মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের তালিফাবাদ গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া দক্ষিণ চক এলাকায় মুলার চাষ করেছেন। উন্নত জাতের বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও তিনি গত তিন বছর কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছেন না।
মানিক মিয়ার কৃষিজমির দক্ষিণ পাশে একই এলাকার খোরশদ মিয়ার একখণ্ড জমি রয়েছে। ওই জমিতে তিন বছর আগে খোরশেদ মিয়া চাষাবাদ করলেও এখন তিনি করেন না। ফলে কৃষিজমি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। কৃষকেরা অনেক অনুরোধ করেও খোরশেদ মিয়াকে ওই জমিতে চাষাবাদে ফেরাতে পারেননি, জঙ্গলও পরিষ্কার করাতে পারেননি।
খোরশেদ মিয়ার জমিতে জঙ্গল হওয়ায় শুধু মানিক মিয়া নন, আশেপাশের কৃষকও বিগত তিন বছর হলো সঠিক ফলন পাচ্ছেন না। অনেক কৃষক এ কারণে ওই জঙ্গলের আশেপাশের জমিতে আর চাষ করছেন না। তালিফাবাদ গ্রামের দক্ষিণ চক এলাকার কৃষকদের কাছে ‘খোরশেদের জঙ্গল’ আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
খোরশেদের জঙ্গলের পশ্চিম পাশের জমির মালিক আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘‘চলতি মৌসুমে আমার জমিতে ফুলকপি চাষা করি। জঙ্গলের গাছপালা থাকায় অনেক ফসল খেকো পাখির বিচরণ হয়। পাখি আমার ফুলকপি অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে। ফলে চালানের টাকাও ওঠে নাই। এই জঙ্গল থাকলে আগামী বছর আমি আর চাষ করবো না।’’
খোরশেদর জঙ্গলের দক্ষিণ পাশে আব্দুল মিয়া মুলা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গলে শেয়ালের আনাগোনা থাকায় মুলার ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। যখন খোরশেদ নিজে চাষ করতো তখন এমন সমস্যা হয়নি। এখন জমিটা চাষাবাদও করে না, জঙ্গলও পরিষ্কার করে না। জমি চাষ বা জঙ্গল পরিষ্কার করার অনুরোধ করলেও পাত্তা দেয় না। ফলে আমরা পড়েছি বিপদে।’’
বাচ্চু মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, ‘‘খোরশেদের ঘাড় ত্যাড়ামির ল্যাইগা ম্যালা কৃষকের জমির ফসল নষ্ট অইতাছে। তারে কিছু কইলে বড় বড় নেতা, উকিলের ডর দেহায়। তার জমি মন চাইলে চাষ করবো, না চাইলে করবো না। তাই বইলা জঙ্গল বানাই রাখবো এডা কেমন কতা? জঙ্গলের ল্যাইগা আমাগো জমির সর্বনাশ অইতাছে। কার কাছে বিচার দিমু, খোরশেদের বিচার করবো ক্যারা?’’
মানিকগঞ্জ কৃষি জমি সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়কারী মো: নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ওই কৃষকের অঢেল সম্পদ ও পেশি শক্তি হওয়ায় এমন আচরণ করছেন। একজন কৃষক কখনো আরো দশজন কৃষকের সমস্যার কারণ হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’’
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.
চন্দন//
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বরফঠান্ডা পানিতে একসঙ্গে ২৪৬১ মানুষের গোসল
প্রচণ্ড শীতে জলাশয়ের প্রায় বরফঠান্ডা পানিতে গোসল করার কথা শুনলে অনেকেই পিছিয়ে যাবেন। তবে চেক প্রজাতন্ত্রের ২ হাজার ৪৬১ জন একসঙ্গে এই কঠিন কাজ করে দেখিয়েছেন। ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রার পানিতে গোসল করেছেন তাঁরা। যেটাকে বলা হয় ‘পোলার বিয়ার ডিপ’।
‘সাহসী’ এই কাজের লক্ষ্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানো। চেক প্রজাতন্ত্রের দ্বিতীয় বৃহৎ হ্রদ মোস্ট লেকে গত ১ মার্চ ওই গোসলের আয়োজন করা হয়।
ওই আয়োজনের উদ্যোক্তা ডেভিড ভেনকল। তিনি একজন ফ্রিডাইভার। ‘কোল্ড থেরাপি’ পরামর্শক হিসেবেও চেক প্রজাতন্ত্রে তাঁর নামডাক আছে।
সাঁতারের পোশাকে ঠান্ডা পানিতে নেমে ‘পোলার বিয়ার ডিপ’ করতে হয়। অনেক দেশেই এ ধরনের আয়োজন করা হয়। সাধারণত দাতব্যকাজের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে কিংবা নতুন বছরের প্রথম দিন উদ্যাপন করতে এমন আয়োজন করা হয়।
আগে ‘পোলার বিয়ার ডিপ’-এর রেকর্ড ছিল পোল্যান্ডের একটি দলের। ২০১৫ সালে পোল্যান্ডের ১ হাজার ৭৯৯ জনের একটি দল ঠান্ডা পানিতে গোসল করে ওই রেকর্ড গড়েছিল।
ভেনকলের অবশ্য এটাই প্রথম রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নয়। এর আগে তিনি কোনো ধরনের পাখনা ও ডাইভিং স্যুট ছাড়া বরফপানির নিচে সবচেয়ে বেশি সময় সাঁতার কাটার রেকর্ড গড়েছিলেন। ২০২১ সালে তিনি ওই রেকর্ড গড়েন এবং চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ওই রেকর্ডের মালিক ছিলেন।
‘কোল্ড থেরাপি’ শরীর ও মনের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো, তা দেখাতে ২ হাজার ৪৬১ জনকে নিয়ে বরফঠান্ডা পানিতে গোসলের আয়োজন করা হয়েছিল।
গোসলের দিন সকালে অংশগ্রহণকারীরা নাম নিবন্ধন করেন এবং বিকেলে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রার পানিতে নেমে গোসল করেন।
গোসলে অংশ নেওয়ার আগে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে কথা বলেছেন কোল্ড থেরাপি বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তার জন্য ঠান্ডা পানিতে গোসলে নামার আগে বেশ কিছু পরামর্শ দেন।
প্রথমে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা পানিতে নামেন। রেকর্ড গড়তে সব অংশগ্রহণকারীকে অন্তত এক মিনিট পানিতে সম্পূর্ণ শরীর ডুবিয়ে রাখতে হয়েছে। সফলভাবে এক মিনিট পার করার পর নতুন রেকর্ড গড়ার উল্লাসে চিৎকার করে ওঠেন অংশগ্রহণকারীরা।