চাকমা ভাষায় শিক্ষার আরও প্রসার দরকার
Published: 14th, February 2025 GMT
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃহত্তর মঙ্গোলীয় জাতিগোষ্ঠীভুক্ত নানা ভাষাভাষী লোকজনের বসবাস রয়েছে। তাদের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ভাষা ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাষাগুলোর মধ্যে চাকমা ভাষা অন্যতম। চাকমারা নিজেদের ‘চাঙমা’ বলে। তাই তাদের ভাষাকে ‘চাঙমা ভাষা’ও বলা যায়।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের জনসংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৯। পার্বত্য চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, আসামের মিকিরহিল্স এবং অরুণাচলেও চাকমারা বসবাস করে। এখানে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ বনাঞ্চলে এবং সীমান্তবর্তী নাফ নদীর অন্য পারের আরাকানেও ‘দৈংনাক’ নামে চাকমাদের একটি শাখা রয়েছে। তারা এখনো চাকমা ভাষা বুঝতে পারে এবং নিজেদের সেখানে ‘চাঙমা’ বলে।
চাকমাদের লেখার জন্য নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। এই বর্ণমালা দিয়ে সুদূর অতীত থেকে তাদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ আঘর তারা এবং ওষুধ ও চিকিত্সাবিষয়ক গ্রন্থ তাহ্লিক শাস্ত্র লিখিত হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, চাকমা বর্ণগুলো আ-কারান্ত ধ্বনিবিশিষ্ট। এসব বর্ণের সঙ্গে মিয়ানমারের শান, আসামের আহোম এবং অরুণাচলের খামতি বর্ণলিপির সাদৃশ্য ও ঐতিহাসিক যোগসূত্র রয়েছে। দূর অতীতের ব্রাহ্মীলিপি থেকে নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে চাকমা, রাখাইন ও বর্মীসহ এ বইগুলোর উদ্ভব ঘটেছে। চাকমা ভাষায় সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য আছে। তাদের ধর্মচর্চা, চিকিত্সা ও সাহিত্যে তাদের বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে আধুনিক শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে চাকমা সাহিত্যেরও বিকাশ ঘটতে থাকে। ১৯৭০-এর দশক থেকে চাকমা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় অগ্রগতি সূচিত হয়। সে সময় চাকমা ভাষায় বহু নতুন নতুন গান, কবিতা ও নাটক রচিত ও মঞ্চস্থ হয়। চাকমা সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে চাকমা নৃত্যও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এরপর ক্রমেই চাকমা ভাষায় রচিত উপন্যাসও প্রকাশিত হয়েছে।
ইতিমধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে কম্পিউটারে ব্যবহারোপযোগী নানা ধরনের চাকমা ফন্ট। এতে চাকমাদের জন্য বাংলা বর্ণের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব বর্ণমালাও বই-পুস্তকাদির মুদ্রণকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের উদ্যোগে শিশু-কিশোরদের জন্য প্রাক্-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য চাকমা ভাষা ও বর্ণমালার পাঠ্যবই প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ধাপে ধাপে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে সেসব বই বিতরণ করা হচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।
বর্তমানে নানা কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে চাহিদার তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল। চাকমা বর্ণমালা বহু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের অজানা কিংবা স্বল্পজ্ঞাত। চাকমা শিক্ষকদের সবাই নিজেদের ভাষায় কথা বলতে পারলেও অনেকেই চাকমা ভাষায় লেখা বইপত্র থেকে যথাযথ পাঠদান করতে পারছেন না। তাঁদের এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কার্যকরী উদ্যোগ এবং তদারকির প্রয়োজন রয়েছে।
রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি—এ দুই পার্বত্য জেলায় পাহাড়িদের মধ্যে চাকমারা সংখ্যায় গরিষ্ঠ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চাকমা ভাষায় প্রকাশিত পাঠ্যবইগুলো প্রাথমিক স্কুলের চাকমা ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের ভালো করে পড়ানো গেলে শিক্ষাক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাবে। এর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাবও পড়বে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন, ভাষা ও সাহিত্য, সংযোগ ও অর্থনীতিতে অগ্রগতি আরও বেগবান হবে। চাকমা ভাষায় শিক্ষাদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা, অর্থ বরাদ্দ, উদ্যোগসহ সবার সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতা প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু একমাত্র বিএনপি স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে, ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ। তাই ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষেই সম্ভব। জনগণের ভোটে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে পুনর্গঠন করা হবে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের সমর্থন নেই এমন কোনো কাজ বিএনপি করে না। বিএনপিই একমাত্র দল যেটি নিজ দলের দোষী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
তিনি বলেন, বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে কারো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না।
বিএইচ