্রকার চুম্বক, যা স্মার্টফোন, গাড়ি ও জেট ইঞ্জিন এবং এমআরআই মেশিনে ব্যবহৃত হয়। এমনকি এই চুম্বক যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে পারমাণবিক সাবমেরিন এবং অন্যান্য বড় অস্ত্র তৈরির অপরিহার্য উপাদান।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও জননীতির অধ্যাপক জাস্টিন ওলফার্স বলছেন, এভাবেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কৌশলগত অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে। ঠিক যেখানে আঘাত করলে আমেরিকান শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে, ঠিক সেখানেই আঘাত করতে সক্ষম চীন।
বেইজিং আপাতত বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রেয়ার আর্থের সিইও জোশুয়া ব্যালর্ড বলেন, বিশ্বব্যাপী বিরল মাটি রপ্তানির ৯৮ শতাংশ চীন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। চীন এখন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমেরিকান কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়েছে।
চীন এই বিরল খনিজ প্রক্রিয়াজাত প্রযুক্তিতে উন্নতি ঘটিয়েছে। প্রাথমিক প্রযুক্তিগত সহায়তা তারা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান বা ইউরোপ থেকেই পেয়েছে। এখন সেই প্রযুক্তিও তারা নিজেরা রপ্ত করে নিয়েছে।
চলতি বছর মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপে দেখা যায়, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরল খনিজ আমদানির ৭০ শতাংশই চীন থেকে করা হয়েছে।
বাংলাদেশে বিরল খনিজের সম্ভাবনা
বাংলাদেশেও এই মূল্যবান বিরল খনিজ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা চরে, বঙ্গোপসাগরে সৈকতের বালুতে এবং উত্তরবঙ্গের কয়লা খনিতে বিভিন্ন বিরল খনিজের সন্ধান মিলেছে। তবে এখনও এসব খনিজ নিয়ে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। যাচাই করা হয়নি বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা। তবে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বিজ্ঞান, শিল্প গবেষণা পরিষদসহ (বিসিএসআইআর) বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ে কাজ করছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের বালুতে ৩ থেকে ৫ শতাংশ মূল্যবান খনিজ পদার্থ আছে বলে নিশ্চিত করছেন গবেষকরা। আইএমএমএমের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, ব্রহ্মপুত্র থেকেই বছরে ২৫ কোটি টন খনিজসমৃদ্ধ বালু সংগ্রহ করা সম্ভব। কিছু নমুনায় মূল্যবান প্লাটিনাম, প্যালেডিয়াম, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের অস্তিত্ব মিলেছে। জয়পুরহাটের আইএমএমএমের গবেষণাগারে ইলমিনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গার্নেট ও কোয়ার্টজ পাওয়া গেছে।