কুমিল্লায় ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারি, মসজিদ কমিটির সম্পাদকসহ ৪ মুসল্লি আহত
Published: 15th, February 2025 GMT
কুমিল্লার দেবীদ্বারে ক্রিকেট খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি চলছিল। এমন সময় এক পক্ষ ঢুকে পড়ে পাশের মসজিদে, অপর পক্ষ সেখানে গিয়েও হামলা চালায়। এ সময় মসজিদে নামাজরত মুসল্লিরাও হামলার শিকার হন। মসজিদের জানালা ও দরজার গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার পবিত্র শবে বরাতের ইবাদতের সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে দেবীদ্বার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ফতেহাবাদ দক্ষিণপাড়া বায়তুল আকসা জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো.
স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় এক মাস আগে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে পাশের নয়াকান্দি গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে ফতেহাবাদ দক্ষিণপাড়া গ্রামের ছেলেদের মারামারি হয়। ওই ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেলে নয়াকান্দি গ্রামের একজনকে মারধর করে ফতেহাবাদ গ্রামের ছেলেরা। রাত ৮টার দিকে নয়াকান্দি গ্রামের ছেলেরা ফতেহাবাদ গ্রামের কামরুলকে রাস্তায় একা পেয়ে মারধর করে। এতে দুই গ্রামের তরুণেরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।
এ সময় কামরুলের সঙ্গে থাকা তরুণেরা দৌড়ে মসজিদে আশ্রয় নিলে নয়াকান্দি গ্রামের তরুণেরা সেখানে গিয়েও হামলা চালায়। এ সময় দুই গ্রামের তরুণদের মধ্যে মারামারি চলাকালে নামাজরত মুসল্লিদেরও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে মসজিদে ভাঙচুর চালায় তারা। মুসল্লিরা তাদের বাধা দিলে তারা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনকে মারধর করে। একপর্যায়ে মসজিদের ইমাম মাইক দিয়ে ঘোষণা দেন মসজিদে ডাকাত পড়েছে। পরে তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ১০টার দিকে দেবীদ্বার থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল আউয়াল বলেন, ১০ থেকে ১২ জন যুবক মসজিদে ঢুকে এলোপাতাড়ি দরজা, জানালা ও গ্লাস ভাঙচুর করে। তাদের প্রত্যেকের হাতে রড, হকিস্টিক ও পাইপ ছিল।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহত কামরুলের চাচাতো ভাই শাফাতুল ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘আমরা মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য আসছিলাম। নয়াকান্দি গ্রামের ছেলেরা আমাদের পথে আটক করে মারধর করে। আমরা ভয়ে দৌড়ে এসে মসজিদে ঢুকি। তারা আমাদের খুঁজতে এসে মসজিদ ভাঙচুর করে, মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়।’
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা মসজিদে নামাজ পড়ছিলাম। হঠাৎ দেখি একদল ছেলে মসজিদের বাইরে চারদিকে গ্লাস, দরজা-জানালা ভাঙচুর করছে। এদের কয়েকজন মসজিদের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। পরে শুনেছি ক্রিকেট খেলা নিয়ে আগের মারামারিকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে।’
এ প্রসঙ্গে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামছুদ্দিন ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, মারামারি হয়েছে দুই গ্রামের তরুণদের মধ্যে। এক পক্ষ মসজিদে চলে গেলে অপর পক্ষ সেখানে গিয়ে তাদের মারধরের চেষ্টা করে। তখন জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে। মূলত ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন দ র কর কম ট র স নয় ক ন দ মসজ দ র
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে এবার লড়ছেন না আওয়ামী লীগপন্থীরা
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীরা এ বছর অংশ নিচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, যাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁদের সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মামলায় হয়রানিমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। এ কারণে গতকাল মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনেও আওয়ামীপন্থী কোনো আইনজীবী মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেননি।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির ২০২৫-২৬ সেশনের নির্বাচনের তফসিল গত সোমবার ঘোষণা করা হয়। গতকাল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের শেষ দিন ছিল। আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের দাবি, সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দেওয়ার জন্য তিন দিনের সময়ের বিধান থাকলেও এবার তা মাত্র এক দিন রাখা হয়েছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ বুধবার মনোনয়ন ফরম জমা যাচাই-বাছাই চলবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ, ২৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও ৬ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর ভোটার আছেন ১ হাজার ২১০ জন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাঁচ আইনজীবী বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা গত ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা আদালত চত্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। একই দিন তাঁরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২০ আইনজীবীকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বহিষ্কার দাবি করে ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা মহানগরের সংগঠক ইনজামুল হক বাদী হয়ে কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ ২৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের বেশি আইনজীবীকে আসামি করা হয়।
আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতেই আগাম মামলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে লিটন। আজ সকালে তিনি বলেন, ‘গত ৩ আগস্ট পুলিশ লাইনসে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনটি মামলা হয়েছে। সেই একই ঘটনার ৬ মাস পর আবারও আরেকটি মামলায় হয়রানিমূলকভাবে আইনজীবীদের আসামি করা হয়েছে। আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ একসঙ্গে ৩২ জন আইনজীবীকে আসামি করা হয়। গঠনতন্ত্র অমান্য করে মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমার তিন দিনের সময় বেঁধে দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র এক দিন। আমরা যেন মামলার কারণে আসতে না পারি, এ জন্য নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়ম করা হয়েছে—সশরীরে হাজির হয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে হবে।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘এ মামলার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। যাঁরা টাকা জমা দিয়েছেন এবং বৈধ ভোটার, তাঁরাই মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ–সমর্থিতরা এলে অবশ্যই মনোনয়ন দেওয়া হতো। মামলার ভয়ে হয়তো আসেননি, এখানে আমাদের কী করার আছে। নির্বাচনে গঠনতন্ত্রের কোনো লঙ্ঘন করা হয়নি।’
সর্বশেষ গত বছরের ৭ মার্চ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ সেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টিতে আওয়ামী লীগপন্থীরা জয়লাভ করেন। বাকি পাঁচটিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা বিজয়ী হন।