চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে অমর একুশে বইমেলা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। 

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ছুটির দিনে মেলায় বাড়বাড়ন্ত ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। লেখক, পাঠক, সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ মেলায় ভিড় জমিয়েছেন। বিকেলের পর থেকে স্টলগুলোর সামনে দীর্ঘ সারি, লেখকদের সঙ্গে আড্ডা, অটোগ্রাফ সংগ্রহ, সেলফি এবং মুখরোচক খাবারের আয়োজন মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।

মেলায় শিশুদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। মা-বাবা বা শিক্ষকের হাত ধরে বইমেলায় আসছে ছোট্ট সোনামনিরা। শিশুতোষ বইয়ের বিক্রি বাড়ছে, পাশাপাশি গল্প-উপন্যাসের বইও পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে, কবিতার বইয়ের বিক্রি তুলনামূলক কম থাকলেও কবিতাপ্রেমীরা স্টল ঘুরে দেখছেন।

এবারের বইমেলায় মোট ১৪১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্য, ইউপিএল, কথাপ্রকাশ, অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, ঝিনুক, গ্রন্থরাজ্য, অ্যাডর্ন, শিখা, সিয়ান, জ্ঞানকোষ, বেঙ্গল বুকস, পাঞ্জেরী, স্বাধীন, মনন, বিদ্যানন্দ, তৃতীয় চোখ, রোদেলা, আদর্শ, জলধি, কিংবদন্তীসহ দেশবরেণ্য অনেক প্রকাশনা সংস্থা। ইসলামিক বইয়ের মধ্যে তরজুমান, দ্বীন দুনিয়া, মাইজভাণ্ডারী, আলোকধারা, রাহনুমা, মাকতুবাতুল আসলাফ, রুহানা, আয যিহান ইত্যাদির স্টলে ভক্তদের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

চট্টগ্রামের প্রকাশনা সংস্থার বিশেষায়িত স্টলগুলোর মধ্যে স্বাধীন, খড়িমাটি, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র, জিয়া স্মৃতি পাঠাগার উল্লেখযোগ্য।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি ও বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন হাসান বাবু বলেন, “মেলায় প্রতিদিন পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে, বিশেষ করে ছুটির দিনে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সামনের দিনগুলোতেও এই ভিড় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাঠকদের মধ্যে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গবেষণা, শিশুতোষ, ক্যারিয়ার ও মোটিভেশনাল বইয়ের চাহিদা বেশি। প্রকাশকরাও বেশ সন্তুষ্ট। কারণ, বই বিক্রি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হচ্ছে।”

গত ১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের ব্যবস্থাপনায় অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এক লাখ বর্গফুটজুড়ে বিস্তৃত এ বইমেলা চট্টগ্রামের সংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য হয়ে উঠেছে এক মহামিলনের কেন্দ্রস্থল।

আগামী দিনগুলোতে পাঠক-দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আয়োজকদের আশা। বইপ্রেমীরা মেলায় এসে প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহের পাশাপাশি নিজেদের জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছেন।

ঢাকা/রেজাউল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বইয় র বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লার বিজয়পুরের যে হাটে অর্ধশত বছর ধরে বিক্রি হয় ‘শ্রম’

সোমবার বেলা ১১টা। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে বিজয়পুর রেলগেট এলাকায় যেতেই চোখে পড়ল কয়েক শ মানুষের জটলা। সেখানে কেউ ক্রেতা, কেউ বিক্রেতা। একটু কাছে যেতেই চোখে পড়ল ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দর-কষাকষি চলছে। তবে সেখানে কোনো পণ্য নেই, এরপরও বেচাকেনা যেন জমজমাটভাবেই চলছে। কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, এখানে বিক্রি হয় মানুষের শ্রম।

সেখানে থাকা ব্যক্তিদের কারও হাতে কাঁধের ভার, আবার কারও হাতে কাস্তে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ‘শ্রম বিক্রি’ করতে এসেছেন তাঁরা। বর্তমানে বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে। এই সময়ে ‘শ্রম বিক্রির হাট’ জমজমাট হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর বাজার লাগোয়া রেলগেট এলাকার এই শ্রম বিক্রির হাট অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। বোরো ধান রোপণ ও কাটার সময় শ্রমিকদের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ফলে বোরো মৌসুমসহ বছরের বিভিন্ন সময়ে এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকেরা আসেন। হাটে কুমিল্লা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে গৃহস্থরা আসেন কৃষিশ্রমিক নেওয়ার জন্য।

হাটে আসা বিজয়পুর এলাকার গৃহস্থ আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ি পাশের এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই এখানে মানুষের হাট দেখে আসছি। এই হাটে সারা বছরই লোক বিক্রি হয়। তবে বর্তমানে ধান কাটার সময়ে লোকের দাম বেশি। যেমন আজকে লোক নিলাম ৯০০ টাকা দিয়ে। তাঁর থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি তিন বেলা খাবার দিতে হবে। সেই হিসাবে একজন শ্রমিকের পেছনে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা খরচ পড়বে, যা অনেক বেশি।’

বোরো ধান কাটার সময়ে চাহিদা বেশি থাকায় মজুরি বেশি হয়। এতে খুশি শ্রমিকেরা। অন্যদিকে গৃহস্থরা বলছেন, কৃষিশ্রমিকদের এক দিনের খরচ প্রায় দেড় মণ ধানের দামের সমান।

বোরো মৌসুমসহ বছরের বিভিন্ন সময় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর বাজার লাগোয়া রেলগেট এলাকার এই শ্রম বিক্রির হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকেরা আসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুমিল্লার বিজয়পুরের যে হাটে অর্ধশত বছর ধরে বিক্রি হয় ‘শ্রম’