ভালবাসা দিবসে বসন্ত উৎসব, সাগরপাড়ে পর্যটকের ঢল
Published: 14th, February 2025 GMT
আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন, একইসঙ্গে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দুই উপলক্ষকে উদযাপন করতে কক্সবাজারে সাগরপাড়ে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। সমুদ্রের ঢেউ আর ভালোবাসার আবেগ মিশে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো পর্যটক এই দিনে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে উপভোগ করছেন সমুদ্রসৈকতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের প্রধান তিন পয়েন্ট—কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণিতে গিয়ে দেখা গেছে, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অনেকেই ফুল, উপহার ও বেলুন হাতে সাগরপাড়ে সময় কাটাচ্ছেন। কেউবা হলুদ শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে মেতে উঠেছেন ছবি তোলার আনন্দে। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে চলছে বিশেষ আয়োজন। কফিশপ ও রেস্তোরাঁগুলোও দম্পতি ও তরুণ-তরুণীদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখর।
ঢাকা থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সানি শাহরিয়ার বলেছেন, “ভালোবাসার দিনটা বিশেষভাবে কাটাতে কক্সবাজারে এসেছি। সমুদ্রের ঢেউ আর প্রিয় মানুষ, সব মিলিয়ে দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
রাজশাহী থেকে আসা নবদম্পতি শাওন ও সানিয়া বলেন, “আমাদের বিয়ের পর প্রথম ভালোবাসা দিবস কাটাচ্ছি কক্সবাজারে। এখানে আসার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। সৈকতের বাতাস আর ঢেউয়ের শব্দ সময়টাকে আরো রোমান্টিক করে তুলেছে।”
কুমিল্লা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী আলী মোহাম্মদ বলেন, “শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই নয়, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে সময় কাটানো দারুণ ব্যাপার। শিশুরা আনন্দ করছে, আমরাও প্রকৃতির মাঝে একটুখানি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি।”
বিপুল পরিমাণ পর্যটকের উপস্থিতিতে খুশি পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, এ বছর বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের মিলিত উৎসবে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর আছে। বসন্তের বাতাস আর ভালোবাসার উষ্ণতা মিলিয়ে কক্সবাজারের পরিবেশ হয়ে উঠেছে স্বপ্নীল ও রঙিন।
হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেছেন, “বসন্তের শুরুতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল আমাদের জন্য ইতিবাচক। আশা করছি, গ্রীষ্মকালেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে, যা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে আরো চাঙ্গা করবে।”
সৈকতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিচকর্মী, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ডরা নিয়মিত কাজ করছেন।
বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন বলেছেন, “দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে আমরা রাত-দিন কাজ করছি। কোনো পর্যটক যাতে হয়রানির শিকার না হন এবং গভীর পানিতে নামার ঝুঁকি না নেন, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।”
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পর্যটন সেল) মো.
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স কত র বল ছ ন বসন ত
এছাড়াও পড়ুন:
এমন মানুষ জন্মেছিলেন বলে আমরা যেকোনো দুঃসময়ে দাঁড়িয়েও স্বপ্ন দেখতে পারি
বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্জীদা খাতুন আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান। একক পরিচয়ে সন্জীদা খাতুনের বহুমাত্রিক জীবনের পরিচয় দেওয়া যায় না। তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষক ও গবেষক, শিল্পী ও সংগীতজ্ঞ, দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় অধিকারকর্মী। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের শিল্প–সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি তাঁর সহযোদ্ধা, সহশিল্পী, শিক্ষার্থী ও গুণমুগ্ধরা শোক প্রকাশ করেন। তাঁকে নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ফারহীন খান জয়িতা। লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
সন্জীদা খাতুন, আমার মিনু নানু। আমার মায়ের বড় চাচি এবং মায়ের গুরু। কোনো এক অজানা কারণে তাঁকে আমি ভয় পেতাম। আর বরাবরই আমি একটু পালিয়ে বেড়ানো মানুষ। বড় মানুষদের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি। কিন্তু আমার সাথে তাঁর এক অদ্ভুত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল হঠাৎ, যখন আমি সিক্স কি সেভেনে পড়ি। মা আমাকে নিয়ে প্রায়ই যাওয়া শুরু করল মিনু নানুর বাড়িতে। ভয় তখন কাটতে শুরু করেছে একটু একটু। যেতাম, টুকটাক গান শিখতাম আর নানান রকম গল্প শুনতাম। প্রথম যে গানটি শিখিয়েছিলেন, সেটি হলো ‘দেশে দেশে ভ্রমি তব দুখ গান গাহিয়ে...’
তাঁর (সন্জীদা খাতুন) মুখ থেকে শুনলাম ছায়ানট গড়ে ওঠার গল্প। জানতে চাইলাম, ওই আমলে, ১৯৬১–৬২ সালের কথা, আমাদের নিজের দেশ হয়নি। রবীন্দ্রনাথের গান যখন নিষিদ্ধ করা হলো, তখন কী ভেবে ‘রবীন্দ্র জয়ন্তী’ করার সাহস হলো? গান গাইবার স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করার কথা মাথায় এলো কী করে? তার ওপর আবার তাঁর সরকারি চাকরি! এসব বিদ্রোহী কাজকর্মের জন্য তাঁকে ‘শাস্তিমূলক বদলি’ করা হয়েছিল ঢাকার বাইরে কোথাও। কোথায় এখন আর মনে পড়ছে না।
গল্পের মূল আকর্ষণ পয়লা বৈশাখ। ‘কেন? কী ভেবে?’ বললেন, মানুষের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব ছাড়া আর কিছু তখন ছিল না। একটা কিছু করতে হতো, যা সকল মানুষকে একটা সুতোয় বাঁধতে পারে। জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে! ১৯৬৭ সালে জায়গা খুঁজতে গিয়ে পেলেন রমনার অশ্বত্থগাছের মূল। কিন্তু তাঁরা নাম দিলেন বটমূল। সেটার কী একটা ব্যাখ্যা দিলেন, আজ পরিষ্কার মনে পড়ছে না। সেটা মুখ্য নয়।
মুখ্য হলো—সেই থেকে পয়লা বৈশাখ, একটা উৎসব, আপামর মানুষের হলো।