ট্রাম্প-মোদি বৈঠকের আলোচিত ৫ বিষয়
Published: 14th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পর প্রথম ওয়াশিংটন সফর করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এ বৈঠক নিয়ে বেশ কিছুদিন তুমুল আলোচনা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি ছিল বেশ সংযত; অগ্রাধিকার পেয়েছে বাণিজ্যিক বিষয়গুলো।
বৈঠকের পর ২০২৫ সাল অর্থাৎ চলতি বছর থেকে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির পরিসর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ–৩৫। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানির ঘোষণাও এসেছে। দুই পক্ষই একটি বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা এবং নতুন একটি প্রতিরক্ষাকাঠামো চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর আরেকটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তা হলো, নয়াদিল্লির চাওয়া অনুযায়ী তাহাবুর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তাহাবুর রানা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একজন ব্যবসায়ী। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় তাঁর হাত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বৈঠক নিয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে যে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা জারি রাখতে দুই পক্ষই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে বলে মনে হয়েছে, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়গুলো। যদিও ট্রাম্পের অধীনে অনেক বিষয়ই নতুনভাবে সামনে আসতে পারে।
এরপরও বড় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক মোদির ওয়াশিংটন সফর ঘিরে সামনে আসা গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয়—
ভারত কি ট্রাম্পের শুল্কের খড়্গ এড়াতে পারবে
নরেন্দ্র মোদি এমন সময় যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন, যখন বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেসব দেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে, তাদের পাল্টা জবাব দিতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির চেয়ে অনেক বেশি পণ্য দেশটিতে রপ্তানি করে ভারত। শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলো এড়াতে ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে শুল্ক গড়ে ১৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে ভারত কি আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে—তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছেন না নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (জিটিআরআই) প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব। তাঁর এ ধারণার পেছনে মূল কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে রপ্তানি করা ৭৫ শতাংশ পণ্যের ওপর ৫ শতাংশের কম শুল্ক দিতে হয়। অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর ১৫০ শতাংশের মতো অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এটা সবার জন্য আরোপ করবেন—এমন কিছু বলেননি। তাই পাল্টা শুল্ক নিয়ে ভয় পাওয়ার খুব কম কারণই ভারতের রয়েছে।
হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেল শুধু আশ্বাসেই
ঢাকার সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পার হলেও এখনো নির্মাণ হয়নি কোনো ছাত্রীনিবাস। নানা সময় উচ্চারিত হয়েছে উন্নয়নের বুলি, সভা-সেমিনারে এসেছে প্রতিশ্রুতির পাহাড়—কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি নেই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ কিংবা নির্ধারিত সময়সীমা। ফলে নারী শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের পুরোধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর জন্য একটি বিকল্প ধারার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ফলশ্রুতিতে গবি গড়ে উঠলেও নারী শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজারেরও বেশি ছাত্রী অধ্যয়নরত, যাদের অধিকাংশ সবাই বাসা ভাড়া করে কিংবা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। আবাসন না থাকায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় থাকতে গেলে এসব শিক্ষার্থীদের গুণতে হয় প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারে শিক্ষার্থীদের উপর আলাদাই চাপ তৈরি হচ্ছে, যা বহন করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তাদের পরিবার।
পাশাপাশি রাতে চলাচলের ঝুঁকি, স্থানীয় বাড়িওয়ালা কর্তৃক হেনস্তার শিকার, ইভটিজিংসহ নানা অপ্রিতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিয়মিত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একাধিকবার আবাসন ব্যবস্থা ‘প্রক্রিয়াধীন’ বললেও তা নিয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।
পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অভাবেই হল নির্মাণে নীতিনির্ধারকেরা কালক্ষেপণ করছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আমিন বলেন, “আমার প্রতিদিনের যাত্রাটা যুদ্ধের মতো। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ৪০ কিমি দূরে। প্রতিদিন লোকাল বাসে চেপে আসতে হয়। কখনো বাসে উঠতে দেয় না, কখনো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, কখনো বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। নতুন এলাকায় বাসা খুঁজে থাকা কষ্টকর, পরিবারও চিন্তায় থাকে সারাক্ষণ। ক্লাসে মন দিতে পারি না। এ বয়সে বাসা ভাড়া, রান্নাবান্না, নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে জীবনটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা ছাত্রী হল থাকলে অন্তত এ লড়াইটুকু করতে হতো না।”
ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আহমেদ তন্বী বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, কিন্তু এর আগে আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্রী ছিলাম। জানি, মেয়েদের জন্য এখানে পড়তে আসা মানে প্রতিনিয়ত এক অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুদ্ধ। একটা সময় পরে মেয়েরা ক্লাস বাদ দেয়, টিউশন নেওয়া বাদ দেয়—শুধু নিরাপত্তার জন্য।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিশাল ক্যাম্পাসে জায়গার অভাব নেই, ইচ্ছার অভাবটাই বড়। ছাত্রীনিবাস শুধু দরকার নয়, এটি ন্যায্য অধিকার। এতে ছাত্রীরা নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে, দূর থেকে আরও শিক্ষার্থীরা আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা তাদের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “হলের জন্য স্থান সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাজগুলো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব।”
ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী