আমার জীবনে প্রেমটেম ছিল না: শামীম হাসান সরকার
Published: 14th, February 2025 GMT
“আমার ভালোবাসা দিবস বলতে, বাবা-মা, বোন, বোন জামাই ও ভাগ্নে। এটা আমার পরিবার, এটাই আমার ভালোবাসা।”— রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই কথাগুলো বলেন ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’খ্যাত অভিনেতা শামীম হাসান সরকার।
ব্যক্তিগত জীবন জনসম্মুখে আনতে চান না শামীম হাসান। এমনকি, ভক্তদেরও তা জানাতে নারাজ। ‘ফ্যামেলি ক্রাইসিস’খ্যাত তারকা শামীম হাসান পারিবারিকভাবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার ভাষায়— “প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর খবর দিয়ে আলোচনায় আসতে চাই না।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে শামীম হাসান সরকার বলেন, “প্রেম-ভালোবাসার বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। এটা আমার পরিবার যেমন চায় না, তেমনি আমিও চাই না। আসলে প্রেম-ভালোবাসার ব্যাপারটা ব্যক্তিগত। সুতরাং এটাকে পাবলিকলি বলতে চাই না। আমি চাই না, এটা আমার ভক্তরাও জানুক। বিয়ে কীভাবে করব— এসব ব্যাপারগুলো এভাবে বললে সব নষ্ট হয়ে যায়।”
আরো পড়ুন:
যারা হজে যাননি, তারা বুঝবেন না অনুভূতিটা কেমন: অহনা
‘সবুজ গ্রাম পাথরের শহর’
আলাপের এক পর্যায়ে ‘সম্পর্কের ভিত্তি’ কী জানতে চাইলে শামীম হাসান সরকার বলেন, “সত্যি বলতে আমি জানি না। তবে আমার ৩৬ বছরের জীবনে মনে হয়েছে, সম্পর্কের ভিত্তি সময়ের সঙ্গে ওঠানামা করে। সময়ের সাথে, আমাদের চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তনের সাথে, ম্যাচিউরিটির পরিবর্তনের সাথে বৃদ্ধি পায়। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত একটি সম্পর্ক স্থির নয়। এটা পরিবর্তনশীল। সেটা সবার সঙ্গে সবার। আমার অন্তত এমনটাই মনে হয়।”
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলবেন না, তা পরিষ্কার জানানোর পরও স্কুল-কলেজ জীবনে কারো প্রতি ভালো লাগা ছিল কিনা জানতে চাওয়া হয় শামীম হাসান সরকারের কাছে। জবাবে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ তারকা বলেন, “না, আমার এসব ছিল। কারণ আমি ক্যাডেট কলেজের ছেলে; বয়েস স্কুলে পড়াশোনা করেছি। আমার জীবনে প্রেমটেম ছিল না। আমার প্রেম ছিল মিউজিকের সঙ্গে। ক্লাস সিক্স থেকেই ড্রামার ছিলাম। আমার ভালোবাসা আমার মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট।”
বেশ কিছু গানে কণ্ঠ দিয়েও দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছেন শামীম হাসান সরকার। তা ছাড়া মিউজিক তার পুরোনো প্রেম। এরপরও মিউজিক নিয়ে কেন কাজ করছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে শামীম হাসান সরকার বলেন, “নাটকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে সেভাবে মিউজিক নিয়ে কাজের সুযোগ হয় না। আসলে, নাটকের কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ততা। যার ফলে গান করতে পারছি না, নিজের ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে পারছি না। একজনকে দিয়ে ১৪টা কাজ হবে না। যেকোনো একটা কাজই করতে হবে। এখন মূল ফোকাস অভিনয়।”
টিভি নাটকে সরব শামীম হাসান সরকার। ইউটিউবেও নিয়মিত মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত নাটক-টেলিফিল্ম। তবে বড় পর্দা নিয়ে কী ভাবছেন এই অভিনেতা? জবাবে শামীম হাসান সরকার বলেন, “না, এমন কোনো পরিকল্পনা আমার নেই। অভিনয় তো অভিনয়ই। ফিল্ম কিংবা নাটক— যে মাধ্যমই হোক না কেন। ওটিটিতে তো আলাদা কিছু করব না, অভিনয়ই করব। আমি তো একই ব্যক্তি, একই সংলাপ বলব। যদিও ফিল্মটা বড় পরিসরে শুটিং হয়। আমি নাটকেই হ্যাপি। ফিল্ম স্টার হওয়ার ইচ্ছা নাই।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক শ ম ম হ স ন সরক র ব আম র ভ র পর ব
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কার ও নির্বাচন দুটোই হতে হবে
এখন কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন চায়, সংস্কার চায় না। তাদের মনে রাখা উচিত, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল ক্ষমতার পালাবদলের জন্য হয়নি। এই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হলো সংস্কার এবং নির্বাচন দুটিই হতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো কেবল ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি করেছে। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। এ ধারার আমূল পরিবর্তন করতে হবে।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে গতকাল শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি’ শীর্ষক একটি অধিবেশনে এসব কথা বলেন বক্তারা। গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা এম হাসান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর কাজের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনার কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার যথেষ্ট সুযোগ আছে। সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রবিধান সংযুক্ত করা হবে।
আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করে তোলার ওপর। বিগত সরকারের সময়ে দেশের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চরমভাবে দুর্বল করে ফেলা হয়, যা প্রধানমন্ত্রীকে কর্তৃত্ববাদী হওয়ার পথ প্রশস্ত করে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ধারার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য সংবিধানে বিশেষ অনুচ্ছেদ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থাকে কেউ কেউ ‘বিপ্লব’ বলেন। আদতে এটা বিপ্লব ছিল না। বিপ্লব হলে বিভিন্ন কমিশন গঠন করার দরকার হতো না। তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করবে তারা কতটুকু গ্রহণ করবে।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, অতীতের ক্ষমতার চর্চা ছিল অর্থের ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। আদর্শের চর্চার প্রভাব খুব একটা ছিল না। জাতীয় সংসদের প্রধান থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পর্যন্ত সবাইকে এ ধারায় চলতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ চলে গেলেও সেই টাকার প্রভাবের শূন্যতা পূরণ হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দাবি আদায় করতে লোক জড়ো করা এবং সহিংসতা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে হবে।
অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, সবাই সংস্কার চান। তবে কী সংস্কার চান, তা সুস্পষ্ট করা উচিত। সংস্কার কেবল আইনের পরিবর্তনের মধ্যে আটকে থাকলে হবে না। আইন অনেক আছে। সমস্যা রাজনৈতিক চর্চার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেকগুলো সংস্কারের জন্য কাজ করছে। এরই মধ্যে অনেক সংস্কার প্রস্তাবও এসেছে। তবে সংস্কার প্রস্তাবের অনেকগুলো আইন পরিবর্তনের জন্য। সত্যিকার অর্থে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাইলে জনগণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক চর্চার পরিবর্তনের জন্য অন্তর্বর্তী নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সরকার ব্যবস্থাকেও রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখার চর্চাও দেখা গেছে। প্রতিবছর সম্পদের হিসাব প্রকাশ করবে– ‘দিন বদলের’ কথা বলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। কীভাবে মানুষ এটা বিশ্বাস করবে, রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসছে, সেই প্রতিশ্রুতি রাখবে।
সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, বিগত সরকারের সময়ও অনেক কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ওই কথা শোনার বা শুনে তা আমলে নিয়ে কাজ করা হয়নি। সংবিধান সংশোধনের কথা হচ্ছে। এটা করতে হলে তা কীভাবে যুগোপযোগী হয়, তা নিয়ে ভাবতে হবে।
৫৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হয়নি এবং এ কারণে নব্বই বা চব্বিশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে বলে মত দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গভীরে বৈষম্য রয়ে গেছে। মানুষ শান্তি চায়, ভয়ের পরিবেশে বাঁচতে চায় না। তারা চায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের কথা শোনা হোক। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে জবাবদিহি করার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জনগণের মতকে প্রতিষ্ঠা করার পথে এগোনো সহজ হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান বলেন, অর্গানাইজেশন এবং ইনস্টিটিউশনের মধ্যকার পার্থক্য করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে কঠোরভাবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সহআহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, অতীতের সরকার ব্যবস্থায় মানুষের কথা শোনার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে সুষ্ঠু নির্বাচনই ছিল মানুষের প্রধান আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষের আকাঙ্ক্ষা কেবল নির্বাচনে আটকে নেই। অতীতের সরকার ব্যবস্থাগুলোতে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ মানুষের ভোট নিয়ে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়েছিল এবং তারা সংবিধান বদলের অধিকার পেয়ে ইচ্ছামতো পরিবর্তন করেছে। নতুন বাংলাদেশের মানুষ এর বদল চান। কেবল ক্ষমতার পালাবদল করে দিতে এ গণঅভ্যুত্থান হয়নি।
বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি বিষয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, তারা হয়তো সংস্কার চায় না। তিনি উল্লেখ করেন, জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নামে আছে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা। এর বদল করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, নিজেদের পক্ষে কথা বলার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রতিনিধি পাঠানোর পর যদি জনগণ দেখেন তাদের পক্ষে ওই প্রতিনিধি কথা বলছেন না, তাহলে তাকে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থাও থাকা উচিত। রাজনৈতিকগুলো গণতন্ত্রের কথা বললেও নিজেরা গণতন্ত্রের চর্চা করে না। মুখে জনগণই সব ক্ষমতা উৎস– এমনটা বললেও সংসদে নিজ দলের বিরুদ্ধেই কথা বলতে পারে না।