কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে চার বাংলাদেশিকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বিরুদ্ধে। এতে সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়।

আজ শুক্রবার দুপুরে উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের বালারহাট সীমান্তের ৯৩০ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার পশ্চিম বালাটারী গ্রামের সামছুল আলম (৬০), জাবেদ আলী (৫৫), তাজুল ইসলাম (৪০) ও কাসেম আলী (৫০)। তাঁরা সবাই পশ্চিম বালাতাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।

লালমনিরহাট ১৫ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাকিল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওই ঘটনায় সীমান্তে কিছু বাংলাদেশি জড়ো হওয়ার উত্তেজনা তৈরি হয়। ঘটনার বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমরা কাজ করছি। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে অপেক্ষা করতে হবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিএসএফের পিটুনিতে আহত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ দুপুরে নামাজের পর সামছুল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার ২০০ থেকে ৩০০ গজ অভ্যন্তরে বসে ছিলেন। এ সময় হঠাৎ ১০ থেকে ১২ জন বিএসএফ সদস্য আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখার ৯৩০ নম্বর পিলার পার হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে সেখানে বসে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যেরা বন্দুকের পেছনের অংশ দিয়ে সামছুলকে আঘাত করে। এতে তাঁর ডান হাত ফেটে যায়। পরে তিনি এলাকায় ফিরে ঘটনাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জানান। পরে এলাকাবাসী সেখানে গিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিএসএফ সদস্যদের ধাওয়া দেয়। এ সময় বিজিবি একটি রাবার বুলেট ছোড়ার পাশাপাশি কয়েকজন বাংলাদেশিকে মারধর করে। এতে অন্তত ৩ জন আহত হন।

খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার গোরকমণ্ডল বিজিবি ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের শান্ত করে শূন্যরেখা থেকে ফিরিয়ে আনেন। তবে ভারতীয় সীমান্তে এখনো বিএসএফ সদস্যেরা কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে ও ভেতরে সজ্জিত থাকায় সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আশিক আহমেদ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা আজ বিকেলের দিকে বলেন, ‘এখনো বিএসএফ ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের ভেতরে যায়নি। বর্ডারের ওপারে ৪টি বড় ভারতীয় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তো ভারতীয় সীমান্তে যাইনি। তাঁরা বাংলাদেশের ভেতর এসে আমাদের এলাকার মানুষকে মারধর করে গেছে। এ ঘটনায় এলাকার লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁরা রাবার বুলেট ছুড়েছে। পরে বিজিবির কয়েকজন সদস্য এসে বাংলাদেশি নাগরিকদের শূন্যরেখা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।’

বিএসএফ এর বন্দুকের আঘাতে আহত সামছুল আলমের ছেলে জিহাদ হোসেন জানান, ‘শুক্রবার নামাজের পর তাঁর বাবা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে বসে ছিলেন। বিএসএফের সদস্যেরা তাঁকে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে আহত করে। বিএসএফের বন্দুকের আঘাতে ডান হাত ফেটে যায়। আমরা তাঁকে বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এসএফ র বন দ ক সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে জেলেদের ওপর বিএসএফের হামলা

বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে প্রবেশ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা একদল জেলের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্তবর্তী কালিন্দি নদীর বয়ারসিং সংলগ্ন উলোখালীর চর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

এসময় জেলেদের মারধর করে তাদের দু’টি নৌকা বিএসএফ সদস্যরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা। 

হামলার সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া জেলেরা সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে লোকালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন বলে দাবি তাদের স্বজনদের।

বিএসএফের হামলার শিকার জেলেরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের মোহাম্মদের ছেলে রমজান, শাহাজান, ফরেজ গাজীর ছেলে শাহাদাৎ, শাহাজান, আতাউর, সৈয়দ গাজীর ছেলে আব্দুল, মানিকপুর গ্রামের কেরামত ও কৈখালীর নুর মোহাম্মদ। 

ঘটনার শিকার শাহাদাৎ হোসেন জানান, পশ্চিম সুন্দরবনের কৈখালী স্টেশন থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে চারদিন আগে তারা সুন্দরবনে যান। তিনটি নৌকার ১২ জন জেলে দু’দিন ধরে বাংলাদেশের সীমানাভুক্ত উলোখালীর চরে পাটা জাল পেতে মাছ ধরছিলেন। একপর্যায়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দু’টি স্পিডবোট নিয়ে বিএসএফ সদস্যরা আকস্মিকভাবে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের মারধর শুরু করেন।

শাহাদাৎ হোসেন আরও বলেন, এসময় তারা পেতে রাখা জাল ও সেখানে থাকা নৌকা ফেলে বনের মধ্যে ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। এসময় জাল একইভাবে পাতা থাকলেও নৌকা দু’টি নিয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত বিএসএফ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। বর্ডার এলাকায় মাছ ধরতে যাওয়ার কারণে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে।

স্থানীয় রমজাননগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ লাল্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিএসএফের মারধরের শিকার আট জেলের মধ্যে ছয়জন তার এলাকার। বিএসএফ নৌকা নিয়ে উলোখালীর চর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ায় তারা উপায়ন্তর না পেয়ে পায়ে হেঁটে বনের মধ্য দিয়ে লোকালয়ে ফিরছেন। পরে বেশি লোকজন ও নৌকা নিয়ে গিয়ে সেখানে পেতে রাখা জাল উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। জেলেরা এলাকায় ফিরলে বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের জানানো হবে।

এ বিষয়ে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান জানান, এখনো কেউ বিষয়টি তাদের অবহিত করেনি। খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিজিবি কৈখালী ক্যাম্পের সুবেদার আবু বক্কার জানান, স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বিষয়টি তাদের অবহিত করেছেন। ঘটনাটি বয়ারসিং এলাকার হওয়ায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ জানাতে সেখানকার বিজিবি (রিভারাইন) ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে জেলেদের ওপর বিএসএফের হামলা