মাদারীপুরের শিবচরে মেজর পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। চক্রটি স্থানীয় বাসিন্দাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে—এমন অভিযোগে হোতাসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) আজমীর হোসেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চক্রটির হোতা ও শিবচর পৌরসভার ডিসি রোড এলাকার জাহাঙ্গীর শেখ (৩৫), একই এলাকার সীমান্ত মালো (২০) এবং পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাওছার শিকদার (২১)। গতকাল বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তাঁরা। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কয়েক মাস ধরে প্রতারক চক্রটি উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বাসিন্দাদের মুঠোফোনে কল দিয়ে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। একপর্যায়ে তারা বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়। ১০ ফেব্রুয়ারি শিবচর পৌরসভার হাতির বাগান মাঠ এলাকার নাসরিন আক্তার নামের এক নারীর মুঠোফোন নম্বরে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কল করেন। ওই নারীকে তিনি সেনাবাহিনীর মেজর মাসুদ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘হাতির বাগান মাঠের মোড়ে আপনাদের যে দোকান আছে, সেটি সরকারি জায়গার ওপর পড়েছে। সেই দোকানের টিনের সঙ্গে লেগে সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত একটি গাড়ির গ্লাস ভেঙে গেছে। তাই গ্লাস মেরামতের জন্য ৩ হাজার ৫০০ টাকা এখনই পাঠাতে হবে। নইলে আপনার সমস্যা হবে।’ ভয়ে ওই নারী দাবিকৃত টাকা ‘নগদে’ পাঠিয়ে দেন। এরপর চক্রটি ওই নারীকে একাধিকবার কল করে তিন দফায় মোট ৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় ভুক্তভোগী ওই নারী শিবচর সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে জানান। সেনাবাহিনীর পরামর্শে ওই নারীর ছেলে শিবচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও শিবচর থানার পুলিশ চক্রটি ধরতে অভিযান শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চক্রের হোতা জাহাঙ্গীর শেখসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, চক্রটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন সড়কের পাশের বাড়ি, দোকানসহ অন্য স্থাপনা দেখত। পরে মালিককে মেজর পরিচয়ে ফোন করে ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করত।

পুলিশ কর্মকর্তা আজমীর হোসেন বলেন, ‘যৌথ বাহিনীর সহায়তায় ও তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা অবশেষে চক্রের হোতাসহ তিনজনকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। এই চক্রের অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। চক্রের হোতা আমাদের কাছে ও আদালতে অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ বচর

এছাড়াও পড়ুন:

কাঁদতে কাঁদতে গাজার বাসিন্দা বললেন, ‘আমরা তো সব হারিয়েছি, ঈদটা কষ্টের’

ফিলিস্তিনের গাজায় রোববার পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় বিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে এ দিন ছিল না উৎসবের আমেজ। ঈদের দিনও সেখানে নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। মুসলিমদের কাছে খুশির এ দিনটিতেও গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনি।

দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে চলা হামলায় গাজায় আর কোনো মসজিদ অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। রোববার তাই উপত্যকাটির বাসিন্দাদের ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মসজিদের বাইরে। আগের দিনে গাজার যেসব শিশু নতুন পোশাক পরে আনন্দ করত, তারা এখন ক্ষুধায়-আতঙ্কে কাতর। ঈদ উপলক্ষে নেই তেমন রান্নার আয়োজন।

ইসরায়েলের হামলা শুরুর আগে গাজার ফিলিস্তিনিরা ঈদের সকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উদ্‌যাপন করতেন। তবে এখনকার চিত্র ভিন্ন। বহু গাজাবাসী তাঁদের পরিবারের সদস্যকে হারিয়েছেন। রোববার অনেককে দেখা যায় প্রিয়জনের কবরের পাশে। অনেকে হাজির হন হাসপাতালের মর্গে—শেষবারের মতো কাছের মানুষের মরদেহটি দেখতে।

ইসরায়েলের হামলায় গাজার বাসিন্দা আদেল আল-শায়ের তাঁর পরিবারের ২০ সদস্যকে হারিয়েছেন। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় ঈদের নামাজ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘এই ঈদটা কষ্টের। আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলোকে হারিয়েছি। আমাদের সন্তান, আমাদের জীবন, আমাদের ভবিষ্যৎ—সবকিছু... আমরা তো সব হারিয়েছি।’

ঈদের দিন স্বজনের কবরের পাশে গাজা নগরীর এক নারী

সম্পর্কিত নিবন্ধ