যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পর প্রথম ওয়াশিংটন সফর করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এ বৈঠক নিয়ে বেশ কিছুদিন তুমুল আলোচনা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি ছিল বেশ সংযত; অগ্রাধিকার পেয়েছে বাণিজ্যিক বিষয়গুলো।

বৈঠকের পর ২০২৫ সাল অর্থাৎ চলতি বছর থেকে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির পরিসর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ–৩৫। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানির ঘোষণাও এসেছে। দুই পক্ষই একটি বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা এবং নতুন একটি প্রতিরক্ষাকাঠামো চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর আরেকটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তা হলো, নয়াদিল্লির চাওয়া অনুযায়ী তাহাবুর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তাহাবুর রানা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একজন ব্যবসায়ী। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় তাঁর হাত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বৈঠক নিয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে যে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা জারি রাখতে দুই পক্ষই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে বলে মনে হয়েছে, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়গুলো। যদিও ট্রাম্পের অধীনে অনেক বিষয়ই নতুনভাবে সামনে আসতে পারে।

এরপরও বড় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক মোদির ওয়াশিংটন সফর ঘিরে সামনে আসা গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয়—

ভারত কি ট্রাম্পের শুল্কের খড়্গ এড়াতে পারবে

নরেন্দ্র মোদি এমন সময় যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন, যখন বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেসব দেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে, তাদের পাল্টা জবাব দিতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।

ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির চেয়ে অনেক বেশি পণ্য দেশটিতে রপ্তানি করে ভারত। শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলো এড়াতে ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে শুল্ক গড়ে ১৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে ভারত কি আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে—তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছেন না নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (জিটিআরআই) প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব। তাঁর এ ধারণার পেছনে মূল কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে রপ্তানি করা ৭৫ শতাংশ পণ্যের ওপর ৫ শতাংশের কম শুল্ক দিতে হয়। অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর ১৫০ শতাংশের মতো অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এটা সবার জন্য আরোপ করবেন—এমন কিছু বলেননি। তাই পাল্টা শুল্ক নিয়ে ভয় পাওয়ার খুব কম কারণই ভারতের রয়েছে।

হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিনিয়োগ করুন, আপনারা তো আর সালমান এফ রহমান হতে পারবেন না’

বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ভয় না পাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী বাজেট এমনভাবে করা হবে, যাতে বেসরকারি খাত বিনিয়োগে উৎসাহী হয়।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনেক ব্যবসায়ীর মধ্যে ভয় কাজ করছে। তাঁদের অনেকে মনে করছেন, এখন বিনিয়োগ করলে পরে তাঁদের সমস্যা হতে পারে। তাঁদের উদ্দেশে বলছি, বিনিয়োগ করুন, আপনারা তো আর সালমান এফ রহমান হতে পারবেন না।’ তারপরও তাঁদের মধ্যে সংশয় আছে বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা সভায় অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকসহ অর্থ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ইআরএফের সভাপতি দৌলত আক্তারের নেতৃত্বে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সাধারণ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। দৌলত আক্তার ইআরএফের পক্ষ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিবেচনার জন্য ২৮টি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আগেও বলেছি, আগামী বাজেট হবে বাস্তবমুখী বাজেট। বিরাট কোনো আশ্বাস দেব না, যা বাস্তবায়ন করা যাবে না। স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এমন বাস্তবভিত্তিক প্রকল্প নেওয়া হবে। প্রকল্পগুলোতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের পরিমাণ হবে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা।’

কোনো স্তম্ভ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হবে না জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এক বছরে যা যা করতে পারব, তার উল্লেখ থাকবে। পদচিহ্ন হিসেবে আরও কিছু বিষয় থাকবে, যা পরের সরকারের মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। আর বাজেট বক্তব্য থাকবে ৫০ থেকে ৬০ পৃষ্ঠার। এতে কোনো বন্দনা করা হবে না।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা এবং ব্যবসাবান্ধব করা—এসব বিষয় বাজেট প্রণয়নে বিবেচনায় রাখা হবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। নতুন নতুন হাসপাতাল করার বদলে বিভিন্ন হাসপাতাল সম্প্রসারণের উদ্যোগ থাকবে বলেও জানান উপদেষ্টা। তিনি জানান, অপরাধসংক্রান্ত ঘটনা চিহ্নিত করতে একটি ফরেনসিক হাসপাতাল স্থাপন করা হবে।

কর ব্যবস্থা যৌক্তিক করা হবে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সেবা পাই না, তাই কর দেব না—এ ধরনের কথা অনেকেই বলে থাকেন। সব দেশেই করের হার কিন্তু বেশি।’ তিনি বলেন, অর্থবছর শেষে জুলাই মাসে গিয়ে যেন ‘এটা হলো না কেন, ওটা হলো না কেন’ ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন সবাই—আগামী বাজেটটি তেমনভাবে করা হবে।

ইআরএফের যত প্রস্তাব

ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করার সুপারিশ করেছে ইআরএফ। সংগঠনটি বলেছে, একজন ব্যক্তি ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে মুনাফার ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর কাটা হয়। আবার ব্যাংকের জমা স্থিতির ভিত্তিতে কাটা হয় আবগারি শুল্ক। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে অগ্রাধিকার দেওয়া, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ চেইনে বিদ্যমান সিন্ডিকেট ভাঙা ও সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, দরিদ্রদের সুরক্ষা দিতে খোলাবাজার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার উপকারভোগী ও ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ করে ব্যয় করার ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয় ইআরএফ।

ইআরএফ আরও বলেছে, দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের প্রতিটিতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মানসম্পন্ন একটি করে হাসপাতাল স্থাপন; ক্যানসারসহ দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা; পুলিশ, র‍্যাব, আনসার, কারা পুলিশ, জেলার, বিচারকসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের ঝুঁকিভাতা প্রত্যাহার করা; সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি; রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া; পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইনসহ মিডিয়ার করহার কমিয়ে আনা; কর ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও জবাবদিহি থাকা; বেনামি ব্যাংকঋণ বন্ধে রিটার্ন জমা ও ঋণ নেওয়ার সময় ব্যাংকের কাছে দেওয়া সম্পদ বিবরণীর তথ্য মিলিয়ে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ