পাকিস্তানে শ্রমিক বহনকারী গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ, নিহত ১০
Published: 14th, February 2025 GMT
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেলুচিস্তান প্রদেশের হারনাই এলাকায় শ্রমিকদের বহনকারী একটি গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হারনাই এলাকায় যাওয়ার সময় শ্রমিকদের বহনকারী ট্রাকটিতে একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) এ আঘাত হানে।
দেশটির ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা শাহজাদ জাহরি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, “হারনাই জেলায় এক হামলায় ১০ খনি শ্রমিক নিহত হয়েছেন।”
আরো পড়ুন:
জয়ের পর জরিমানা গুনলেন পাকিস্তানের তিন ক্রিকেটার
পাকিস্তানের নৌ মহড়ায় বাংলাদেশসহ ৬০ দেশ
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা সালিম তারিনও এএফপিকে বলেন, “শ্রমিকরা বাজারে যাওয়ার পথে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।”
আধাসামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “রাস্তার পাশে একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস পুঁতে রাখা হয়েছিল। কয়লা খনি শ্রমিকদের বহনকারী ট্রাক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সেটি বিস্ফোরিত হয়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, “এটি দূরবর্তী চালিত ডিভাইস হতে পারে।”
সূত্র: আল জাজিরা
ঢাকা/এসবি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রীলঙ্কায় হাতিদের প্রথম ‘অনাথ আশ্রমের’ সুবর্ণজয়ন্তীতে ফলের বড় ভোজ
শ্রীলঙ্কায় হাতিদের প্রধান ‘অনাথ আশ্রমের’ ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত রোববার এদের জন্য ফলের এক বিশাল ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। আশ্রমটি বিশ্বে এ ধরনের প্রাণীদের প্রথম সেবাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
‘অনাথ আশ্রম’টির নাম পিন্নাওয়ালা এলিফ্যান্ট অরফানেজ। পর্যটকদের কাছে এটি অন্যতম একটি আকর্ষণের জায়গা। গত রোববার এ আশ্রম প্রাঙ্গণ কলা, তরমুজ ও শসায় ভরে গিয়েছিল।
প্রতিদিন এ আশ্রমের হাতিগুলোকে নদীতে নিয়ে গোসল করানো হয়। রোববারও এদের গোসলের জন্য নদীতে নেওয়া হয়। আশ্রমে থাকা চার প্রজন্মের হাতি নিকটবর্তী মহা ওয়া নদীতে গোসল করে। সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে আমন্ত্রিত কয়েকজন কর্মকর্তা এবং পর্যটককে দুধভাত ও ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পরিবেশন করা হয়।
আশ্রমটির প্রধান কিউরেটর সঞ্জয়া রত্নানায়েকে বলেন, ‘১৯৮৪ সালে এ অনাথ আশ্রমে প্রথম হস্তীশাবকের জন্ম হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭৬টি হাতির জন্ম হয়েছে।’ তিনি এ উদ্যোগকে একটি সফল প্রজনন কর্মসূচি বলেও উল্লেখ করেন।
সঞ্জয়া রত্নানায়েকে আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের এখানে চার প্রজন্মের হাতি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোটটির বয়স ১৮ মাস ও বড়টির বয়স ৭০ বছর।’
২০২১ সালের আগস্টে আশ্রমটিতে প্রথমবারের মতো যমজ হস্তীশাবক জন্ম নেয়। এশীয় হাতির ক্ষেত্রে যমজ শাবক জন্মানোর ঘটনা বিরল। দুটো হস্তীশাবকই ভালো আছে।
১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাতির ‘অনাথ আশ্রম’টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দুই বছর আগে থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেনটোটার একটি ছোট সেবাকেন্দ্রে পাঁচটি অনাথ হাতিকে লালন–পালন করা হচ্ছিল।
রত্নানায়েকে বলেন, ‘১৯৭৫ সালে পিন্নাওয়ালায় একটি নারকেলবাগানে আশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই প্রাণীরা বিচরণের জন্য আরও বেশি জায়গা ও ভালো পরিবেশে পায়। আশপাশের এলাকায় তখন প্রচুর খাবারও পাওয়া যেত।’
হাতিদের ক্ষুধা মেটাতে এ আশ্রমে ১৪ হাজার ৫০০ কেজি নারকেল এবং পামসহ ও অন্যান্য গাছের পাতার প্রয়োজন হয়।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার (৫৬ মাইল) পূর্বে আশ্রমটির অবস্থান। সেখানকার কর্তৃপক্ষ হস্তীশাবকদের জন্য টন টন ফল ও দুধও কিনে রাখে। বিদেশি ও স্থানীয় দর্শনার্থীদের কাছে হস্তীশাবকগুলো খুব পছন্দের।
এ আশ্রম শ্রীলঙ্কার রাজস্ব আয়েরও অন্যতম বড় উৎস। সেখান থেকে প্রতিবছর প্রবেশ ফি হিসেবে লাখ লাখ ডলার আয় হয়। দর্শনার্থীরা দূর থেকে হাতিদের দেখতে পারেন, কাছেও আসতে পারেন। স্নানের সময় হাতিদের গা ঘষতে সাহায্য করতে পারেন তাঁরা।
সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আশ্রমে উপস্থিত হয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মাহুত কে জি সুমানাবন্দ। এএফপিকে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার সময় এ আশ্রমে পানি ও বিদ্যুতের অভাব ছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
হাতি লালন–পালনকারী হিসেবে তিন দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন সুমানাবন্দ। ৬০ জনের বেশি মাহুতকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। এখনো বিভিন্ন মন্দির ও অন্যান্য জায়গার হাতি লালন–পালনকারীরা তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকেন।
২০ বছর আগে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ দেশের দক্ষিণে আরেকটি হাতির আশ্রম খোলেন। সেখানে অনাথ, পরিত্যক্ত বা আহত হাতিদের যত্ন নেওয়া হয় এবং পরে এদের বনে ফেরত পাঠানো হয়।
পিন্নাওয়ালা আশ্রমটিকে অনেকে সফল এক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। এরপরও শ্রীলঙ্কায় বন্য প্রাণীদের ঐতিহ্যবাহী অভয়ারণ্যগুলোর সীমান্তবর্তী এলাকায় মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে।
পরিবেশ উপমন্ত্রী আন্তন জয়াকোড়ি রোববার এএফপিকে বলেন, ২০২৩ সালে এমন সংঘাতে ৪৫০টি হাতি মারা যায়। এ ছাড়া ১৫০ জন নিহত হন। আগের বছর ৪৩৩টি হাতি ও ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
শ্রীলঙ্কায় হাতি হত্যা বা হাতির ক্ষতি করা ফৌজদারি অপরাধ বলে বিবেচিত। দেশটিতে আনুমানিক সাত হাজার বন্য হাতি রয়েছে এবং সেখানে হাতিকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে হাতির গুরুত্ব থাকা এর একটি কারণ বলে মনে করা হয়।
তবে হাতি হত্যা থামছেই না। হাতি ফসলের খেত নষ্ট করে দেওয়ায় কৃষকেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। উপমন্ত্রী আন্তন জয়াকোড়ির দৃঢ় বিশ্বাস, নতুন সরকার গ্রামে হাতিদের প্রবেশ বন্ধ করে সমস্যাটি মোকাবিলা করতে পারবে।
আন্তন জয়াকোড়ি এএফপিকে বলেন, বন্য হাতিদের গ্রামে প্রবেশ করা কঠিন করে তুলতে তাঁরা বৈদ্যুতিক বেড়া, পরিখাসহ একাধিক বেষ্টনি তৈরির পরিকল্পনা করছেন।