শিবচরে মেজর পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩
Published: 15th, February 2025 GMT
মাদারীপুরের শিবচরে মেজর পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। চক্রটি স্থানীয় বাসিন্দাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে—এমন অভিযোগে হোতাসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) আজমীর হোসেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চক্রটির হোতা ও শিবচর পৌরসভার ডিসি রোড এলাকার জাহাঙ্গীর শেখ (৩৫), একই এলাকার সীমান্ত মালো (২০) এবং পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাওছার শিকদার (২১)। গতকাল বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তাঁরা। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কয়েক মাস ধরে প্রতারক চক্রটি উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বাসিন্দাদের মুঠোফোনে কল দিয়ে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। একপর্যায়ে তারা বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়। ১০ ফেব্রুয়ারি শিবচর পৌরসভার হাতির বাগান মাঠ এলাকার নাসরিন আক্তার নামের এক নারীর মুঠোফোন নম্বরে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কল করেন। ওই নারীকে তিনি সেনাবাহিনীর মেজর মাসুদ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘হাতির বাগান মাঠের মোড়ে আপনাদের যে দোকান আছে, সেটি সরকারি জায়গার ওপর পড়েছে। সেই দোকানের টিনের সঙ্গে লেগে সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত একটি গাড়ির গ্লাস ভেঙে গেছে। তাই গ্লাস মেরামতের জন্য ৩ হাজার ৫০০ টাকা এখনই পাঠাতে হবে। নইলে আপনার সমস্যা হবে।’ ভয়ে ওই নারী দাবিকৃত টাকা ‘নগদে’ পাঠিয়ে দেন। এরপর চক্রটি ওই নারীকে একাধিকবার কল করে তিন দফায় মোট ৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় ভুক্তভোগী ওই নারী শিবচর সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে জানান। সেনাবাহিনীর পরামর্শে ওই নারীর ছেলে শিবচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও শিবচর থানার পুলিশ চক্রটি ধরতে অভিযান শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চক্রের হোতা জাহাঙ্গীর শেখসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, চক্রটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন সড়কের পাশের বাড়ি, দোকানসহ অন্য স্থাপনা দেখত। পরে মালিককে মেজর পরিচয়ে ফোন করে ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করত।
পুলিশ কর্মকর্তা আজমীর হোসেন বলেন, ‘যৌথ বাহিনীর সহায়তায় ও তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা অবশেষে চক্রের হোতাসহ তিনজনকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। এই চক্রের অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। চক্রের হোতা আমাদের কাছে ও আদালতে অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ বচর
এছাড়াও পড়ুন:
ফেসবুকের বন্ধুতালিকা ‘রিসেট’ করার ভাবনা ছিল জাকারবার্গের
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিযোগিতা নস্যাৎ করে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে মেটার বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত মামলার বিচার। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ সোমবার এই মামলায় সাক্ষ্য দেন। শুনানিতে আদালতে উপস্থাপন করা হয় মেটার অভ্যন্তরীণ কিছু ই–মেইল, যেখানে উঠে আসে এক সময় সবাইকে ফেসবুকে বন্ধু তালিকা ‘শূন্য’ থেকে শুরু করতে বাধ্য করার এক অভিনব প্রস্তাব।
২০২২ সালে পাঠানো একটি ই–মেইলে জাকারবার্গ লেখেন, বন্ধু তৈরিতে দ্বিগুণ জোর। সবাইকে তাঁদের বন্ধুতালিকা (গ্রাফ) মুছে দিয়ে নতুন করে শুরু করতে দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, কিশোর-তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ইনস্টাগ্রামের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ায় ফেসবুকের ব্যবহার কমছিল। এই প্রেক্ষাপটে ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের সক্রিয়তা বাড়াতে নতুন কিছু ভাবনার অংশ হিসেবেই জাকারবার্গ ওই প্রস্তাব দেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে মেটার অভ্যন্তরেই প্রস্তাবটি নিয়ে আপত্তি ওঠে। ফেসবুক বিভাগের প্রধান টম অ্যালিসন ই–মেইলের জবাবে লেখেন, আপনার প্রস্তাবিত প্রথম বিকল্পটি (বন্ধু সংযোগে জোর) আমার কাছে বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না। ইনস্টাগ্রামে বন্ধু সুবিধাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটি অকার্যকর হলে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
জাকারবার্গ আরও একটি বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেন। ফেসবুককে বন্ধুভিত্তিক মাধ্যমের বদলে অনুসরণভিত্তিক (ফলোয়ার) মাধ্যমে রূপান্তর করার চিন্তা ছিল তাঁর। যদিও এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি, তবে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে উঠে আসা এসব ভাবনা থেকে প্রযুক্তি মাধ্যমটি ভবিষ্যতে কোন পথে হাঁটতে চায়, তার একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়।
মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) ২০২০ সালে মেটার বিরুদ্ধে এই প্রতিযোগিতা-বিরোধী মামলা করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রতিযোগীদের ঠেকিয়ে দিয়েছে। এফটিসির ভাষ্য, সম্ভাবনাময় প্রতিযোগীরা যখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, তখন মেটা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার বদলে কিনে নিয়ে সেই ‘হুমকি’ দূর করেছে। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি উদ্ভাবনশীল মাধ্যমগুলোকে হুমকিস্বরূপ মনে করে অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতাবিরোধী একক আধিপত্য গড়ে তুলেছে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস