আওয়ামী লীগের বিচার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বান নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, সরকার, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো, দোসরদের প্রতি দয়া দেখাবেন না। সামাজিক, পারিবারিকভাবে তাদের বয়কট করুন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের একমাত্র সমাধান হলো, তাদের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যারা খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

শুক্রবার স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তি: জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

নাসির উদ্দীন পাটোয়ারীর বলেন, আমরা যদি আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলে এই নির্বাচনের আগেই সচেষ্ট না হই, তাহলে জনগণের সামনে গভীর সংকট অপেক্ষা করছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে খুনের দায়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দ্রুত তাদের নিবন্ধন বাতিল করুন। কারণ, খুনি হাসিনার বিচার এবং আওয়ামী লীগের ব্যানার এই দুটির সমাধান যদি আগামী নির্বাচনের আগে আমরা না করতে পারি, তাহলে মানুষগুলো শহীদ হয়ে যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চেয়েছিল, সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ফেরার কোনো পথ নেই।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে আমাদের একটি ভূখণ্ডের লড়াই ছিল, একাত্তর সালে একটি জনআকাঙ্ক্ষার লড়াই ছিল। কিন্তু প্রতিটি লড়াইয়ে আমাদের পরবর্তীতে বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী, পক্ষের দলদাস হয়ে থাকতে হয়েছে। আমাদের সামনে ১৯৯০ সালেও একটি সুযোগ এসেছিল, তিনটি দল নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি করেছিল। কিন্তু সেই চুক্তি থেকেও আমরা দেশের মানুষকে আকাঙ্ক্ষার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা নতুন একটি স্বপ্ন পেয়েছি। বাংলাদেশে যে স্বৈরতান্ত্রিক সংবিধানের কারণে আমরা আমাদের ২ হাজার ভাইকে হারিয়েছি, ৫০ হাজারের ওপরে ভাইদের অঙ্গহানি হয়েছে, তারা এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। আমরা আগামীতে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো রক্তপাত আর চাই না।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র সমাজের উদ্যোগের জাতীয় নাগরিক কমিটির যে দল আসছে, সেটি একটি মধ্যপন্থার দল হবে। যে দলটির কোনো বাইনারি প্রসেসের মধ্যে থাকবে না, মতাদর্শভিত্তিক বিভাজন থাকবে না। আমাদের সামাজিকভাবে ঐক্যের জায়গাটা গড়তে হবে। রাজনৈতিকভাবে এই ঐক্যের ওপর ভিত্তি করে যে মানুষগুলো আহত হয়েছে, শহীদ হয়েছে তাদের বিচারের দাবিতে রাজপথে আমাদের অবস্থান নিতে হবে। এই গণঅবস্থানের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলে দাবিতে আমাদের রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ে শামিল হতে হবে।

আলোচনা সভায় বিচারপতি (অব.

) এ এফ এম আবদুর রহমান বলেন, স্বৈরতন্ত্রের প্রবহমান অবস্থা আমরা ১৯৭২ সাল থেকেই দেখে আসছি। আমরা স্বৈরাচার বিতাড়ন করতে পারি কিন্তু স্বৈরতন্ত্রটা বিতাড়ন করতে পারি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। কেন ব্যর্থতা? ব্যর্থতা হচ্ছে আমাদের স্বৈরতন্ত্রটা সংবিধানের মধ্যেই আছে। কোন সংবিধানে? যে সংবিধানটা ১৯৭২ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্যদের দ্বারা। সেটি একজন ব্যক্তিকে সামনে রেখেই প্রণয়ন করা হয়েছিল। আপনি সংবিধানটাকে যদি বিশ্লেষণ করেন তাহলে দেখবেন এই সংবিধানটাকে কোনোভাবেই একটা লিগ্যাল ডকুমেন্ট বলা যায় না। বলতে হবে একটা পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে কতগুলো লিখিত বিধান।

তিনি বলেন, এই ৭২ সংবিধানের প্রেমটা আমরা আপনাদের বুক থেকে সরিয়ে দিতে পারছি না। এই প্রেমটাকে সরিয়ে দিতে না পারলে বিপদ হবে। যদি সংবিধানের মধ্যেই আপনি থাকেন তাহলে কীভাবে এগোবেন?

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন, নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক তাজনূভা জাবীন, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, সদস্য টিনা নন্দী প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ আম দ র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদের সিনেমার ব্যতিক্রমী প্রচারণা

‘হ্যাঁ ভাই, আসিতেছে, আসিতেছে আগামী শুক্রবার ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন পেক্ষাগৃহে...’ সিনেমার বিজ্ঞাপনের এমন দরাজ কণ্ঠের ঘোষণা সেই নব্বই দশক সময়ের দর্শকদের কানে এখনও বাজে। রিকশা আর ভ্যানে মাইক লাগিয়ে সিনেমার ঘোষণা আসত। ঈদের সিনেমা হলো তো মাসখানেক আগে থেকেই চলতে এমন প্রচারণা। সিনেমা প্রচারণায় আরও একটি ব্যবহারও দেখা গেছে ব্যাপক। রিকশা বা ঘোড়ার টমটম গাড়িতে মাইক ব্যবহার করে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে ঘোষণা; যা এখন অতীত। মাঝে ঢাকাই সিনেমার মুক্তির আগে প্রচারণার বিষয়টি ঝিমিয়ে গিয়েছিল। তখন প্রচারণা মানে ধরে নেওয়া হতো কেবল পোস্টার ও টিজার আর ট্রেলার প্রকাশ। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শক্তিশালী অবস্থানের এ সময়ে প্রচারণার ধরন বদলেছে। সিনেমার বেশির ভাগ প্রচারণায় এখন ফেসবুক, ইউটিউবনির্ভর। বেশ কাজেও দিচ্ছে সেসব প্রচারণা। এবারের ঈদুল ফিতরে আসছে শাকিব খান, আফরান নিশো, সিয়াম আহমেদ, মোশাররফ করিম, সজলদের মতো তারকার ছবি; যাদের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে আছেন যথাক্রমে কলকাতার ইধিকা পাল, তমা মির্জা, বুবলী-দীঘি, শিমু ও নুসরাত ফারিয়া। এসব তারকার নিজ নিজ ছবির ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলের প্রচারণা বেশ চোখে পড়ল। 

পোস্টার ও টিজার প্রকাশ করে ঈদুল ফিতরে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবির প্রচারণা বহু আগে শুরু হয়। সেসব প্রচারণার মধ্যে ‘চক্কর ৩০২’ মুক্তির ঘোষণা দিয়ে সবার নজড় কাড়ে। ৪ মিনিটের এক ভিডিওতে নাটকীয় কায়দায় মুক্তির ঘোষণায় চমকে ওঠেন সিনেপ্রেমী দর্শক। যে ভিডিওতে পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবনকে বেঁধে রেখে মোশাররফ করিমের সিনেমা মুক্তির ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টি বেশ চমকপদ ছিল। 

এরপর ঈদের সিনেমার ব্যতিক্রমী প্রচারণায় সবাইকে ছাড়িয়ে আছে এম রাহিমের ‘জংলি’। সবার আগে ‘জংলি’ টিমই প্রি-টিজার দিয়ে প্রচারণা শুরু করে। স্টাইলটা ভিন্ন ছিল প্রি-টিজারের। এরপর ইউটিউবার বা ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে সহযোগী হয়ে প্রচারণার বিভিন্ন ভিডিও বানাতে দেখা গেছে জংলি টিমকে। সর্বশেষ রিপন ভিডিওকে নিয়ে নির্মিত কনটেন্টটি বেশ আলোচনায় আসে। 

ঈদের আরেক ছবি ‘দাগি’-এর সংবাদ সম্মেলনে সিনেমার চরিত্রে হাজির হয়ে বেশ চমকে দিয়েছেন আফরান নিশো। বিষয়টি সিনেমার প্রচারণায় একদফা এগিয়ে দিয়েছে দাগিকে। এদিন দেখা যায় আফরান নিশোর লম্বা চুল, মুখভর্তি দাড়ি, গায়ে কয়েদির পোশাক, হাতে হাতকড়া। পুলিশের গাড়িতে অভিনেতা আফরান নিশোকে নেওয়া হচ্ছে রাজধানীর গুলশানে। প্রথম দেখাতেই যে কারও মনে হবে নিশোকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে দুইজন পুলিশ। বিষয়টি মোটেও তা নয়। মূলত এটি তারই প্রচারণার অংশ।

এদিকে ঈদের ছবি ‘জ্বীন থ্রি’ প্রচারণায় পিছিয়ে নেই। কন্যারে গান গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল প্রচারণায় নেমেছে জ্বীন টিম; যা চোখে পড়ছে সিনেমাপ্রেমীদের। 

শাকিব খান অভিনীত বরবাদ সিনেমার ব্যতিক্রমী প্রচারণা চোখে পড়েনি। তবে নায়কের ভক্তরা নানা কৌশলে ছবির প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফেসবুকের সিনেমাবিষয়ক গ্রুপে গ্রুপে চলছে বরবাদ সিনেমা নিয়ে তুমুল চর্চা। সর্বশেষ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডে সিনেমাটি কাটছাঁট করার খবরে বেশ প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে সিনেমার মানুষ ও ভক্তরা; যা সিনেমার প্রচারণা হিসেবে কাজে আসে। তবে সর্বশেষ মুক্তির তালিকায় যুক্ত হওয়া শাকিব খান অভিনীত আরেক ছবি ‘অন্তরাত্মা’ ব্যতিক্রমী প্রচারণা থেকে একটু পিছিয়ে আছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ