পদ্মা নদীতে সাঁকো পার হতে চাঁদা না দেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন কয়েকজন ব্যক্তি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের পদ্মা নদীর বড়কুঠি এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন হাসিম রানা ও মেহেদী হাসান। মেহেদী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেও শরীরে আঘাত নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় রাতে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে একাধিক আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছেন আহত এক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থী, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা পদ্মা নদীর চরে বেড়াতে যান। তাঁরা নগরের পাঠানপাড়া পদ্মার লালন শাহ্ মুক্তমঞ্চ হয়ে চরে বেড়াতে যান। ফেরার সময় পদ্মা গার্ড়েনসংলগ্ন বড়কুঠি এলাকা হয়ে ফিরছিলেন। সেখানে বাঁশ, কাঠ, মাটি দিয়ে সাঁকো তৈরি করেছেন স্থানীয় কয়েকজন। সাঁকো দিয়ে যাতায়াতে জনপ্রতি ১০ টাকা নেন তাঁরা। ওই শিক্ষার্থীদের কাছেও তাঁরা ১০ টাকা করে চান। তবে শিক্ষার্থীরা এ দিক দিয়ে পদ্মার চরে যাননি; তাই পাঁচ টাকা করে দিতে চান। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্থানীয় তরুণেরা লাঠিসোঁটা ও দেশি ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে দুজনকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ও হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস জানিয়েছেন, সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল। একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসিম নামের একজনকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের অর্থোপেডিকস বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, আহত ব্যক্তিদের একজন এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তাঁরা সেটা পুলিশকে জানিয়েছেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, গতকাল রাতে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

তিনবারের চেষ্টায় বিধায়ক হয়ে কীভাবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হলেন আরএসএসঘনিষ্ঠ রেখা গুপ্ত

ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ৫০ বছর বয়সী রেখা গুপ্তকে বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুঝিয়ে দিলেন, দল পরিচালনা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো সব ক্ষেত্রে তাঁদের পছন্দই শেষ কথা।

একই সঙ্গে বোঝা গেল উত্তরাখন্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে নীতির যে ধারাবাহিকতা লক্ষণীয়, দিল্লির ক্ষেত্রেও তা বহাল রইল। কোনো রকম বিচ্যুতি ঘটল না।

সেই ধারাবাহিকতা হলো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এমন একজনকে বেছে নেওয়া, যাঁর স্বকীয়তা বলে কিছুই থাকবে না। যিনি হবেন নিছকই এক দলীয় যন্ত্র, যিনি পরিচালিত হবেন যন্ত্রী মারফত। ১০ বছর ধরে বিজেপির সর্বভারতীয় যন্ত্রী কে বা কারা, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।

সেই ধারাবাহিকতা মেনেই রেখা গুপ্তর মতো একজনকে বেছে নেওয়া, দিল্লি বিজেপির রাজনীতিতে যিনি পালকের মতো হালকা।

রেখার মা–বাবা ছিলেন হরিয়ানার বাসিন্দা ও শতভাগ অরাজনৈতিক পরিবার। পরবর্তী সময় তাঁরা দিল্লিতে চলে আসেন। বাবা জয় ভগবান জিন্দাল ছিলেন দিল্লির পীতমপুরার স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার শাখা ব্যবস্থাপক। মা গৃহবধূ। দিল্লির দৌলতরাম কলেজে ভর্তি হওয়ার পর রেখা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত হন। ছাত্ররাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি সেখানেই।

১৯৯৪ সালে রেখা সেই কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদক এবং দুই বছর পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে বিয়ে করেন। স্বামী মণীশ গুপ্তও অরাজনৈতিক। পিতলের ব্যবসায়ী। বিয়ের ছয় বছর পর রেখা বিজেপির যুব শাখা ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার জাতীয় সম্পাদক নির্বাচিত হন।

বিজেপির সঙ্গে সংশ্রব সেই থেকে অটুট থাকলেও দিল্লির রাজনীতিতে রেখা এমন কিছু প্রভাব ফেলতে পারেননি, যা তাঁকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসতে পারত। তাঁর রাজনৈতিক উত্তরণও ছিল সেই অর্থে তরঙ্গহীন।

২০০৭ সালে দিল্লি পৌরসভার ভোটে পীতমপুরা থেকে দাঁড়িয়ে রেখা বিজেপির টিকিটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই কেন্দ্র থেকে পাঁচ বছর পর দ্বিতীয়বারেও তিনি জেতেন। যদিও তার আগেই তিনি ২০০৯ সালে দিল্লি বিজেপির মহিলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন, পরের বছর সদস্য হন বিজেপির জাতীয় নির্বাহীর। ২০১৪ সালে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে দিল্লি প্রদেশের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নেয়।

কাউন্সিলর থেকে বিধায়ক পদে উন্নীত হতে রেখা ২০১৫ ও ২০২০ সালে বিধানসভার টিকিট পেয়েছিলেন শালিমার বাগ আসন থেকে। দুবারই হেরে যান আম আদমি পার্টির (আপ) প্রার্থী বন্দনা কুমারীর কাছে। প্রথমবার হারেন ১০ হাজার ৯৭৮ ভোটে, দ্বিতীয়বার ৩ হাজার ৪৪০ ভোটে। এবার তৃতীয়বারের মতো বিজেপি ওই আসন থেকেই তাঁকে প্রার্থী করে। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিলেন আপের সেই বন্দনা কুমারী। এবার রেখা জেতেন ২৯ হাজার ৫৯৫ ভোটের ব্যবধানে। প্রথমবার বিধায়ক হয়েই লাভ করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রিত্ব।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এবার যাঁদের নাম সবচেয়ে বেশি বিবেচিত হচ্ছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সাহেব সিং ভার্মার ছেলে প্রভেশ। এবার তিনি হারিয়েছেন আম আদমি পার্টির সুপ্রিম নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। তাঁর পাশাপাশি দৌড়ে ছিলেন বিধায়ক বিজেন্দ্র গুপ্ত ও সতীশ উপাধ্যায়। ভোজপুরী নেতা ও দিল্লির সংসদ সদস্য মনোজ তিওয়ারির নামও ভেসে উঠেছিল দিল্লির পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের কথা মাথায় রেখে। প্রবলভাবে উঠে এসেছিল দিল্লিতে বিজেপির শেষ মুখ্যমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সংসদ সদস্য কন্যা বাঁশুরি স্বরাজের নামও। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিলেন ‘লো প্রোফাইল’ রেখা।

রেখার প্রধান কাজের অন্যতম দিল্লির বাতাস ও যমুনার পানিদূষণ রোধ এবং পানীয় জলের জোগান অব্যাহত রাখা। তিন কাজেই হরিয়ানার সহযোগিতা তাঁর প্রয়োজন। জন্মসূত্রে হরিয়ানার আদি বাসিন্দা রেখার সাফল্যে সেই রাজ্যে গতকাল বুধবার যে উল্লাস দেখা গেছে, তাতে এই দুই সমস্যা সমাধানে তিনি আশান্বিত হতেই পারেন।

রেখা গুপ্ত হলেন সুষমা স্বরাজ, শীলা দীক্ষিত ও আতিশির পর দিল্লির চতুর্থ নারী মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর তিনি দেশের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীও। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী আতিশি। যদিও মুখ্যমন্ত্রিত্বের লড়াইয়ের টানাপোড়েন দেখে তিনি বলেছিলেন, দিল্লিবাসীকে প্রস্তুত থাকতে হবে পাঁচ বছরে তিনজন মুখ্যমন্ত্রী পেতে।

বিজেপির গোষ্ঠী কলহের দিকে ইঙ্গিত করলেও এটা স্পষ্ট, মোদি-শাহ মনোনীত কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে ইদানীংকালে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হতে হচ্ছে না। রাজস্থানের হেভিওয়েট নেত্রী বসুন্ধরা রাজে পারেননি, মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহানও বিদ্রোহের ঝান্ডা না উড়িয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব মেনে নিয়েছেন। উত্তরাখন্ড, ছত্তিশগড়েও কোনো অসন্তোষ নেই। স্পষ্টতই মোদি-শাহর পথ এখনো কুসুমকোমল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গৃহবধূকে ধর্ষণ, প্রতিশোধ নিতে যুবককে হত্যা
  • শেরপুরে শিশু বিক্রির ৩দিন পর উদ্ধার
  • তিনবারের চেষ্টায় বিধায়ক হয়ে কীভাবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হলেন আরএসএসঘনিষ্ঠ রেখা গুপ্ত