বরেন্দ্রর রুক্ষ ভূমিতে ফুটছে সাফল্যের ফুল
Published: 14th, February 2025 GMT
একসময় বরেন্দ্র অঞ্চলের রুক্ষ ভূমিতে বছরে একবার ধান চাষ ছাড়া অন্য ফসল ফলানোর স্বপ্নও দেখতেন না কৃষকরা। এখন কিছু জায়গায় আমের বাগান হলেও অধিকাংশ জায়গায় ধান ছাড়া অন্যান্য ফসল তেমন হয় না। সেই ঊষর বরেন্দ্র ভূমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন সাদিকুল ইসলাম টুটুল নামের এক উদ্যেক্তা। আগামীতে টিউলিপসহ বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ফুল চাষ করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এজন্য কৃষি অফিস থেকে বরাদ্দ পেয়েছেন সরকারি পলিনেট হাউজ। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমের রাজধানীতে দেশি-বিদেশি ফুল চাষে বিপ্লব ঘটবে, এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বংপুর গ্রামের বাসিন্দা সাদিকুল ইসলাম টুটুল। ভিন্ন কিছু করে চমক দেখানোর স্বপ্নে ২০১৭ সালে কয়েক বিঘা জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগুলো রপ্ত করে ফুল চাষে সফলতা লাভ করেন তিনি। তখন থেকেই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ফুল সরবারহ শুরু করেন। সবকিছু ঠিক চলছিল, তবে ২০১৯-২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির সময় ফুল বিক্রি করতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তিনি তখন ১৫ বিঘা জমির গোলাপ, গাদাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল বিক্রি করতে পারেননি।
তারপরও থেমে থাকেননি সাদিকুল ইসলাম টুটুল। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারো ১০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন তিনি। তারপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তার ফুলবাগানে কাজ করেন কয়েকজন যুবক। টুটুলের সাফল্য দেখে ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।
এবার ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও ২১ ফেব্রুয়ারিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে কয়েক রকমের গোলাপ, গাদা, জারবেরা উৎপাদন করেছেন টুটুল। কয়েক লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সাদিকুল ইসলাম টুটুলের ফুলবাগানে কাজ করে তাদের বেকারত্ব ঘুচেছে। এখন তারাও পরিবার নিয়ে ভালো আছেন।
ফুল চাষে আগ্রহী আশিকুজ্জামান বলে, “বরেন্দ্র অঞ্চলে আগে বছরে শুধু একবার ধান চাষ হতো। তারপর শুরু হয় আম চাষ। এখন ফুল চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন সাদিকুল ইসলাম টুটুল। কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা পেলে আমের রাজ্যে দেশি-বিদেশি ফুল চাষে বিপ্লব ঘটবে।”
সাদিকুল ইসলাম টুটুল বলেন, “আমাদের জেলায় ফুল চাষ তেমন হয় না। নতুন কিছু করার উদ্দেশ্যে ৭ বছর আগে স্বল্প পরিসরে ফুল চাষ শুরু করি। মাঝে করোনার সময় ১৫ বিঘা জমির ফুল বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তারপরও থেমে থাকিনি। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেই আবারও ফুল চাষ করেছি। এখন ৫ বিঘা জমিতে গোলাপ, দেড় বিঘায় গাদা ফুলসহ সব মিলিয়ে ১০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করছি।”
তিনি আরো বলেন, “ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ, ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বাগানে গোলাপ, গাদাসহ কয়েক ধরনের ফুল চাষ করেছি। এবার কয়েক লাখ টাকা লাভ করার আশা করছি।”
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেছেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জের একমাত্র ফুলচাষি সাদিকুল ইসলাম টুটুল। তিনি কয়েক বছর ধরেই ফুল চাষ করছেন। ভালোবাসা থেকেই তিনি ফুল চাষে আগ্রহী হয়েছেন। উন্নত মানের ফুল চাষের জন্য তাকে একটি পলিনেট হাউজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানে তিনি জারবেরা ও টিউলিপ চাষ করবেন। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ওনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি এবং তাকে পরামর্শ দিয়ে থাকি।”
তিনি আরো বলেন, “যেহেতু, সাদিকুল ইসলাম ফুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন, তাহলে বলা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি ফুল চাষের জন্য উপযুক্ত। ফুল চাষ করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হন না। সাদিকুল ইসলাম উদ্যোক্তাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ ক ল ইসল ম ট ট ল ফ ল চ ষ কর বর ন দ র স ফল য ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হটলাইন চালুর ঘোষণা পুলিশের
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জরুরি যোগাযোগের জন্য হটলাইন সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। হটলাইন নম্বরে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে নিরাপত্তাজনিত যেকোনো সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো এবং দ্রুত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
সম্প্রতি গাজায় হামলা নিয়ে বিক্ষোভের সময় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইজিপি ও বিডা চেয়ারম্যান। বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল– নেসলে বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো ও জুবিল্যান্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শহরে এসব কোম্পানির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মামলা হয়েছে।
বৈঠকে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ‘আইজিপি, জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ও বিডার কর্মকর্তাদের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসা শুধু সময়োপযোগী নয়, নজিরবিহীন। এটি কেবল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এটি এক ধরনের বার্তা যে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পাশে আছে, বিশেষ করে যখন চ্যালেঞ্জ আসে।’
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কর্মজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকার উৎস। প্রতিবাদের অধিকার আছে, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়। পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন বিডা চেয়ারম্যান।
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ভাঙচুর, ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রমে বিঘ্ন নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আইজিপি বাহারুল আলম বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এখানে আসিনি, বরং আস্থা গড়ে তুলতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই এসেছি।’
এ আলোচনার ফলে বিডা, পুলিশ ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, দ্রুত সাড়া দেওয়া ইউনিট এবং সংকটকালে উন্নত যোগাযোগ চ্যানেল।