‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই
Published: 15th, February 2025 GMT
কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেছেন বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ৮৩ বছর বয়সী এই সংগীতশিল্পী মৃত্যুর আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
চলতি বছরের শুরুতেই জানা গিয়েছিল, গুরুতর অসুস্থ হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তির পর প্রতুলকে পরীক্ষা করে দেখেন স্নায়ু এবং নাক-কান-গলার (ইএনটি) বিশেষজ্ঞরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অস্ত্রোপচারের পর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন প্রতুল। এরপর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। সঙ্গে আবার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণ ও নিউমোনিয়া। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠে। গত সোমবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় আইটিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্ম প্রতুলের। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। মা বাণী মুখোপাধ্যায় ও প্রতুলকে নিয়ে দেশভাগের পরে এপার বাংলায় চলে আসেন তিনি। থাকতে শুরু করে চুঁচুড়ায়। অল্প বয়স থেকেই কবিতায় সুর দিতেন প্রতুল। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতা দিয়ে শুরু।
নিজেও গান লিখতেন। অথচ প্রথাগত কোনও সঙ্গীতশিক্ষা তিনি নেননি। নিজের হৃদয় নিঃসৃত আবেগকেই সুর ও কথার মেলবন্ধনে বেঁধে ফেলতে শিখেছিলেন। যেভাবে আদিম মানব সহজাত ভঙ্গিতে গুহার নিঃসীম অন্ধকারে সুরের সাম্পানে পাড়ি দিত অচিন দেশে, সেভাবেই আজীবন প্রতুল নিজের হৃদয়ে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন গানের প্রদীপ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও চিকিৎসকদের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ শোনাতেন তিনি। তবে এই একটিই গান নয়, প্রতুল সারা জীবন ধরে অসংখ্য মণিমুক্তো সৃষ্টি করে গিয়েছেন। বাংলা আধুনিক গান থেকে জাপানি গান, আবার হিন্দি ছবির গান থেকেও উপাদান সংগ্রহ করেছেন। সৃষ্টি করেছেন একের পর এক গান।
জীবনের প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮)। তবে সেটি একক অ্যালবাম নয়। অন্য শিল্পীদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হয়েছিল। এরপর ১৯৯৪ সালে ‘যেতে হবে’ প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম। শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)। সেখানে সংকলিত হয়েছিল শিল্পীর অপ্রকাশিত গানগুলি।
তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ ছাড়াও ‘আলু বেচো’, ‘ছোকরা চাঁদ’, ‘তোমার কি কোনও তুলনা হয়’, ‘সেই মেয়েটি’, ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ’-এর মতো গানও শ্রোতার মন জিতেছে বারবার। তবু কিছু সৃষ্টি তার স্রষ্টার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে মিশে যায়। প্রতুলের জীবনের ‘ম্যাগনাম ওপাস’ এই গান। বাংলা ও বাঙালির আত্মা যেন ওই গানে জলছাপের মতোই থেকে গিয়েছে। নিজের গানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার কখনওই পছন্দ করেননি। কিন্তু অন্যান্য গানের মতোই ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গাওয়ার সময় তাঁর কণ্ঠনিঃসৃত জাদুতে গানের কথার সুরেলা চলন মগ্ন করে রাখত শ্রোতাকে।
যতদিন বাঙালি শ্রোতা থাকবে, এই পৃথিবীতে বেজে চলবে গানটি। থেকে যাবে সেই গানের অমোঘ অনুরণন। থাকবেন প্রতুলও।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নাটকের প্রদর্শনী হবে, কর্মসূচি স্থগিত করেছেন নাট্যকর্মীরা
নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোরকে নাটক মঞ্চস্থ করতে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। এতে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধের প্রতিবাদে আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডে মহিলা সমিতির সামনে ডাকা অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেছেন নাট্যকর্মীরা।
চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীর মহিলা সমিতি মিলনায়তনে টানা দুই দিন নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নাট্যকর্মীরা অপেক্ষায় ছিলেন মঞ্চে ওঠার। কিন্তু ‘তৌহিদি জনতা’র হুমকির চিঠি পেয়ে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী বাতিল করা হয়। প্রদর্শনী বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নেয় মহিলা সমিতি মিলনায়তন কর্তৃপক্ষ।
এরপর বিষয়টি নিয়ে প্রতিকার চেয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বরাবর একটি খোলাচিঠি ফেসবুকে পোস্ট করেন এই নাটকের নির্দেশক অভিনেত্রী নূনা আফরোজ। নাট্যকার অনন্ত হিরাও ফেসবুকে এ বিষয়ে পোস্ট দেন। একই সঙ্গে নাট্যকর্মীরা বিকেলে ওই প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। রমনা থানার পুলিশ নাটকের প্রদর্শনী করতে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থগিত করা হয় বলে অভিনেত্রী নূনা আফরোজ জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে রমনা থানার ওসি ফোন করেছিলেন। তিনি এখানে এসে সবকিছু দেখেছেন। এরপর আমাদের জানিয়েছেন, সব প্রটোকল তাঁরা দেবেন, আমরা যেন শোটা আজ করি। মহিলা সমিতি থেকেও আমাদের শোটা আজ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে আজ আর শো করা সম্ভব নয়। আমাদের আজকের শোটি মঙ্গলবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটানাটি তাঁরা আমাদের জানাননি। বিষয়টি আমরা যখন জানতে পারি,সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তাঁদেরকে প্রোগ্রাম করার সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছি।’
আরও পড়ুনহুমকিতে নাটকের প্রদর্শনী বাতিল, বিকেলে নাট্যকর্মীদের কর্মসূচি২ ঘণ্টা আগে