ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় নাসিমা আক্তার নামের নারীকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামে নিজের শয়নকক্ষ থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

নাসিমা আক্তার (৫০) আখাউড়ার আনন্দপুর গ্রামের মিজান মোল্লার স্ত্রী। তাঁর ছেলে সিয়াম মোল্লাকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটিটি জব্দ করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ ভোরে আনন্দপুর গ্রামে শয়নকক্ষের বিছানায় নাসিমা আক্তারের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে নিহতের লাশ উদ্ধার করে আখাউড়া থানায় নেওয়া হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মাছেলে সিয়ামকে আটক করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। সিয়ামের দেওয়া তথ্যমতে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটি, সিয়ামের পরনের রক্তাক্ত গেঞ্জি ও গলার তাবিজ জব্দ করেছে পুলিশ।

নাসিমার মেয়ে নাদিরা বেগম জানান, তাঁর ভাই মানসিক প্রতিবন্ধী। কয়েক দিন পরপর বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যেতেন। এ জন্য তাঁকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতেন মা। তবে তাঁর ভাই মাকে কখনো হত্যা করতে পারেন না। পুলিশের কাছে হয়তো সে ভয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুসা মিয়া বলেন, ওই নারীর স্বামী ও আরেক ছেলে ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে বিছানায় নাসিমার রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। তিনি বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সিয়াম প্রায়ই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন। তাঁকে বারবার ফিরিয়ে আনার ক্ষোভ থেকে মাকে তিনি হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ছমিউদ্দিন বেলা আড়াইটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে সিয়াম। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটি জব্দ করা হয়েছে। সিয়ামের পরনে থাকা গেঞ্জি ও তাবিজে মায়ের রক্ত লেগেছিল। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার থেকে এখনো কোনো মামলা করা হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় স ব ক র কর

এছাড়াও পড়ুন:

সড়ক অবরোধমুক্ত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে সেনাবাহিনী

সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করলে দেশের অর্থনীতিসহ সব সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সড়ক অবরোধমুক্ত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে সেনাবাহিনী। যত কম সময়ের মধ্যে মুক্ত করা যায়– এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিগত সময়ে শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। ৩১ বার বিভিন্ন মূল সড়ককে অবরোধ থেকে অবমুক্ত করেছে।  

কর্নেল শফিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৮২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। গত দুই মাসে নিয়ন্ত্রণ করেছে ২৩২টি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ৩৭টি, সরকারি সংস্থা ও অফিস-সংক্রান্ত ২৪টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৭৬টি এবং অন্য ঘটনা ৯৫টি। 

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্বও সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগে সেনাবাহিনী কোনো বাধা পাচ্ছে না। এই ক্ষমতা যেখানে যতটুকু ব্যবহারের দরকার, সেটা করা হচ্ছে। অপরাধী গ্রেপ্তারের পর অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পর বিচারকার্যে সেনাবাহিনীর কিছু করার থাকে না। 

গুজবে সেনাবাহিনী বিচলিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী একতাবদ্ধ হয়ে সরকারের নির্দেশে দেশ-জাতির পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সততা, ন্যায়নীতি, প্রত্যয় ও সহনশীলতার সঙ্গে এটি করা হচ্ছে। 

শফিকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগেও দেখেছেন মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে দীর্ঘ মিছিলে কালো পতাকাধারীদের রহিত করেছে সেনাবাহিনী। কালো পতাকাধারী হলেই জঙ্গি, এর প্রমাণ পাইনি। তবে এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী সোচ্চার আছে।  

সেনাপ্রধানের রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সফর নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্ধুপ্রতিম দেশে সেনাবাহিনী প্রধানের সফর একটি ‘রুটিন অ্যাফেয়ার’। সেখানে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে। বেশ কিছু মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি পরিদর্শন করেছেন। এতে আমাদের সামরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রগাঢ় হবে বলে বিশ্বাস করি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ