যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের লোহিত সাগর উপকূলে রাশিয়ার নৌঘাঁটি গড়তে ‘আর কোনো বাধা নেই’। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে খার্তুম।

নৌঘাঁটি স্থাপন নিয়ে একটি চুক্তির বিষয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সঙ্গে আলোচনা করেছিল রাশিয়া। তবে সামরিক অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। পরে সামরিক সরকার বিষয়টি পুনর্মূল্যায়নের কথা জানায়।

গত বুধবার সুদানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইউসিফ বলেন, চুক্তি সই হয়েছে। একটি ‘বন্দর’ স্থাপন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তাঁরা ‘পুরোপুরি একমত’ হয়েছেন। চুক্তিটি এখন শুধু অনুমোদন বাকি রয়েছে।

হর্ন অব আফ্রিকা উপকূলে আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ফ্রান্সের নৌবাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও বাণিজ্যিক পথ।

মস্কোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইউসিফ বলেন, ‘রাশিয়ার নৌঘাঁটির বিষয়ে চুক্তি নিয়ে সুদান ও রাশিয়া সমঝোতায় পৌঁছেছে। বিষয়টি সহজভাবে বলতে গেলে, আমরা সব বিষয়ে একমত হয়েছি।’

এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। এ নিয়ে লাভরভও কোনো মন্তব্য করেননি।

ওমর আল-বশির ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১৯ সালে চুক্তিটি নিয়ে প্রথমে আলোচনা হয়। সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ২০২০ সালে নভেম্বরে প্রাথমিক চুক্তি সই হয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগান্তি লাঘবে ব্যবস্থা লউন

গরমে বিদ্যুতের লোডশেডিং স্বাভাবিক ঘটনা হইলেও এইবার উহা অস্বাভাবিক হারে দেখা দিবার আশঙ্কা তৈয়ার হইয়াছে। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থ সংকটে জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হইবার কারণে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করিতে পারে। বিশেষত আসন্ন রমজান মাসে গরম বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাইবে। তৎসহিত সেচ মৌসুম যুক্ত করিলে ধারণা করা কঠিন নহে, মার্চ-এপ্রিল হইতে বিদ্যুতের চাহিদা হইবে দেড় গুণ। অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করিলেও উহা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নহে। 

বিশেষ করিয়া অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করিতে হইলে বেসরকারি খাত হইতে বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি। কিন্তু ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে সরকারের বিপুল ঋণ রহিয়াছে। সেই কারণে অর্থ সংকটে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা প্রাথমিক জ্বালানি ফার্নেস অয়েল ও কয়লা আমদানিতে হোঁচট খাইতেছে; গ্যাস খাতের পরিস্থিতিও তথৈবচ। বকেয়া ও ডলার সংকটে এলএনজি আমদানি ব্যাহত হইতে পারে। অন্যদিকে দেশীয় উৎস হইতেও গ্যাসের জোগান হ্রাস পাইতেছে। সকল কিছু মিলাইয়া এইবার গরমে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িবে, উহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না।

ইহা স্পষ্ট, সরকার জ্বালানি সাশ্রয় নীতির উপর গুরুত্ব দিয়াছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ইতোমধ্যে সতর্ক করিয়াছেন, আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র-এসি ব্যবহার করিলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, তৎসহিত আইনগত ব্যবস্থাও লওয়া হইবে। সরকারের হিসাব অনুসারে, এসির কারণে প্রায় চার সহস্র মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হইয়া থাকে, যথায় উহার তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ব্যবহার করিলে অন্তত দুই সহস্র মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব হইবে। এই লক্ষ্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান করিবেন, ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা মসজিদের ইমামদের অনুরোধ করিবেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সচিবালয়সহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরে এই নীতি কার্যকর করিবেন।

আমরা মনে করি, জ্বালানি সাশ্রয়ের এই নীতি নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী এবং মানুষ যাহাতে এই ক্ষেত্রে সচেষ্ট থাকে তজ্জন্য বিদ্যুৎ অপচয় রোধেও বৎসরব্যাপী সরকারকে প্রচার-প্রচারণা চালাইতে হইবে; কেবল জ্বালানি সাশ্রয়ের নীতি গ্রহণে বিদ্যুতের সংকট কাটিবে না। রমজান মাস হইতে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করিতে হইলে উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নাই। জ্বালানি উপদেষ্টা সরকারের আর্থিক সংকটের কথা স্বীকার করিয়াছেন বটে, তবে এই লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কার্যকর ভূমিকা রাখিবে বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। ইতিপূর্বে আমরা দেখিয়াছি, গ্রামে ভয়াবহ লোডশেডিং হইলেও শহরবাসী বেশি সুবিধা ভোগ করিত। এইবার সরকার শহর ও গ্রামে সমান হারে এই লোডশেডিং বণ্টন করিবার ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছে। আমরা চাই, এই ক্ষেত্রে রুটিন করা হউক; কোথায় কখন বিদ্যুৎ যাইবে সেইভাবে রুটিন মানিলে উহাতে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা হ্রাস পাইবে।

অস্বীকার করা যাইবে না, গত সরকারের জ্বালানি খাতের ভুল নীতির প্রভাব অন্তর্বর্তী সরকারের উপরেও পড়িয়াছে। জ্বালানি খাতের নিরাপত্তায় দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করিবার বিকল্প নেই। কিন্তু আসন্ন রমজান মাস ও সেচ মৌসুমের কথা চিন্তা করিয়া সরকারকে আপাত ব্যবস্থারূপে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করিতে জ্বালানি আমদানি করিতেই হইবে। মনে রাখিতে হইবে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি না করিলে শিল্প উৎপাদনও ব্যাহত হইবে। তজ্জন্য জ্বালানি চাহিদার আলোকে জরুরি ভিত্তিতে জোগান দিতে সরকারকে সচেষ্ট হইতে হইবে। ইহাকে অগ্রাধিকার দিয়া এখনই ব্যবস্থা লওয়া জরুরি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ