প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই হবে, কিন্তু যেনতেনভাবে নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। নির্বাচনের মত নির্বাচন চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তবে নির্বাচনের পূর্বে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। ভুয়া ভোটার বাদ দিতে হবে। মৃত্যুবরণকারী ভোটারের নাম বাদ দিতে হবে। ভোটারের যোগ্য হয়েছে এমন সকলকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, পরে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।

শুক্রবার বিকেলে নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া কালীকুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে নরসিংদী জেলা জামায়াত আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা.

শফিকুর রহমান বলেন, গত সাড়ে ১৭ বছর এ দেশের মানুষ ভীষণ কষ্টের মধ্যে ছিল। এই সময়ে অসংখ্য মানুষ খুন, গুম, অপহরণ ও আয়নাঘরের বাসিন্দা হয়েছেন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অযথা মামলায় ফাঁসিয়ে অনেককে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। অনেকে চাকরি-ব্যবসা হারিয়েছেন, অনেকের বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর বাড়তি জুলুম করা হয়েছে। এক এক করে জামায়াতের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। বিচারের নামে তামাশা করে কাউকে দেওয়া হয়েছে ফাঁসি, কাউকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুর দিকে।

তিনি আরও বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা তথা ইউনিয়ন কার্যালয়গুলো পর্যন্ত তালা বদ্ধ করে রেখেছে। জামায়াত একমাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো- ফ্যাসিবাদ আপাতত বিদায় নিয়েছে, কিন্তু নিবন্ধনটি আমরা এখনো ফিরে পাইনি। এখনো সেই নিবন্ধন ফিরে পেতে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়। আমাদের দেশপ্রেম ও ফ্যাসিবাদের কাছে মাথানত না করার কারণে আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমাদের নিবন্ধনটি ফ্যাসিবাদের পরিবর্তনের সাথে সাথে দিয়ে দেয়া উচিৎ ছিল। 

জামায়াত আমির বলেন, মিথ্যা মামলায় যত নেতৃবৃন্দকে আটক করা হয়েছিল, একে একে সকলেই মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়- বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলামকে এখনো মুক্তি পাননি। জনতার দাবি তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা জনগণের সম্পদ লুটে গত সাড়ে ১৫ বছর আমাদের দেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে; তারা এ দেশকে নিজের দেশ মনে করে না। তারা রাজনীতি করে বাংলাদেশে, বউ-বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বিদেশে। কানাডায় তারা বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ তারা চুরি করে নিয়ে গেছে, অথচ তারা অন্যদেরকে চোর বলতো। শেখ হাসিনা সকল চোরদের মা, এবার মাও পালিয়েছে, চোরেরাও পালিয়েছে। 

শেখ হাসিনার সময়ের বিচার ব্যবস্থার সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, হাসিনার সময়ে বিচারকরা আদালতে বসে বিচারের নামে একেকজনের বিরুদ্ধে হত্যা রায় দিয়ে, রাতে গিয়ে টেলিভিশনের টকশোতে বসে গর্ব করে বলতো ‘আজকে নিজামীকে, কালকে গোলাম আজমকে, পরশুদিন সাঈদিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে এসেছি। এদের মধ্যে কেউ কেউ বলতো, আমরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। বিচারকের চেয়ারে বসে যারা রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে জাতির কলঙ্ক। সে বিচারক হতে পারে না। তিনি নরসিংদীর জনগণের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে নরসিংদীতে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান। 

নরসিংদী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মো. মোছলেহুদ্দীনের সভাপতিত্বে ও নরসিংদী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় আয়োজিত এ জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আ ফ ম আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আবদুল জব্বার, মাওলানা আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, মুফতি রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মকবুল হোসেন, আজম রুহুল কুদ্দুস, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, মাওলানা মমিনুল হক, হাফেজ আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র নরস দ ইসল ম র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ফ্রন্টের নতুন কমিটি

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৯ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইভান তাহসীব ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন একই শিক্ষাবর্ষের শামসুল আলম মারুফ।

বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনে ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৩তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি ইভান তাহসীব বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

কমিটিতে সহসভাপতি হয়েছেন খাদিজা তুল কুবরা, সাংগঠনিক সম্পাদক আপেল আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক তৌকির আহমেদ, অর্থ সম্পাদক সিদ্ধার্থ কুমার রায়, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খিজির আল সিফাত, স্কুলবিষয়ক সম্পাদক পল্লব কুমার, সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক জুনায়েদুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক সাজু আহমেদ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক দীপংকর রায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আহাম্মদ নাঈম। কার্যকরী সদস্য ফারিহা তাসনিম, মিশকাতুল জামান, তাজুল ইসলাম, সৌরভ আহমেদ, তাজ‌ওয়ার ইসলাম, নাজিব মাহমুদ ও রিয়াদ সরকার।

কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।

কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির স্কুলবিষয়ক সম্পাদক দীপা মজুমদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ