পবিত্র কোরআনের অনেকগুলো বাংলা অনুবাদ এখন বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ অন্যতম। ১৯৮৪ সালে কোরানসূত্র নামে তাঁর যে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, সেটাকে কোরআনের পূর্ণ বাংলা অনুবাদে রূপ দেয়ার ফসল এই সরল বঙ্গানুবাদটি।
কোরানসূত্র প্রকাশের পরই বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯৪ সালে সেটির পুনর্মুদ্রণ হয় বাংলা একাডেমি থেকে। এটি ছিল বাংলা ভাষায় কোরআনের একটি বিষয়ভিত্তিক বিন্যাস। বলা যায়, কোরআনের একটি বাংলা কোষগ্রন্থ, যদিও তা পূর্ণাঙ্গ নয়। তবে এ ধরনের কোনো বই বাংলায় তখনো ছিল না। ফলে কোরআন শরিফে বিভিন্ন বিষয়, বস্তু ও ব্যক্তির যে উল্লেখ আছে, তা সহজে খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায় বাংলা ভাষায় ছিল না। হাবিবুর রহমানের কাজ সেই উপায় তৈরি করে দেয়। যেমন: কেউ যদি জানতে চান যে হজরত ইব্রাহিম (আ.
প্রায় ৪০০টি বিষয়ের ভুক্তি রয়েছে বইটিতে। বিষয়গুলো বাংলা বর্ণমালার ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে।
পাঠকের কাছে আবেদন তৈরি করলেও মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান কোরানসূত্র নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই তিনি সহজ বাংলায় একটি পূর্ণাঙ্গ অনুবাদের কাজে হাত দেন। সেই শ্রমসাধ্য প্রয়াসের ফল হিসেবে ২০০০ সালে কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয় মাওলা ব্রাদার্স থেকে। দুই দশক পরে ২০২০ সালে প্রথমা থেকে এর নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সহজ ভাষায় এ রূপান্তর করেছেন। বাঙালি পাঠককে কোরআনের গভীর মর্মবাণী উপলব্ধি করতে তাই বেগ পেতে না হয়
আরও পড়ুনরোজার প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩এতে বিভিন্ন আয়াতের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুসারে টিকা বা সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। যেমন, সুরা বাকারার ২০৩ নম্বর আয়াতের বাংলা অনুবাদ হয়েছে, ‘তোমরা নির্দিষ্টসংখ্যক দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করো আর যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে চলে আসে, তাতে তার কোনো পাপ নেই। এ তার জন্য যে সাবধানে চলে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ও জেনে রাখো যে, তাঁর কাছে তোমাদের একত্র করা হবে।’ এখানে ‘দিনগুলোতে’ শব্দগুচ্ছের ওপর তারকাচিহ্ন দিয়ে পাদটিকায় লেখা হয়েছে. ‘মিনা অবস্থানকালে জিলহাজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ।’ অর্থাৎ হজের সময় মিনায় থাকার সময়কালটি পাঠকের কাছে তাৎক্ষণিক স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
বিষয়ভিত্তিক নির্ঘণ্ট থাকায় কোনো একটি বিষয় কোন সূরার কত নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে, তা জানা সহজ হয়। এখানে প্রায় ৮০০টি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান কোরানশরিফ বানানটি বেছে নিয়েছেন তাঁর কাছে ‘দৃষ্টিনন্দন ও শ্রুতিমধুর’ ঠেকায়, যা তিনি ভূমিকাতে উল্লেখ করেছেন।
কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ; অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান; প্রথমা প্রকাশন, ২০২০।
আরও পড়ুনইসলামের সহজ ইতিহাস২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি ‘মুজিব বর্ষ ১০০’ পঞ্জিকার এখন অস্তিত্বই নেই
‘মুজিব বর্ষ ১০০’ নামে একটি বিশেষ পঞ্জিকা যৌথভাবে তৈরি করেছিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় তহবিল। এতে ব্যয় করা হয়েছিল প্রায় তিন লাখ টাকা। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বানানো এই পঞ্জিকার প্রথম মাসের নাম ছিল ‘স্বাধীনতা’। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন (১৭ মার্চ) ছিল এই মাসের প্রথম দিন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের মতো এটিরও গণনা করার কথা ছিল ৩৬৫ দিন ধরে। ২০২০ সালের ১৬ মার্চ পঞ্জিকাটির উদ্বোধন করেছিলেন তখনকার সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে পঞ্জিকাটি শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি।
এই পঞ্জিকায় ১২টি মাস আছে। তবে কোনো অধিবর্ষ (ইংরেজি লিপইয়ার) নেই। ১২ মাসের নাম দেওয়া হয়েছিল—স্বাধীনতা, শপথ, বেতারযুদ্ধ, যুদ্ধ, শোক, কৌশলযুদ্ধ, আকাশযুদ্ধ, জেলহত্যা, বিজয়, ফিরে আসা, নবযাত্রা ও ভাষা। ২০২০ সালের ১৬ মার্চ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন শ্রমসচিব কে এম আলী আজম পঞ্জিকাটির মোড়ক উন্মোচন করে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, পঞ্জিকায় বেশ কিছু সংস্কার প্রয়োজন। সব অংশীজনের মতামত নিয়ে ক্যালেন্ডারটি চূড়ান্ত করে এরপর সরকারি সব দপ্তরে রাখার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বানানো পঞ্জিকা