করোনা মহামারির পর থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি বলে মনে করছেন মঞ্চনাটকের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মতে, বিগত দুই বছরে বেশ কিছু নতুন নাটক মঞ্চে এলেও দর্শকসংখ্যা তেমন বাড়েনি, বরং ক্রমেই দর্শকসংকট দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে থিয়েটার চর্চায় গতিশীলতা আনতে, নাট্যদলগুলো ও নাট্যকর্মীদের উজ্জীবিত করতে এবং দর্শকদের উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরে থিয়েটার চর্চারত নাট্যদলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ‘ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদ’। তাদের উদ্যোগে ৮৫টি নাট্যদলের নাটক নিয়ে রাজধানীর ৫টি মিলনায়তনে শুরু হতে যাচ্ছে নাট্যোৎসব।
‘শিল্পের আলোয় ভরে উঠুক মঞ্চের আঙিনা, দর্শকই স্বজন, দর্শকই প্রেরণা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ শনিবার থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নাট্যোৎসবের অনুষ্ঠিত হবে নাটক সরণির মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে। আজ বিকেল পাঁচটায় মহিলা সমিতি প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করবেন শতাধিক দর্শক ও মঞ্চের অভিনয়শিল্পী।
এই উৎসব হবে তিনটি পর্যায়ে, যার প্রথম পর্যায় শনিবার শুরু হচ্ছে। এই উৎসবে এক টিকিটে ১৪টি নাটক দেখার সুযোগ পাবেন দর্শক। টানা ১৪ দিনে ১৪টি নাটক উপভোগ করতে পারবে একই টিকিটে। টিকিটের মূল্য এক হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতিদিনের টিকিটও পাওয়া যাবে ৫০০, ৩০০ ও ২০০ টাকায়।
ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদের সদস্যসচিব কামাল আহমেদ জানান, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে এই উৎসব হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল এবং জহির রায়হান মিলনায়তনে। পরবর্তী সময়ে মঞ্চনাটক করা যাবে—এমন স্থান পেলে সেখানেও এই উৎসব বর্ধিত করা হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুননতুন বছরে শিল্পকলা একাডেমির ‘তারুণ্যের উৎসব’৩১ ডিসেম্বর ২০২৪পর্ষদের আহ্বায়ক ঠাণ্ডু রায়হানের ভাষ্যে, ‘মহামারির পর থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি। গত দুই বছরে বেশ কিছু নতুন নাটক মঞ্চে এলেও দর্শকসংখ্যা তেমন বাড়েনি, বরং ক্রমেই দর্শকসংকট বেড়ে চলেছে।’ এই উৎসব মঞ্চনাটকের দর্শক বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন আয়োজকেরা।
থাকছে যেসব নাটক
উৎসবের প্রথম দিন আজ রয়েছে থিয়েটারের নাটকÑ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। রোববার লোক নাট্যদল, বনানী মঞ্চস্থ করবেÑ‘কঞ্জুস’। ১৭ ফেব্রুয়ারি রয়েছে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নাটকÑবলয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি পুণ্যাহ মঞ্চস্থ করবে নাট্যকেন্দ্র। ১৯ ফেব্রুয়ারি রয়েছে অনুস্বরের ‘হার্মাসিস ক্লিওপেট্রা’। ২০ ফেব্রুয়ারি থাকছে ঢাকা থিয়েটার মঞ্চের ঘরজামাই। ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাচ্যনাটের কিনু কাহারের ‘থেটার’, ২২ ফেব্রুয়ারি রয়েছে ঢাকা থিয়েটারের ‘একটি লৌকিক’ অথবা ‘অলৌকিক স্টিমার’। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রদর্শিত হবে শৌখিন থিয়েটারের ‘অন্তরালের আয়না’। ২৪ ফেব্রুয়ারি মঞ্চস্থ হবে নাট্যপালার ‘বাঘ’। ২৫ ফেব্রুয়ারি আরণ্যক নাট্যদলের ‘ময়ূর সিংহাসন’, ২৬ ফেব্রুয়ারি আগন্তুকের ‘অন্ধকারে মিথেন’ মঞ্চস্থ হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারি দেখা যাবে পদাতিক নাট্যসংসদ টিএসসির ‘গুণজান বিবির পালা’। ২৮ ফেব্রুয়ারি উৎসবের শেষ দিনে ‘শেষের কবিতা’ মঞ্চস্থ করবে প্রাঙ্গণেমোর।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নাম বদলাতে পারে মঙ্গল শোভাযাত্রার
বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নতুন নামের বিষয়ে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। সব জাতিসত্তার অংশগ্রহণে এবারের শোভাযাত্রায় নতুন রং, গন্ধ ও সুর পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে জাতীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপন নিয়ে সভা শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। তিনি বলেন, এবার চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হবে, এতে সত্যিকার অর্থেই নতুন জিনিস দেখা যাবে। এই শোভাযাত্রা হবে বাঙালি, চাকমা, মারমা, গারো– প্রত্যেকের। এ জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি প্রথমে আনন্দ শোভাযাত্রা নামে শুরু হয়েছিল। পরে হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকে সবাই যদি একমত হয়, তবে আবার নাম পরিবর্তন হতে পারে। এবারের শোভাযাত্রাটি আর বাঙালিদের শোভাযাত্রা না। কেন্দ্রীয়ভাবে এটিকে ডাকা হবে, যে নামে সবাইকে একটা ছাতার মধ্যে আনা যায়।
মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ইউনেস্কো আগামীবার জানবে এ শোভাযাত্রা আরও বড় হয়েছে, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়েছে। ইউনেস্কোর এটাতে খুশি হওয়ার কারণ হবে, আপত্তি করার কোনো কারণ নেই। আমরা বরং এতদিন অনেকগুলো জাতি-গোষ্ঠীকে মাইনাস করে এসেছিলাম। এটাকে সংশোধন করছি।’ অনুষ্ঠানটি পুনর্বিবেচিত হয়েছে, তাই এর নামটিও পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিভিন্ন আয়োজন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে রক কনসার্ট হচ্ছে। যেখানে চাকমা, গারো, মারমা ও বাংলা ব্যান্ড– সবাই পারফর্ম করবে। এ ছাড়া চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে বাউল ও ফকিররা গান গাইবেন। ওদের একটা উৎসব হবে সেখানে। ১৪ এপ্রিল সংসদ ভবনের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ড্রোন শোর আয়োজন করা হবে। চীনের দূতাবাসের সহযোগিতায় ড্রোন শো হবে। বিকেলে গান শুনবেন, সন্ধ্যার পর দেখবেন সংসদ ভবনের ওপর বাংলার আকাশের ড্রোন দিয়ে কিছু ইমেজ তৈরি করা হচ্ছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এবার ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সুরের ধারার গানের অনুষ্ঠান হবে। মেলার মতো আয়োজনও সেখানে করা হবে। ঢাকার নানান জায়গায় উৎসব ছড়িয়ে যাবে। সূর্যাস্তের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে– এবার আমাদের নির্দেশনা এটা না। কোন অনুষ্ঠান কখন শেষ হবে, সেটা স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা ঠিক করে নেবে।’ তিনি জানান, এবার প্রতিটি জেলা ও উপজেলার জন্য বরাদ্দ দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি যে জেলাগুলোতে ভিন্ন ভাষাভাষী লোকজন আছেন, সেগুলোতে বরাদ্দ আরও বেশি হবে।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, নববর্ষের আয়োজন নিয়ে কাল (আজ) বৈঠক হবে। নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় লাগবে। ঈদের ছুটি শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।