প্রবল ভালোবাসাই পারে সমাজকে বৈষম্য থেকে মুক্ত করতে: আনু মুহাম্মদ
Published: 14th, February 2025 GMT
ভালোবাসা যত প্রবল হবে; ভালোবাসাবিরোধী, মানুষবিরোধী, প্রাণ-প্রকৃতিবিরোধী শক্তিগুলো তত দুর্বল হবে। প্রবল ভালোবাসাই এই সমাজকে শোষণ, নিপীড়ন ও বৈষম্য থেকে মুক্ত করতে পারে।
আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজিত বসন্ত উৎসবে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমগীতের’ উদ্যোগে প্রতিবছরের মতো এবারও বসন্ত উৎসবের আয়োজন হয়। ‘এসো জুলাইয়ের চৈতন্যে গড়ি বৈষম্যহীন সংস্কৃতির জমিন’ স্লোগানে আয়োজিত এবারের বসন্ত উৎসব জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। এবারের আয়োজনের শিরোনাম ‘জুলাই অভ্যুত্থান আমার দ্রোহ ভালোবাসার গান’।
অনুষ্ঠানে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ভালোবাসার বিস্তার ঘটুক। আমাদের সংস্কৃতি আরও বেশি ভালোবাসাকে ধারণ করুক। মানুষের প্রতি ভালোবাসা অমানুষের বিরুদ্ধে লড়াইকে শক্তিশালী করুক।’
আয়োজনের শুরুতে বেহালায় রাগ বৃন্দাবনী সারং–এর সুর তোলেন বিদ্যুৎ সরকার ও পিয়াস আকবর। অনুষ্ঠানে আদিবাসী বোতলনাচ পরিবেশন করেন সাচিং মং মারমা। সমগীতের কিশোর ব্যান্ড গঙ্গাফড়িং গান পরিবেশন করে।
আয়োজনের বিশেষ পর্বে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে ‘সমগীত শ্রদ্ধার্হ্য’ নিবেদন করা হয়। এই পর্বে আলোচক ছিলেন নিউজ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে ‘সমগীতের’ পক্ষ থেকে ‘শ্রদ্ধার্হ্য পত্র’ দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানদের ফিরিয়ে দিন হাত জোড় করছি
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে।
আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।