অজানা শত্রু, এক রাতেই মরা গেল ১২০০ মুরগি
Published: 14th, February 2025 GMT
দিনাজপুরের হিলিতে মুরগির খামারে বিষ দিয়ে ১ হাজার দুইশ পোল্ট্রি মুরগি নিধন করেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খামার পরিদর্শন শেষে বিষাক্ত কোনো কিছু প্রয়োগের কারণে মুরগিগুলো মারা গেছে বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভোররাতে হিলির দক্ষিণ বাসুদেবপুর মহিলা কলেজ পাড়ায় নোমান ও মুন্না নামে দুই ভাইয়ের খামারে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে জানা যায়, খামারে ১৫ দিন বয়সের প্রায় ২ হাজার পোল্ট্রি মুরগি ছিল। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত খামারের সব মুরগি সুস্থ দেখেছেন খামারের শ্রমিক রাশেদুল ইসলাম। শুক্রবার সকাল ৮টায় তিনি দেখতে পান প্রায় সব মুরগি মরে পড়ে আছে।
রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি এই খামারে অনেক দিন ধরে কাজ করছি। এখান থেকেই আমার সংসার চলে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে কয়েকবার মুরগিকে খাবার দিয়েছি। তখনও মুরগিগুলো সুস্থ ছিল। আজ সকাল ৮টার দিকে খামারে গিয়ে দেখি প্রায় সব মুরগি মরে পড়ে আছে।
এলাকাবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘নোমান ও মুন্না দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরে মুরগির খামার দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিল। আজ ভোররাতে কে বা কারা তাদের খামারের মুরগিগুলো মেরে ফেলেছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’’
খামারী মুন্না বলেন, ‘‘গতকাল রাত ৮টার সময় মুরগিগুলো আমি ভালো দেখে এসেছি। আজ সকালে খবর পেয়ে গিয়ে দেখি এই ঘটনা। রাতে খামারের সব পর্দা ফেলানো থাকে। সকালে কয়েক জায়গার পর্দা উঠানো ছিল। পর্দার পাশে বিষের গন্ধ পেয়েছি। আমার এতো বড় ক্ষতি কে করলো? আমি এর বিচার চাই।’’
এ বিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন, ‘‘মৃত মুরগির পোস্টমর্টেম করেছি। কোনো রোগের আলামত পাইনি। তবে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে বিষাক্ত কিছু প্রয়োগ করা হয়েছে। আমরা ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আলামত পাঠাবো, তার আগে কিছু বলা যাবে না।’’
মোসলেম//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১২০০ টাকার পোশাক ট্যাগ পাল্টে ২২০০
চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক ও থান কাপড়ের জন্য বিখ্যাত টেরিবাজার। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে বর্তমানে পোশাকের একাধিক নামি ব্র্যান্ডের দোকানও রয়েছে। শাড়ি থেকে শুরু করে লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, পাঞ্জাবিসহ ছোট-বড় সবার যাবতীয় পোশাক এক ছাদের নিচে পাওয়া যায়। তাই অনেকেই ছুটে যান এই ব্র্যান্ডের দোকানগুলোয়। অভিযোগ আছে, ক্রেতাদের বিশ্বাস ও আস্থাকে পুঁজি করে পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজিতে জড়িয়ে পড়েছে কিছু ব্র্যান্ড। কম দামের পোশাক বেশি দামে বিক্রি করতে কারসাজি করে পাল্টানো হচ্ছে ‘ট্যাগ’ (পণ্যের মূল্য)। কেনা দামের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়তি টাকা আদায় করতে দেশি পোশাকে নকল বিদেশি ব্র্যান্ডের ট্যাগও লাগানো হচ্ছে।
টেরিবাজারের সুপরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডশপের একটি মেগামার্ট। সম্প্রতি ওই ব্র্যান্ডশপে অভিযান চালিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি দেশি পোশাককে বিদেশি বলে বিক্রি করতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছে। পোশাকে কম দামের ট্যাগ উঠিয়ে কয়েক গুণ বাড়তি দামের ট্যাগ লাগানো হয়েছে। যেসব পোশাক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করার কথা; সেগুলোর কোনোটির গায়ে লাগানো হয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকার ট্যাগ। কোনোটির গায়ে আবার দাম লাগানো হয়েছে ৩ হাজার টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠানটি কম দামে পোশাক কিনলেও এর কোনো ভাউচার বা রসিদ দেখাতে পারেনি।
দেশি পোশাককে ভারতীয় দেখিয়ে মূল্য ট্যাগ পরিবর্তন করে বাড়তি দামে বিক্রির প্রমাণ পাওয়ায় গত ১৯ মার্চ মেগামার্টকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ মার্চ সেলিম পাঞ্জাবিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সেলিম পাঞ্জাবিতে গিয়ে অধিদপ্তর কর্মকর্তারা দেখতে পান, বেশি দামের পাশাপাশি পোশাকে লাগানো হয়েছে ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ ট্যাগ। দেশীয় কারখানায় তৈরি হওয়া এসব পাঞ্জাবির সর্বোচ্চ দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্ল্যাহ বলেন, ‘মেগামার্ট, সেলিম পাঞ্জাবির মতো কিছু বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান প্রতারণায় জড়িত। এর বেশ কিছু প্রমাণও পেয়েছি আমরা। কৌশল হিসেবে তারা নিজেদের কাছে পোশাক ক্রয়ের কোনো ভাউচার রাখে না।’
অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান বলেন, মেগামার্ট নিজস্ব কিছু পণ্য বিদেশি নামে বেশি দামে পোশাক বিক্রি করছে। এগুলো ভারতীয় ও পাকিস্তানি কাপড় বলা হলেও তারা কোনো নথি দেখাতে পারেননি। এক পর্যায়ে তারা স্বীকার করেন, সেগুলো দেশে তৈরি পোশাক।’
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সামান্য লাভে পোশাক থেকে শুরু করে ঈদের সব পণ্য বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। এর পরও কিছু প্রতিষ্ঠান মূল্য ট্যাগ পরিবর্তন, দেশি পোশাককে বিদেশি বলে বিক্রির অভিযোগ পাচ্ছি।’
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশীয় পোশাককে ভারতীয় হিসেবে দেখাচ্ছে। নামকরা ও বিশ্বস্ত অনেক প্রতিষ্ঠানও এমন প্রতারণায় জড়িত। এদের চিহ্নিত করে জরিমানার পাশাপাশি কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে।’