কখন কী হবে, ঠিক নেই! কখনো প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচে অবিশ্বাস্য বিপর্যয়ে হার, কখনো আবার হারতে থাকা ম্যাচে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়—এই যদি হয় আনপ্রেডিক্টিবিলিটির (অননুমেয়তার) সংজ্ঞা, তাহলে ক্রিকেটে সবচেয়ে ধারাবাহিক ‘আনপ্রেডিক্টেবল’পাকিস্তান ক্রিকেট দল। নামের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া এই তকমার সার্থকতা দলটি পূরণ করে আসছে বছরের পর বছর ধরে।

এবার যেমন সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৫২ রান নজিরবিহীনভাবে ৬ উইকেট ও ৬ বল হাতে রেখেই টপকে গেছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল। পাকিস্তানের পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ওয়ানডে ইতিহাসে এমনটি ঘটেছে এবারই প্রথম।

আবার সেই একই দল পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে আড়াই শর নিচেই অলআউট হয়ে গেছে। এ তো গেল ম্যাচের ফল। এ ছাড়া ম্যাচের ভেতরেও খুব ভালো অবস্থা থেকে বাজে অবস্থায় আর বাজে অবস্থা থেকে ভালো অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর উদাহরণ তো প্রতিনিয়তই দেখা যায়।

এটা শুধু আমাদের ক্রিকেটের দোষ নয়, আমাদের সংস্কৃতি সব সময়ই এমন ছিল। এমনকি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।মোহাম্মদ রিজওয়ান

পাকিস্তান ক্রিকেট দল ‘আনপ্রেডিক্টেবল’, এটা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে এমন অননুমেয় হয়ে ওঠার কারণ কী?

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর এক সংবাদিক পাকিস্তানের অননুমেয়তা নিয়ে অধিনায়ক রিজওয়ানকে জিজ্ঞেস করেন। বিশেষ করে বেশির ভাগ ম্যাচেই পাকিস্তান দলের জয় বা হারের দোলাচলে দুলতে দুলতে তারপর এক দিকে হেলে যাওয়া, একতরফাভাবে জিততে না পারার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই সাংবাদিক।

আরও পড়ুনভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে ৫ স্পিনার কেন, প্রশ্ন অশ্বিনের১ ঘণ্টা আগে

জবাব দিতে গিয়ে পাকিস্তান অধিনায়ক যা বলেছেন, তা এ রকম—‘যদি আমাদের ক্রিকেটের দিকে তাকান, সেটা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোক, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোক বা আজকের ম্যাচেই হোক, সব সময়ই এই অননুমেয়তা ছিল। আমরা একতরফাভাবে খুব কমই ম্যাচ জিতি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

রিজওয়ান এখানেই থামেননি। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অননুমেয়তার কারণ শুধুই ক্রিকেটীয় নয় বলেও দাবি করেছেন, ‘কিন্তু এটা শুধু আমাদের ক্রিকেটের দোষ নয়, আমাদের সংস্কৃতি সব সময়ই এমন ছিল। এমনকি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।’

পাকিস্তানের জেতা ম্যাচ হারা আর হারার ম্যাচে জেতার কারণ তাহলে এটাই!

আরও পড়ুনছন্দহীন বাবর আজমও রেকর্ড ছুঁতে পারেন৪ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র স অনন ম য় র জওয় ন অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করে চাকরি হারানোর ঝুঁকি কতটা?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মস্থল নিয়ে মন্তব্য করার আগে চিন্তাভাবনা করা জরুরি। যদিও কর্মীদের কিছু নির্দিষ্ট আইনি সুরক্ষা রয়েছে, তবে বাস্তবতা বেশ জটিল। সম্প্রতি টেসলার এক ব্যবস্থাপক লিংকডইনে ইলন মাস্ক সম্পর্কে সমালোচনামূলক মন্তব্য করার পর চাকরি হারিয়েছেন।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মস্থল নিয়ে মন্তব্য করা কর্মীদের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নিয়োগকর্তারা সাধারণত কর্মস্থল সম্পর্কে প্রকাশ্যে সমালোচনা পছন্দ করেন না। অনেক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নীতিমালা রয়েছে, যা লঙ্ঘন করলে কর্মী চাকরিচ্যুত হতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনকি সহকর্মীর কোনো সমালোচনামূলক পোস্টে ‘লাইক’ দিলেও চাকরির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

তবে আইন অনুযায়ী কিছু সুরক্ষা কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য। তাই চাকরির চুক্তিপত্র ও প্রতিষ্ঠানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নীতিমালা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা জরুরি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মস্থল নিয়ে মন্তব্য করার কারণে চাকরি হারানোর আশঙ্কা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। বিশেষ করে, যদি কেউ অ্যাট-উইল (ইচ্ছানুযায়ী চাকরিচ্যুত করা যেতে পারে) চুক্তির আওতায় কাজ করেন, তাহলে নিয়োগকর্তা যেকোনো সময়, যেকোনো কারণে তাকে বরখাস্ত করতে পারেন। তবে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন, বৈষম্যবিরোধী আইন বা নির্দিষ্ট শর্তযুক্ত চুক্তি। যেখানে চাকরিচ্যুতির নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব অঙ্গরাজ্যে অ্যাট-উইল কর্মসংস্থানের নিয়ম কার্যকর। তবে মন্টানা একমাত্র ব্যতিক্রম। এ অঙ্গরাজ্যে কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য যৌক্তিক কারণ দেখাতে হয় বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল কনফারেন্স অব স্টেট লেজিসলেচারস। এ ছাড়া দেশটির ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী, কর্মীদের একত্র হয়ে কর্মপরিবেশ ও চাকরির শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা করার অধিকার রয়েছে এবং এটি আইনি সুরক্ষার মধ্যে পড়ে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসংস্থান আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্যাথরিন ফিস্ক বলেন, যদি কোনো কর্মী যুক্তি দিতে পারেন যে তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন, তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন বা তাঁদের স্বার্থে কথা বলছিলেন, তাহলে তাঁর বক্তব্য আইনের আওতায় সুরক্ষিত হতে পারে। অধ্যাপক জেফ্রি হির্শের মতে, এমনকি সহকর্মীর কোনো পোস্টে ‘লাইক’ দেওয়া পর্যন্ত আইনি সুরক্ষার মধ্যে পড়তে পারে। তবে পোস্টটি অবশ্যই কর্মপরিবেশ বা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার মতো বিষয়ে হতে হবে এবং পোস্টটি একাধিক কর্মীর ওপর প্রভাব ফেলে এমন হতে হবে।

তবে সাধারণত, যদি কেউ শুধু ‘আমার বস খারাপ’ বা ‘আমার অফিসে কাজের পরিবেশ বাজে’–এর মতো ব্যক্তিগত মন্তব্য করেন, তাহলে তা আইনি সুরক্ষা পাবে না বলে জানিয়েছেন শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ মার্ক ক্লুগার।

সরকারি কর্মচারীরা (যেমন ফেডারেল, স্টেট ও স্থানীয় সরকারি কর্মী) যদি ব্যক্তিগত সময়ে কর্মস্থলের বাইরে থেকে কোনো সামাজিক ইস্যু নিয়ে মতপ্রকাশ করেন এবং সেটি গুরুতরভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে তবে তারা প্রথম সংশোধনী আইনের আওতায় সুরক্ষিত থাকেন। ফিস্ক বলেন, ‘শিক্ষক বা পুলিশ কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার কারণে শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন এমন বহু ঘটনা রয়েছে। যেখানে তারা প্রথম সংশোধনীর অধীনে সুরক্ষা পেয়েছেন।’

প্রতিষ্ঠান কর্মীদের মিথ্যা তথ্য প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে পারে। তবে সরাসরি সমালোচনামূলক পোস্ট নিষিদ্ধ করতে পারে না বলে জানিয়েছেন ক্লুগার।

‘ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ড (এনএলআরবি) অতীতে এমন নীতিমালা পর্যালোচনা করে বলেছে, এগুলো খুব কঠোর। কারণ, এতে কর্মীরা কর্মপরিবেশ নিয়ে মতপ্রকাশের অধিকার হারাতে পারেন।’ তবে কর্মীদের ছাঁটাই না করেও প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বা সেবার বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করতে নিরুৎসাহিত করতে পারে। ক্লুগার বলেন, ‘আমি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নীতিমালা তৈরি করি, তখন তাদের পরামর্শ দিই—কর্মীদের বোঝানো জরুরি যে তাদের ব্যক্তিগত পোস্ট কীভাবে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি প্রভাবিত করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, নীতিমালায় সাধারণত প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য থেকে বিরত থাকা, প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক গোপনীয়তা ফাঁস না করা এবং কর্মীরা যেন স্পষ্ট করেন যে তাঁদের মতামত প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল মতামত নয়—এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।

যদি কোনো কর্মী মনে করেন, তাঁকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, তবে তিনি ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ডে (এনএলআরবি) অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

অধ্যাপক হির্শ বলেন, ‘সমস্যা হলো, বেশির ভাগ মানুষ এ বিষয়ে জানেন না, এমনকি অনেক আইনজীবীও বুঝতে পারেন না যে কোনো কর্মী এই সুরক্ষা পেতে পারেন।’ অভিযোগ দায়েরের পরে এনএলআরবির একটি আঞ্চলিক অফিস এ বিষয়ে তদন্ত চালাবে এবং নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। যদি নিয়োগকর্তা বিরোধ নিষ্পত্তি না করে, তবে এনএলআরবি বিনা মূল্যে মামলাটি পরিচালনা করবে। যদিও প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ, তবে বিচারক যদি কর্মীর পক্ষে রায় দেন, তাহলে তিনি তার চাকরিতে ফিরে যেতে পারবেন এবং বকেয়া বেতন পাবেন।

সূত্র: সিএনএন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফিতরা কীভাবে হিসাব করব
  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করে চাকরি হারানোর ঝুঁকি কতটা?
  • যুক্তরাষ্ট্রের পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলেন উমামা ফাতেমা