পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিধান করার সুপারিশ
Published: 14th, February 2025 GMT
ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্বাচনী আইনে নতুন বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
বিদ্যমান আইনে প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেন। তবে পোলিং এজেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আইনে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গত শনিবার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রকাশ করে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনা। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। ইতিমধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন নিজ নিজ প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। এসব কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব গত শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
উল্লিখিত ছয় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আগামীকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এই আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি পথনকশা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পোলিং এজেন্টের নিরাপত্তা নিয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশটি বাস্তবায়ন করতে হলে বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা করতে পারবে। এ ছাড়া আরপিওতে আরও কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে এমনিতেই বিদ্যমান আরপিওতে সংশোধনী আনতে হবে।
নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচনের সময় প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে থাকেন তাঁর মনোনীত পোলিং এজেন্ট। ভোটার শনাক্ত করা, কোনো অনিয়ম বা জাল ভোট হচ্ছে কি না, তা তিনি প্রার্থীর পক্ষে দেখভাল করতে পারেন। কিন্তু বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে গত দেড় দশকে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা গেছে, ভোটকেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বাইরে অন্য প্রার্থীদের এজেন্টদের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের আগেই অন্য প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো, ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া, ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা এই সময়ে ছিল সাধারণ বিষয়। তবে এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের অনেকেই ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে পারেননি। হুমকি, মামলা ও পুলিশের ধরপাকড়ের ভয়ে তখন অনেকে পোলিং এজেন্ট হতে রাজি হননি।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভোট দিতে গিয়ে তাঁরা প্রধান বিরোধী জোটগুলোর কোনো পোলিং এজেন্ট দেখতে পাননি।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল মূলত আওয়ামী লীগ, দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তখনকার ক্ষমতাসীন দলটির মিত্রদের মধ্যকার নির্বাচন। এই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বাইরে অনেকে ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেননি। ৭ জানুয়ারি কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তখনকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভোটকেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীদের এজেন্ট ছাড়া তিনি অন্য কারও এজেন্ট দেখতে পাননি।
তবে অতীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া, ভয়ভীতি দেখানো নিয়ে অভিযোগ করলেও ইসি কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেওয়ার বিষয়ে বলা আছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট (প্রধান এজেন্ট) ভোট শুরুর আগে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারবেন। তাঁরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে নোটিশ দেবেন। তবে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই।
বিদ্যমান আইনের এই ক্ষেত্রে সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তারা আইনের এই ক্ষেত্রে একটি নতুন ধারা যুক্ত করতে বলেছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট কর্তৃক নিয়োগ করা পোলিং এজেন্টদের নামের তালিকা (কেন্দ্রের নাম ছাড়া) রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেবেন। তালিকা পাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সভা করবেন। সব পোলিং এজেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। সভার কার্যবিবরণী নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাঠাবেন। কোনো পোলিং এজেন্টকে অন্য কোনো প্রার্থী বা কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ভয়ভীতি দেখালে, কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে, হয়রানি করলে তা তাৎক্ষণিক সুনির্দিষ্টভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর অধীন কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগ যাচাই–বাছাই বা সরেজমিন তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
এ ছাড়া আইনে একটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পোলিং এজেন্ট কোনোভাবেই প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষ বা ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করতে পারবেন না। যদি অনুমতি ছাড়া কোনো পোলিং এজেন্ট ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন, তাৎক্ষণিকভাবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবেন।
বিগত সময়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভোটের ফলাফল তৈরির আগেই ফলাফলের বিবরণীতে (রেজাল্ট শিট) পোলিং এজেন্টদের সই নিয়ে রাখার ঘটনা দেখা গেছে। সংস্কার কমিশন প্রস্তাবে বলেছে, ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগে কোনো প্রার্থী বা তাঁর এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টকে দিয়ে ফলাফলের বিবরণীতে সই করিয়ে নেওয়া যাবে না। এভাবে আগাম সই নিয়ে রাখা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের সময় কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট থাকাটা অপরিহার্য। পোলিং এজেন্ট হচ্ছেন ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর প্রতিনিধি। সব ভোটকেন্দ্র সব প্রার্থীর এজেন্ট থাকলে ভোটের স্বচ্ছতা থাকে। এজেন্ট না থাকলে প্রার্থীর পক্ষে বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না যে ভোটে কোনো অনিয়ম বা বিতর্কিত কিছু হয়েছে কি না। ইসির দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করা। তাই ইসিকেই পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ব চনব যবস থ ন শ চ ত কর সরক র র ব যবস থ ক ত কর ত কর র
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানে ৭ দেশের কবি
তারা ভিন দেশের নাগরিক। কবিতা পাঠ করলেন নিজ নিজ ভাষায়। জানালেন তাদের অনুভূতিও। আবার সেই কবিতা আর অনুভূতির মর্মার্থ ইংরেজিতে বুঝিয়েও দিলেন সবাই।
শুক্রবার কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ‘সার্ধশততে একুশের দ্রোহ’ শিরোনামে ভিন্নধর্মী এ অনুষ্ঠান হয়। এর আয়োজন করে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (কসউবি) প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ।
কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন জাপান, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, কাজাখিস্তান ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। যারা কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে জাপানি নাগরিক মাছিকো ফুকোমারা বলেন, নিজের ভাষায় কথা বলতে পারাটা অনেক আনন্দের। স্কুল দেখে আমি আমার নিজের দেশ, বাড়ি, শৈশব ও নিজের ভাষাকে মনে পড়ছে। তিনি জানান, এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছেন।
নাইজেরিয়ান নাগরিক হাওয়া হাসান কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এখানে আমরা অনেক ভাষাভাষী মানুষ একসঙ্গে হয়েছি, এটা খুব ভালো লাগছে।
ফিলিপাইনের নাগরিক হেলেন বেশ কয়েক বছর ধরেই আছেন বাংলাদেশে। তিনি বলেন, কথা বলতে পারার স্বাধীনতা অনেক বড় বিষয়। অনেক আনন্দের।
ইসাবেল সুয়োরাজ কলম্বিয়ান নাগরিক। এই আয়োজনে এসে তিনি শিশু বয়সে ফিরে যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, স্কুলের বাচ্চাদের দেখে আমার স্কুলের সময়ের কথা মনে পড়ছে।
কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের গৌরবময় ১৫০ বছর পূর্তির ধারাবাহিকতায় এ আয়োজন মাতৃভাষার বৈচিত্র্য ও ঐক্যের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, বিদেশিদের উপস্থিতি মাতৃভাষার গুরুত্বকে বিশ্বজনীন পরিসরে তুলে ধরার প্রয়াস থেকেই এমন আয়োজন।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কবি জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত শহীদ মিনারটি কক্সবাজার জেলার প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে স্বীকৃত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকদের অবদান গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে খালেদ মোশাররফ, যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তার নেতৃত্বে কক্সবাজার হাইস্কুলের ছাত্ররা ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়।
বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের অংশ হিসেবে ভিন্নধর্মী এ আয়োজনের কথা জানিয়ে ছাত্র পরিষদের সংগঠক ইয়াসির আরাফাত জানান, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দিবসেই তাদের কর্মসূচি থাকবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত।