কুমিল্লার দেবীদ্বারে ক্রিকেট খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি চলছিল। এমন সময় এক পক্ষ ঢুকে পড়ে পাশের মসজিদে, অপর পক্ষ সেখানে গিয়েও হামলা চালায়। এ সময় মসজিদে নামাজরত মুসল্লিরাও হামলার শিকার হন। মসজিদের জানালা ও দরজার গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার পবিত্র শবে বরাতের ইবাদতের সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে দেবীদ্বার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ফতেহাবাদ দক্ষিণপাড়া বায়তুল আকসা জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো.

ইব্রাহীম, ফতেহাবাদ গ্রামের ইসমাইল হোসেন, কামরুল ও কাওসার। তাঁদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ইব্রাহীমকে রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় এক মাস আগে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে পাশের নয়াকান্দি গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে ফতেহাবাদ দক্ষিণপাড়া গ্রামের ছেলেদের মারামারি হয়। ওই ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেলে নয়াকান্দি গ্রামের একজনকে মারধর করে ফতেহাবাদ গ্রামের ছেলেরা। রাত ৮টার দিকে নয়াকান্দি গ্রামের ছেলেরা ফতেহাবাদ গ্রামের কামরুলকে রাস্তায় একা পেয়ে মারধর করে। এতে দুই গ্রামের তরুণেরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।

এ সময় কামরুলের সঙ্গে থাকা তরুণেরা দৌড়ে মসজিদে আশ্রয় নিলে নয়াকান্দি গ্রামের তরুণেরা সেখানে গিয়েও হামলা চালায়। এ সময় দুই গ্রামের তরুণদের মধ্যে মারামারি চলাকালে নামাজরত মুসল্লিদেরও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে মসজিদে ভাঙচুর চালায় তারা। মুসল্লিরা তাদের বাধা দিলে তারা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনকে মারধর করে। একপর্যায়ে মসজিদের ইমাম মাইক দিয়ে ঘোষণা দেন মসজিদে ডাকাত পড়েছে। পরে তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ১০টার দিকে দেবীদ্বার থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল আউয়াল বলেন, ১০ থেকে ১২ জন যুবক মসজিদে ঢুকে এলোপাতাড়ি দরজা, জানালা ও গ্লাস ভাঙচুর করে। তাদের প্রত্যেকের হাতে রড, হকিস্টিক ও পাইপ ছিল।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহত কামরুলের চাচাতো ভাই শাফাতুল ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘আমরা মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য আসছিলাম। নয়াকান্দি গ্রামের ছেলেরা আমাদের পথে আটক করে মারধর করে। আমরা ভয়ে দৌড়ে এসে মসজিদে ঢুকি। তারা আমাদের খুঁজতে এসে মসজিদ ভাঙচুর করে, মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়।’

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা মসজিদে নামাজ পড়ছিলাম। হঠাৎ দেখি একদল ছেলে মসজিদের বাইরে চারদিকে গ্লাস, দরজা-জানালা ভাঙচুর করছে। এদের কয়েকজন মসজিদের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। পরে শুনেছি ক্রিকেট খেলা নিয়ে আগের মারামারিকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

এ প্রসঙ্গে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামছুদ্দিন ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, মারামারি হয়েছে দুই গ্রামের তরুণদের মধ্যে। এক পক্ষ মসজিদে চলে গেলে অপর পক্ষ সেখানে গিয়ে তাদের মারধরের চেষ্টা করে। তখন জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে। মূলত ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র কর কম ট র স নয় ক ন দ মসজ দ র

এছাড়াও পড়ুন:

তরুণের কাছে পুলিশ-সেনাবাহিনী পরিচয়ে চাঁদা দাবি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ গ্রেপ্তার ৫

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় মাদকসহ এক তরুণকে আটকে রেখে পুলিশ-সেনাবাহিনী পরিচয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার বাটইয়া ও নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন (২৫), একই ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর মো. মনিরুল ইসলাম (২১), একই ইউনিয়নের মো. পারভেজ হোসেন (৩০), নরোত্তমপুর ইউনিয়নের অহিদুল ইসলাম (২৪) ও মো. ইউনুস হোসেন ওরফে রাজু (২২)।

পুলিশ জানায়, আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আসামিদের নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে অভিযুক্তদের জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

কবিরহাট থানা ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীনন্দী গ্রামের সফি উল্যাহর ছেলে মো. তাফসীরুল ইসলাম ওরফে রাফসানকে (১৯) মাদকদ্রব্যসহ আটক করেন ছাত্র প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুনসহ স্থানীয় একদল যুবক। তাঁরা তাফসীরুলকে পুলিশে না দিয়ে বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত আটকে রাখেন। এই সময়ে মামুন ও তাঁর সহযোগীরা তাফসীরুলের বাবা সিএনজি অটোরিকশাচালক সফি উল্যাহর কাছে ডিবি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাঁর ছেলেকে মারধরের হুমকি দেন।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা তাঁকে দাবি করা টাকা বাটইয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণারটেক মসজিদের সামনে রাখার জন্য বলেন। তখন তিনি (বাদী) তাঁর অসহায়ত্বের কথা জানান। একপর্যায়ে তিনি ৭০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে জানান। তখন তাঁরা ওই টাকা স্থানীয় ফরায়েজী বাজারের উত্তর মাথায় স্কুলের পশ্চিম পাশে রাখার জন্য বলেন। পরে তিনি ওই স্থানে টাকা রেখেছেন বলে তাঁদের জানান। অভিযুক্তরা তখন তাঁকে বলেন, ‘তোমার সঙ্গে প্রশাসনের লোক আছে।’ এরপর তাঁর ছেলেকে ডিবি পুলিশকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।

বাদী উল্লেখ করেন, এতে তাঁর সন্দেহ হয়। পরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল করেন। একই সঙ্গে তিনি সেনাবাহিনী ও পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ ও সেনাবাহিনী মুঠোফোনের কল রেকর্ড শুনে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে। পরে থানায় জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা মো. সফি উল্যাহ (৬০) বাদী হয়ে কবিরহাট থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় আরও তিন-চারজনকে।

কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মাদকসহ এক তরুণকে আটক করেন আবদুল্লাহ আল মামুনসহ কয়েক যুবক। তাঁরা তাঁকে পুলিশে সোপর্দ না করে উল্টো পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই তরুণকে আটকে রেখে মারধর করেন। পরে তরুণের বাবার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। একই সঙ্গে মাদকসহ আটক তরুণের বিরুদ্ধেও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালীর আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তরুণের কাছে পুলিশ-সেনাবাহিনী পরিচয়ে চাঁদা দাবি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ গ্রেপ্তার ৫