মার্কিন শুল্কের কতটা প্রভাব পড়বে ভারতের ওপর
Published: 15th, February 2025 GMT
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির সফরের পরও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ভারত, সে ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই মোদিকে বন্ধু হিসেবে আখ্যা দেন না কেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের তো বটেই, বাণিজ্য–সহযোগীদের পণ্যেও পাল্টা আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। যদিও কোন কোন ভারতীয় পণ্যে এসব শুল্ক আরোপ করা হবে, তা এখনই জানা যায়নি; আগামী এপ্রিল মাসের পর তা স্পষ্ট হবে। ভারত পাল্টা শুল্ক আরোপ করে কি না, তা বোঝা যাবে এরপর। তাতে বিষয়টি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তার হিসাব করছে ভারতের শিল্পমহল। যদিও অনেকে মনে করছেন, মার্কিন শুল্কের প্রভাব ভারতের ওপর তেমন একটা পড়বে না।
ভারতের শিল্পমহলের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হলে দাম বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন ক্রেতাদেরই তার জের টানতে হবে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির গতি বাড়বে; হোঁচট খাবে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে সারা বিশ্বের আর্থিক কর্মকাণ্ডে, যার থেকে ছাড় পাবে না ভারত। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ালে চীনের সস্তা পণ্য সেখানে গিয়ে ভারতসহ অন্যান্য দেশে যেতে পারে; এটা ভারতের ছোট কোম্পানিগুলোর জন্য উদ্বেগের বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উপদেষ্টা সংস্থা জিটিআরআইর দাবি, দুই দেশের রপ্তানি পণ্যের প্রকৃতি আলাদা। তাই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বড় কোনো প্রভাব ভারতের পণ্যে পড়বে না। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তবের ব্যাখ্যা, পোশাক, জুতাসহ ভারতের শ্রমনিবিড় শিল্পপণ্যে যুক্তরাষ্ট্র এখনই ১৫ থেকে ৩৫ শুল্ক আরোপ করছে। আবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা বড় অংশের পণ্যে ভারত ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।
তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার এটা উপযুক্ত সময় নয় বলেই মনে করছে জিটিআরআই। তারা বলছে, এ বিষয়ে একতরফাভাবে এগোতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। রপ্তানি সংস্থাগুলোর সংগঠন ফিয়োর বক্তব্য, দেশীয় শিল্পের স্বার্থে সতর্ক অবস্থান নেওয়া উচিত ভারত সরকারের।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক থেকে ভারতের পণ্যকে কতটা বাঁচানো যায়, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যবস্থা নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা ইতিবাচক বিষয় হলেও ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে ভারতের চিন্তা বাড়ছে। আমদানি শুল্কের বাইরে গিয়েও ভ্যাট, অশুল্ক বাধা ও বাণিজ্য বিধিনিষেধের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে পারেন ট্রাম্প। যদিও আমদানি করা পণ্যের ওপর ভারতের পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তারপরও উচ্চ শুল্ক আরোপের জন্য এই জিএসটিকে ব্যবহার করতে পারেন ট্রাম্প।
বাণিজ্য চুক্তিচলতি বছরের শরৎকালের আগে বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপের আলোচনা শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি ও ট্রাম্প। ওই আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে পণ্য ও সেবার সরবরাহব্যবস্থা সংহত করা, শুল্ক হ্রাস ও বাজার–সুবিধার মতো বিষয়গুলো।
তবে দুই দেশের মধ্যে ঠিক কী ধরনের বাণিজ্য চুক্তি হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। জিটিআরআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এই বাণিজ্য চুক্তিটি কী? এটি কি একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি হবে, নাকি পারস্পরিক শুল্ক আরোপের কোনো চুক্তি হবে?’
এর জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন অভিজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘এটা যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হতে হবে, তা নয়; সেটা হলে আরও স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেওয়া হতো। এই চুক্তিটি অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাসসংক্রান্ত হতে পারে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ার কাছে রেকর্ড রানও নিরাপদ নয়!
ওয়ানডে ক্রিকেটে তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কেন তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারই আরেকটি প্রমাণ মিলল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চে। ইংল্যান্ডকে স্রেফ নাকানিচুবানি খাইয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির যাত্রা শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া।
লাহোরে দুই দলই ইতিহাসের পাতায় নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে। ইংল্যান্ড আগে ব্যাটিং করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রান ৩৫১ জমা করে। এই রানও অস্ট্রেলিয়ার কাছে নিরাপদ নয়। পাল্টা জবাব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতেছে ৫ উইকেটে, ১৫ বল হাতে রেখে।
ইংলিশ ওপেনার বেন ডাকেট চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান করেছিলেন প্রথম ইনিংসে। ১৬৫ রানের ইনিংস খেলেন। তার দেড়শ’র জবাব সেঞ্চুরিতে দিয়েছেন জশ ইংলিস। তাতেই অস্ট্রেলিয়ার বিজয়ের রূপকথা লিখা হয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
সাকিবসহ ১০৪ ক্রিকেটারের দলবদল সম্পন্ন, আগামীকাল করবেন তামিম
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের কোনো উত্তাপ টের পাচ্ছে না ভারত!
অজি দলে নিয়মিত একাধিক ক্রিকেটার নেই। কামিন্স, স্টার্ক, মার্শ, হ্যাজেলউড, স্টয়নিসকে ছাড়া অস্ট্রেলিয়া দলটি কেমন হবে তা নিয়ে চিন্তায় ছিল সমর্থকরা। কিন্তু স্কোয়াডের গভীরতা যে এতোটা বেশি তা কেউ ভাবতে পেরেছিল?
তার ওপরে ট্র্যাভিস হেড (৬), অধিনায়ক স্মিথ (৫) ও মার্নাস লাবুসানে (৪৭) ফেরার পর সাড়ে তিনশর বেশি রান তাড়া করা যাবে এমন ভাবনার লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল। কিন্তু পাঁচে নামা জশ ইংলিস সব হিসেব পাল্টে দিলেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন অ্যালেক্স ক্যারি। দুজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ১১৬ বলে ১৪৬ রানের জুটি গড়েন।
ক্যারি ফিফটি ছুঁয়ে ৬৯ রানে ফিরে গেলে ইংলিস তুলে নেন ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরি। তাতে লিখা হয়ে অনবদ্য এক বিজয়ের গল্প। ৮৬ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কায় ইংলিস তার ইনিংসটি সাজান। এছাড়া ম্যাক্সওয়েল ১৫ বলে ৩২ রান করেন ৪ চার ও ২ ছক্কায়।
এর আগে বেন ডাকেটের একক ব্যাটিং প্রদর্শনীতে রানের পাহাড়ে চড়ে ইংল্যান্ড। ওপেনিংয়ে নেমে ৪৮তম ওভার পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন। প্রায় পৌনে চার ঘণ্টার ইনিংসে ১৭ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬৫ রানের ইনিংস খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন জো রুট। ১৫৫ বলে ১৫৮ রান যোগ করেন দুজন। রুট ৭৮ বলে ৬৮ রান করে ফিরে গেলেও ডাকেট তুলে নেন ওয়ানডে ক্রিকেটের তৃতীয় সেঞ্চুরি।
এই দুই ব্যাটসম্যান বাদে বিশের ঘর পেরিয়েছেন কেবল জস বাটলার ও জোফরা আর্চার। বাটলার ২১ বলে ২৩ ও আর্চার ১০ বলে ২১ রান করেন। শেষ দিকে আর্চারের অতি গুরুত্বপূর্ণ রানের সুবাদে ইংল্যান্ডের রান সাড়ে তিনশ পেরিয়ে যায়।
ইনিংসের শুরুতে অ্যালেক্স ক্যারি দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে আলো কেড়ে নেন। বেন ডোয়ার্শুইসের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। সেখানে ক্যারি ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে অসাধারণ দক্ষতায় বল তালুবন্দি করেন।
অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ে তেমন ঝাঁজ ছিল না। ডোয়ার্শুইস ৬৬ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া ২টি করে উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা ও মার্নাস লাবুসানে।
প্রথমে রেকর্ড রান গড়া। সেই রান তাড়া করে জয়। দুই ইনিংসে দুটি অনবদ্য সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে বলা যায় ওয়ানডে ক্রিকেট দারুণ একটি দিন কাটাল। আর ক্রিকেটপ্রেমীরাও সেটা মনভরে উপভোগ করলো।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল