যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের এরি কাউন্টিতে এক দিন সকালে নাশতার টেবিল ঘিরে বসে ছিলেন চার বন্ধু—জন, জ্যাক, বব ও ডন। সবার বয়স ৮০–এর কোটায়। নিজেদের ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচারণা করছিলেন তাঁরা।

চার বন্ধুর মধ্যে শুধু বব গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এ সপ্তাহে ওভাল অফিসে ট্রাম্পের পাশে ধনকুবের ইলন মাস্ককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তিনি। তাঁর বারবার মনে হচ্ছে, নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে তিনি ভুল করে ফেলেননি তো।

মাস্ককে নিয়ে বব বলেন, ‘তাঁকে নিয়ে আমার ভয় হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, তিনি (মাস্ক) প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করছেন।’

গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ভোটযুদ্ধক্ষেত্রগুলো ট্রাম্পের জয়ে সহায়তা করেছে, তার একটি এরি কাউন্টি। এখানে সর্বশেষ নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আগের নির্বাচনে এরি কাউন্টিতে জো বাইডেন জিতেছিলেন।

ট্রাম্প যেসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেসবের অন্যতম, তিনি ফেডারেল সরকারকে সংস্কার ও পুনর্গঠন করবেন এবং সরকারি ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস করবেন।

জরিপ বলছে, ট্রাম্পের এ প্রতিশ্রুতি রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিল এবং বিষয়টি এখনো গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তাঁর প্রশাসনে মাস্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী হতে উঠতে চলেছেন, সে বিষয়ে তখন তেমন কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।

টেসলা, স্পেসএক্স ও এক্সের মালিক মাস্ক এখন ট্রাম্পের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সির (ডিওজিই) দুই প্রধানের একজন। কোন খাতে কীভাবে ফেডারেল সরকারের ব্যয় হ্রাস করা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখন মাস্কই নেবেন এবং ৫৩ বছর বয়সী এই ধনকুবেরকে নিয়মিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে দেখা যাবে।

মাস্কের দলের সদস্যরা এরই মধ্যে মার্কিন সরকারের নানা অধিদপ্তরের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তাঁরা ব্যয়ের ওপর নজরদারি করছেন এবং লাখ লাখ ফেডারেল কর্মীকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁরা ফেডারেল সরকার থেকে তহবিল প্রদান স্থগিত করেছেন এবং ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) মতো আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার কার্যক্রমও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন।

তবে ডেমোক্র্যাটরা শুধু ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে মাস্কের প্রভাবের মাত্রা নিয়েই উদ্বিগ্ন নন, বরং সম্ভাব্য সরকারি নানা সিদ্ধান্তে তিনি (মাস্ক) নিজে কতটা লাভবান হবেন, তা নিয়েও চিন্তিত। ফেডারেল সরকারের নানা চুক্তির মাধ্যমে মাস্কের কোম্পানিগুলো কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করছে।

এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ ডেমোক্র্যাট নেতা চাখ শুমাখার বলেছেন, ‘এটা বিপজ্জনক। এটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী। আরও বেশি ক্ষতি হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ডিওজিইর ওপর নিজ নেতৃত্ব ও প্রভাব দেখানো প্রয়োজন।’

একই ধরনের উদ্বেগে রয়েছেন জন পেলিনস্কি। তিনি জীবনভর ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু গত নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেন। কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল, ডেমোক্র্যাটরা বামপন্থীদের দিকে অনেক বেশি ঝুঁকে পড়েছে। তাই তিনি চেয়েছিলেন চার বছরের জন্য ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে দেশকে মধ্যমপন্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করুক।

ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে ভুল করেছেন, এমনটা পেলিনস্কির এখনো মনে হয় না। তবে তিনি বলেছেন, মাস্কের কারণে তাঁর অস্বস্তি হয়।

পেলিনস্কি বলেন, ‘(এ সপ্তাহে) ওভাল অফিসে তাঁর (মাস্ক) সঙ্গে তাঁর ছোট বাচ্চাটাও উপস্থিতি ছিল। আমার এটা খুব একটা ভালো লাগছে না। আমার মনে হয়, প্রেসিডেন্টের ওপর মাস্কের প্রভাব হয়তো একটু বেশিই। আমি তার অনেকটাই দেখছি। তাঁর উচিত স্পেসএক্স ও বৈদ্যুতিক গাড়ির (টেসলা প্রতিষ্ঠান) সঙ্গেই জুড়ে থাকা।’

এদিকে ওভাল অফিসে সেদিন মাস্ক পরিষ্কার করেই বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস, তিনি ট্রাম্পের ভোটারদের ইচ্ছা পূরণের জন্যই কাজ করছেন।

এ সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে মাস্কের উপস্থিত খানিকটা হঠাৎই ছিল। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সরকারে বড় ধরনের সংস্কার দেখতে লোকজন ভোট দিয়েছেন এবং তাঁরা সেটাই পেতে যাচ্ছেন। এটা গণতন্ত্র।’‍

সম্প্রতি সিবিএস নিউজের এক জরিপে দেখে গেছে, বেশির ভাগ মার্কিন মাস্কের কাজ পছন্দ করেন। তবে মাস্কের কতটা প্রভাব থাকা উচিত, তা নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।

এরি কাউন্টিতে অনেকে অবশ্য এটা ভেবে দারুণ খুশি, ওয়াশিংটনে এখন একজন ধনকুবের নয়, বরং দুজন ধনকুবের সরকার পরিচালনা করছেন।

ট্রাম্পের ভোটার ক্রিস্টিন বারবার। তিনি সব উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ দেশ পরিচালনার জন্য ট্রাম্পকে নির্বাচিত করেছেন এবং ট্রাম্প তাঁকে সাহায্য করার জন্য মাস্ককে নিয়োগ দিয়েছেন।’

আরও পড়ুনইলন মাস্ক যেভাবে বিশ্বের ১ নম্বর সমস্যা হয়ে উঠলেন০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ব্যক্তিগতভাবে মাস্ককে খুবই পছন্দ করেন জানিয়ে এই নারী আরও বলেন, ‘আর্থিক ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের এমন একজন প্রয়োজন, যিনি জানেন, তাঁরা আসলে কী করছেন। কেউ যদি এটা করতে পারেন, তাঁরা হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক।’

আরও অনেকেই ক্রিস্টিনার মতো করে তাঁদের মত প্রকাশ করেছেন, যেমন একটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক ইভান লাগাসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হোয়াইট হাউসে মাস্কের প্রভাব অনেক বেড়ে যাচ্ছে বলে তাঁর মনে হয় কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার এতে কিছু যায়–আসে না। তিনি (মাস্ক) এখনই অনেক বেশি ক্ষমতাধর। তাই এটা তেমন কোনো পার্থক্য গড়ে দেবে না।’

আরও পড়ুনট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর রকেটগতিতে বাড়ছে মাস্কের সম্পদ২৩ নভেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ড র ল সরক র ধনক ব র কর ছ ন র জন য র ওপর করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সামান্য বৃষ্টিতে নোয়াখালী কলেজে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তি চরমে

সামান্য বৃষ্টিতেই নোয়াখালী সরকারি কলেজ চত্বরে সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। এতে শিক্ষার্থীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সম্প্রতি হওয়া বৃষ্টিতে কলেজের মূল ফটক থেকে শুরু করে একাডেমিক ভবনের সামনের পথগুলো হাঁটু সমান পানিতে ডুবে আছে।

বিশেষ করে সকালে ক্লাসে প্রবেশ ও বিকেলে বের হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবার বৃষ্টি হলেই একই অবস্থা হয়। অনেক সময় ক্লাসে উপস্থিত হতে দেরি হয়। এমনকি কেউ কেউ বিড়ম্বনা এড়াতে বাড়িতেই থেকে যান।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার বলেন, “বৃষ্টি হলেই কলেজের সামনে এবং কলেজের ভিতরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অতিবৃষ্টির প্রয়োজন হয় না।”

তিনি আরো বলেন, “একটা কলেজ প্রতিবার বৃষ্টির সময়ে দীর্ঘদিন যাবৎ জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছে। অথচ প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নোয়াখালীর সুনামধন্য কলেজের এমন বেহাল দশা মেনে নেওয়া কষ্টের। আমরা কলেজ প্রশাসনকে অনুরোধ করছি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় এই সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবেই প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে একই চিত্র দেখা যায়।

এ বিষয়ে নোয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা খুব শীঘ্রই কার্যকরী ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করব। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতেই আমাদের এ উদ্যোগ।”

তিনি বলেন, “কলেজ প্রশাসন এ সমস্যা সমাধানে আন্তরিক। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এ কার্যক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হবে।”

ঢাকা/সুমাইয়া/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ