খুলনার ২৪ ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক, কাজ চলছে ঢিমেতালে
Published: 14th, February 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে খুলনার ৯ উপজেলার অন্তত ২৪টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন চারজন। এসব ইউনিয়নের কোথাও সরকারি কর্মকর্তা আবার কোথাও প্যানেল চেয়ারম্যানকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে তারা সময় দিতে না পারায় সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় কয়েক লাখ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বটিয়াঘাটার জলমা ইউপি চেয়ারম্যান বিধান রায়, সুরখালির জাকির হোসেন লিটু, ভান্ডারপাড়ার ওবায়দুল হক, আমিরপুরের জিএম মিলন ও বালিয়াডাঙ্গার আসাফুর রহমান আত্মগোপনে রয়েছেন।
রূপসার ৫ চেয়ারম্যানের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৫ আগস্টের পর থেকে তারাও পলাতক। আইচগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান বাবুলের জায়গায় ইউপি সদস্য মাসুম বিল্লাহ, শ্রীফলতলা ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক সরদারের জায়গায় ইউপি সদস্য জিয়াউল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে প্রশাসন।
নৈহাটি ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বুলবুলের জায়গায় ইউপি সদস্য মো.
একইভাবে তেরখাদা উপজেলার আজগড়া ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণ মেনন রায়, বারাসাতের কে এম আলমগীর হোসেন, ছাগলাদাহের দ্বীন ইসলাম, ছাচিয়াদাহের বুলবুল আহমেদ ও মধুপুরের শেখ মো. মহসীন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন তেরখাদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এফ এম ওয়াহিদুজ্জামান।
দিঘলিয়ার সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া গাজী, গাজীরহাটের ঠান্ডু মোল্লা, বারাকপুরের পাভেল গাজী, যোগীপোলের সাজ্জাদুর রহমান লিংকন পলাতক রয়েছেন। ফুলতলার আটরা গিলাতলার চেয়ারম্যান শেখ মনিরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন।
অপরদিকে, পাইকগাছার গদাইপুরের চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম, কপিলমুনির চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার ও লতার কাজল কান্তি বিশ্বাস কারাগারে রয়েছেন। সোলাদানার চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান গাজী, চাঁদখালীর শাহজাদা মো. আবু ইলিয়াস ও লস্করের কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন আত্মগোপনে রয়েছেন।
ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গাজী তৌহিদুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা ও অপহরণ মামলা রয়েছে। এই ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সদস্য জানান, চেয়ারম্যান তৌহিদ ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না। আত্মগোপনে থেকে পরিষদের বিভিন্ন কাগজপত্রে সই করেন। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায়ও যান না তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা পরিষদে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য সনদ নিতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
একইভাবে লুকিয়ে আছেন উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল চন্দ্র দে। তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে মামলা রয়েছে। প্যানেল চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন কবিরাজ কোনো রকম পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র দে জানান, স্থানীয় বিএনপির লোকজনের হুমকি-ধমকির কারণে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারছেন না।
ডুমুরিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, দু’জন চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিহির মণ্ডল আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৫টি মামলা রয়েছে। শুরুতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহাঙ্গীর জুবায়েরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে গত ২৯ জানুয়ারি দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বঙ্কিম হালদারকে।
একইভাবে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল পলাতক থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। প্রায় ২৯ হাজার মানুষের বাস এ ইউনিয়নটিতে। ইউপি সচিব সঞ্জয় মণ্ডল জানান, চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তিনি বদলি হওয়ায় দায়িত্ব পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে তিনি উপজেলার প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদে সময় দিতে পারছেন না। ফলে সব কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কোহিনুর আলম বলেন, জন্মনিবন্ধন, প্রত্যয়নপত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিতে না পারায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। এ ছাড়া গ্রাম আদালতের কার্যক্রম না চলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
কয়রার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করা কঠিন। বিকল্প হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।
নূরুজ্জামান//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ল ইসল ম সদস য আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে–বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে
বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দেশে–বিদেশে কমে গেছে। জানুয়ারির তুলনায় গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ১৬ কোটি টাকা বা ৫ শতাংশের বেশি। একইভাবে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৬২ কোটি টাকা বা ১৬ শতাংশ।
দেশে–বিদেশে এ দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার–সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রতিবেদনে গত ফেব্রুয়ারির ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়।
দেশে–বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমলেও ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে বসবাসকারী বা ভ্রমণে আসা বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে। জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ২৫৩ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে সেই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২৬৮ কোটি টাকায়। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে এ দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশিদের খরচ বেড়েছে ১৫ কোটি টাকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ করা হয়েছে ২৯৭ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে যার পরিমাণ ছিল ৩১৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ ১৬ কোটি টাকা কমে গেছে। একইভাবে ফেব্রুয়ারিতে এ দেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খরচ করা হয়েছে ৩৮৪ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে যার পরিমাণ ছিল ৪৪৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৬২ কোটি টাকা বা ১৬ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড–সংক্রান্ত গত কয়েক মাসের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। আবার এ দেশে অবস্থানকারী বিদেশিদের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কার্ডধারীরা। অর্থাৎ দেশে ও বিদেশের মাটিতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার এখন যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিরা সর্বোচ্চ ৫২ কোটি টাকা খরচ করেছেন। যদিও জানুয়ারিতে তার পরিমাণ আরও বেশি ছিল। অথচ ২০২৪ সালের জুনেও বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতেন ভারতে। সে মাসে ভারতে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ৯২ কোটি টাকা। ওই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছিল ৭৭ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমে নেমে এসেছে ২৯ কোটি টাকায়। জানুয়ারিতেও যা ছিল প্রায় ৩৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাত মাসের ব্যবধানে ভারত শীর্ষ স্থান থেকে নেমে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে ভারত। তাতে ভারতে ভ্রমণ ও চিকিৎসার প্রয়োজনে বাংলাদেশিদের যাতায়াত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে। চিকিৎসা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভারতের বড় বিকল্প হয়ে উঠেছে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। এ কারণে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এখন বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের বাইরে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার ছিল থাইল্যান্ডে। দেশটিতে গত ফেব্রুয়ারিতে খরচ হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে যার পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি টাকা। থাইল্যান্ডের পরের অবস্থানে সিঙ্গাপুর। ফেব্রুয়াতিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সিঙ্গাপুরে খরচ করা হয়েছে ৩৯ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে দেশটিতে খরচ হয়েছিল ৩৮ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে হওয়ায় সার্বিকভাবে খরচের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের সুদহার বাড়তে থাকায় কার্ডধারীরা খরচের ক্ষেত্রে কিছুটা লাগাম টেনেছেন।