Prothomalo:
2025-02-22@09:19:34 GMT

কবর জিয়ারতে কী করব, কী করব না

Published: 14th, February 2025 GMT

মুসলমানদের কবর দেওয়ার পর মৃত ব্যক্তির মুক্তির জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করা হয়। কবরস্থানকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা কর্তব্য। কবরের ওপর দিয়ে চলাচল করা কিংবা কবরের অবমাননা করা অনুচিত। কবরস্থানে ঢুকে ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর’ বলতে হয়। দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা ও পবিত্র কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে হয়। দোয়া শুধু একজনের জন্য নয়, সব মুর্দার জন্যই করতে হয়। শবে বরাত ও দুই ঈদের দিনে অনেকে পারিবারের সদস্যদের নিয়ে কবর জিয়ারত করতে আসেন। প্রিয় আত্মীয়ের সুনির্দিষ্ট কবরে এলেও দোয়া করতে হয় সবার জন্য।

কবর জিয়ারত ইবাদত। পরকালের কথা স্মরণ রাখতেও কবর জিয়ারত করা জরুরি। আবার গুনাহমুক্ত জীবন গড়তেও কবর জিয়ারত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জিয়ারতকারীকেও ক্ষমা করা হবে।

আরও পড়ুননামাজ ও কোরআন পড়ার আগে অজু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোরআনে০৭ আগস্ট ২০২৩

ইসলামের প্রথম যুগে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করা হলেও পরে তা তুলে নেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.

) বলেছেন, ‘আমি আগে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম; এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত কর। কেননা, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ)

কীভাবে জিয়ারত করবেন

কবরের পাশে গিয়ে দোয়া পড়া, কবরস্থ ব্যক্তির মুক্তির জন্য দোয়া করাই জিয়ারতের উদ্দেশ্য। নিজেদের জন্যও দোয়া করা উত্তম। জিয়ারত শুরু করতে হয় এই বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন।’ (মুসলিম)

এর পর একে দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা ও ইখলাস এবং আয়াতুল কুরসি পড়তে হবে। তারপর মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করে মোনাজাত করতে হবে।

কবর জিয়ারতের জন্য কোনো সময়ের বিধিনিষেধ নেই। যেকোনো দিন যেকোনো সময় কবর জিয়ারত করা যায়। তবে জুমার দিন কবর জিয়ারত করলে জিয়ারতকারীর জন্যও তা ক্ষমালাভের কারণ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’

আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের সুগভীর মরতবা১৫ আগস্ট ২০২৩

প্রিয়জন, মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনের কবরের পাশে গেলে মন বিষণ্ন হওয়া বা চোখ অশ্রুসিক্ত হওয়া স্বাভাবিক। তাই বলে কবরের কাছে গিয়ে হা–হুতাশ করা ঠিক নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর আম্মার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ক্রন্দন করেন। তাঁর সঙ্গীসাথীরাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আমার রবের কাছে আমার মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি চাইলে তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন। কাজেই তোমরা কবর জিয়ারত করবে। কেননা, তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ)

কবর জিয়ারতের দোয়া সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যে দোয়াগুলো পড়তেন, তা হলো, ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আছার।’ এর অর্থ, ‘হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের আগে তোমরা কবরে গেছ এবং আমরা পরে আসছি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,০৫৩)

আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা। অর্থ: মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশা আল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। (সহিহ মুসলিম: ২৪৯)

কবরস্থানে পবিত্র হয়ে গিয়ে প্রথমে সালামের উল্লেখসহ দোয়া পড়তে হবে। এ ছাড়া অন্য মুখস্থ সুরা পড়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে হবে।

আরও পড়ুনহাবিল-কাবিলের কাহিনি২৫ আগস্ট ২০২৩

কবরস্থানে যা করা যাবে না

মহানবী (সা.) কবরস্থানে বেশ কিছু কাজ না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলোর কয়েকটি তুলে ধরা হলো:

১. কবরস্থানে পশু জবাই করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামে (কবরের পাশে) কোনো জবাই নেই। জাহিলি যুগের লোকজন কবরে গাভি বা ছাগল জবাই করত।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩,২২২)

২. কবরের ওপরে বসা নিষেধ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কবরের ওপর বসবে, এর চেয়ে উত্তম হলো আগুনের ওপর বসা। আর সেই আগুন যেন তার কাপড় পুড়িয়ে দিয়ে চামড়া পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৭১)

৩. কবরের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা নিষেধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবরের দিকে (মুখ করে) নামাজ আদায় করবে না এবং তার ওপর বসবেও না।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৭২)

৪. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরো পৃথিবীই মসজিদ, শুধু কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩১৭)

৫. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিয়ো না এবং কবরগুলোকে উৎসবের জায়গা বানিয়ো না।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২,০৪২)

আরও পড়ুনফজিলতের আয়াত, আয়াতুল কুরসি২৭ আগস্ট ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কবরস থ ন ত র জন য আল ল হ বল ছ ন আগস ট ত করত কবর র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যদায় এ দিবসটি পালিত হবে। রাজধাানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে ভাষা শহীদদের নিয়ে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশ’র মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।

রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশ’র কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এছাড়াও কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হবে।

আরো পড়ুন:

চির নিদ্রায় শায়িত ভাষা সৈনিক বড়দা

হিলির শূন্যরেখায় দুই বাংলার ভাষাপ্রেমিদের মিলনমেলা

মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী প্রদান করেছেন।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশী বাঙালিদের জন্য এই দিবসটি হচ্ছে শোক ও বেদনার। অন্যদিকে, মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত।

১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্ব বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠির চোখ-রাঙ্গানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরানখানির আয়োজনসহ দেশের সকল মসজিদে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা জনক স্থানগুলোতে বাংলা ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেরিভিশন এবং অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং ভাষা শহীদদের সঠিক নাম উচ্চারণ, শহীদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা, শহীদ মিনারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সুশৃঙ্খলভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, ইত্যাদি জনসচেতনতা মূলক বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোতে প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া, বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্র বিশষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
 

ঢাকা/হাসান/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ
  • আগস্টে শহীদ সুজয়ের লাশ তুলতে পরিবারের বাধা