বৈশ্বিক বিপর্যয় মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি সহায়তা দলের কার্যক্রম আর চলবে না
Published: 15th, February 2025 GMT
আন্তর্জাতিক বিপর্যয় ও সংকটে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সুপরিচিত একটি কর্মসূচি বড় ধরনের আর কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে কাজে লাগানো হবে না।
বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দেওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা (ইউএসএআইডি) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভেঙে দেওয়ার কারণে ওই কর্মসূচি আর কাজ করবে না। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছে এমন নয়টি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
দ্য ডিজাস্টার অ্যাসিস্ট্যান্স রেসপন্স টিম বা ডিএআরটিএস নামে পরিচিত কর্মসূচিতে উচ্চ প্রশিক্ষিত কর্মীরা কাজ করে থাকেন। কোনো বিপর্যয় বা গুরুতর সংকটকালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মানবিক সহায়তায় নেতৃত্ব দিতে এসব কর্মীকে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মোতায়েন করা হতো।
দ্য ডিজাস্টার অ্যাসিস্ট্যান্স রেসপন্স টিম বা ডিএআরটিএস নামে পরিচিত কর্মসূচিতে উচ্চ প্রশিক্ষিত কর্মীরা কাজ করে থাকেন। কোনো বিপর্যয় বা গুরুতর সংকটকালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মানবিক সহায়তায় নেতৃত্ব দিতে এসব কর্মীকে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মোতায়েন করা হতো।সাম্প্রতিকতম ইতিহাসে ডিএআরটিএসের কর্মীদের যেখানে মোতায়েন করা হয়েছে, সেগুলোর একটি হাইতি। ২০১০ সালে প্রলয়ঙ্করী এক ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রায় ৩ লাখ মানুষ মারা যান। এ ছাড়া ২০১১ সালে জাপানে তীব্র ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাত ছাড়াও ইরাক ও সিরিয়া যুদ্ধে এ দলকে মোতায়েন করা হয়েছিল। জাপানে ওই ভূমিকম্পে ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও তেজস্ক্রিয় উপকরণ ছড়িয়ে পড়ে।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউএসএআইডির সাত কর্মী রয়টার্সকে বলেছেন, বর্তমানে আফগানিস্তান, গাজা, সুদান ও ইউক্রেনে ডিএআরটিএসের কার্যক্রম চলছে। কিন্তু সম্প্রতি ইউএসএআইডিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তহবিলের জোগান বন্ধ করে দেওয়ায় এ চার স্থানে আর স্বাভাবিক কাজ চালাতে পারবে না ডিএআরটিএস।
ডিএআরটিএসের কিছু কর্মীকে ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য কর্মীরা তাঁদের অফিশিয়াল ই–মেইল বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারছেন না। কিছু সূত্র বলছে, ক্ষেত্রবিশেষে এক–একটি ডিএআরটিএস–এর সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ৫০ জনের বেশি হয়ে থাকে।
নতুন প্রশাসন (ট্রাম্প প্রশাসন) আমাদের অনন্য বেসামরিক সক্ষমতার শক্তি ছেঁটে ফেলছে। জীবন বাঁচাতে ও মানুষকে সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের খুবই দৃশ্যমান, কার্যকর প্রতিফলন হলো ডিএআরটিএস।মার্সিয়া ওং, ইউএসএআইডির ব্যুরো ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্সের সাবেক উপপ্রধানইউএসএআইডির একজন কর্মী বলেন, ‘আমাদের কাজ করার উপকরণগুলো শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’
সূত্রগুলো বলছে, বিদেশে প্রতিটি ডিএআরটিএসকে সহায়তা দিতে ওয়াশিংটনভিত্তিক দল থাকে। মাঠপর্যায়ের দলের কাছ থেকে গোপন তথ্য পেতে ওয়াশিংটনের সহায়তা দলকে অবশ্যই ইউএসএআইডির সদর দপ্তরে কাজ করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে সংস্থাটির কর্মীদের ওয়াশিংটনের সদর দপ্তরে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এর অর্থ, নতুন কোনো ডিএআরটিএস মোতায়েন করা যাবে না।
ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, ইউএসএআইডিকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করা ও সংস্থাটির অধিকাংশ কর্মীকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে তারা। এ পরিকল্পনার জেরে ডিএআরটিএসের ভবিষ্যৎও অন্ধকারে পড়েছে।
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিএইচএ’র ১ হাজার ৩০০ কর্মীর কতজনকে ছাঁটাই করা হবে সেটি তাদের জানানো হয়নি। তবে গত সপ্তাহে ইউএসএআইডির কর্মীদের এক নোটিশে জানানো হয়, এ সংস্থার ১০ হাজার কর্মীর মধ্যে অপরিহার্য ৬০০ জনকে চাকরিতে রাখা হবে। অবশ্য কাদের রাখা হবে, তা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।ডিএআরটি কর্মসূচির দেখভাল করে থাকে ইউএসএআইডির ব্যুরো ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স (বিএইচএ)। এ ব্যুরোর সাবেক উপপ্রধান মার্সিয়া ওং বলেন, ‘নতুন প্রশাসন (ট্রাম্প প্রশাসন) আমাদের অনন্য বেসামরিক সক্ষমতার শক্তি ছেঁটে ফেলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে ও মানুষকে সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের খুবই দৃশ্যমান, কার্যকর প্রতিফলন হলো ডিএআরটিএস।’
সূত্রগুলো বলেছে, বিএইচএ’র ১ হাজার ৩০০ কর্মীর কতজনকে ছাঁটাই করা হবে সেটি তাদের জানানো হয়নি। তবে গত সপ্তাহে ইউএসএআইডির কর্মীদের এক নোটিশে জানানো হয়, এ সংস্থার ১০ হাজার কর্মীর মধ্যে অপরিহার্য ৬০০ জনকে চাকরিতে রাখা হবে। অবশ্য কাদের রাখা হবে, তা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র ম ত য় ন কর র কর ম দ র ক জ কর কর ম ক কর ম র ত কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেল শুধু আশ্বাসেই
ঢাকার সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পার হলেও এখনো নির্মাণ হয়নি কোনো ছাত্রীনিবাস। নানা সময় উচ্চারিত হয়েছে উন্নয়নের বুলি, সভা-সেমিনারে এসেছে প্রতিশ্রুতির পাহাড়—কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি নেই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ কিংবা নির্ধারিত সময়সীমা। ফলে নারী শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের পুরোধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর জন্য একটি বিকল্প ধারার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ফলশ্রুতিতে গবি গড়ে উঠলেও নারী শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজারেরও বেশি ছাত্রী অধ্যয়নরত, যাদের অধিকাংশ সবাই বাসা ভাড়া করে কিংবা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। আবাসন না থাকায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় থাকতে গেলে এসব শিক্ষার্থীদের গুণতে হয় প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারে শিক্ষার্থীদের উপর আলাদাই চাপ তৈরি হচ্ছে, যা বহন করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তাদের পরিবার।
পাশাপাশি রাতে চলাচলের ঝুঁকি, স্থানীয় বাড়িওয়ালা কর্তৃক হেনস্তার শিকার, ইভটিজিংসহ নানা অপ্রিতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিয়মিত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একাধিকবার আবাসন ব্যবস্থা ‘প্রক্রিয়াধীন’ বললেও তা নিয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।
পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অভাবেই হল নির্মাণে নীতিনির্ধারকেরা কালক্ষেপণ করছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আমিন বলেন, “আমার প্রতিদিনের যাত্রাটা যুদ্ধের মতো। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ৪০ কিমি দূরে। প্রতিদিন লোকাল বাসে চেপে আসতে হয়। কখনো বাসে উঠতে দেয় না, কখনো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, কখনো বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। নতুন এলাকায় বাসা খুঁজে থাকা কষ্টকর, পরিবারও চিন্তায় থাকে সারাক্ষণ। ক্লাসে মন দিতে পারি না। এ বয়সে বাসা ভাড়া, রান্নাবান্না, নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে জীবনটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা ছাত্রী হল থাকলে অন্তত এ লড়াইটুকু করতে হতো না।”
ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আহমেদ তন্বী বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, কিন্তু এর আগে আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্রী ছিলাম। জানি, মেয়েদের জন্য এখানে পড়তে আসা মানে প্রতিনিয়ত এক অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুদ্ধ। একটা সময় পরে মেয়েরা ক্লাস বাদ দেয়, টিউশন নেওয়া বাদ দেয়—শুধু নিরাপত্তার জন্য।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিশাল ক্যাম্পাসে জায়গার অভাব নেই, ইচ্ছার অভাবটাই বড়। ছাত্রীনিবাস শুধু দরকার নয়, এটি ন্যায্য অধিকার। এতে ছাত্রীরা নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে, দূর থেকে আরও শিক্ষার্থীরা আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা তাদের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “হলের জন্য স্থান সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাজগুলো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব।”
ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী