পৃথিবীজুড়ে কত রকমের সরকার! আমাদের দেশেও দেখেছি নানা আকারের ও প্রকারের শাসন। এখন চলছে অন্তর্বর্তী সরকারের আমল। এটি অবশ্য দ্বিতীয়বার এসেছে। প্রথমবার এসেছিল ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। তখন সরকারের হাল ধরেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। ওই সরকার নির্বাচন দিয়েছিল তিন মাসের মধ্যে। এখন চলছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। কত দিন চলবে জানি না।

দুই অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে একটা ফারাক আছে। প্রথমবার এটি এসেছিল সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। সেবার সরকারের ‘পতন’ হয়নি। একনায়ক এরশাদ পদত্যাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। তারপর তাঁকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে ঢোকানো হয়েছিল। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিয়ে দু–দুবার সংবিধান সংশোধন করিয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন স্বপদে ফিরে গিয়েছিলেন

গত বছর ৫ আগস্ট সরকারের পতন হলো। বলা হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। প্রচণ্ড এক গণবিদ্রোহে তাঁকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। সরকার বলতে তখন রাস্তায় ছাত্র-জনতা আর গণভবন-বঙ্গভবনে সেনাবাহিনী। ৮ আগস্ট তৈরি হয় ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। বলা হলো, এ সরকার জমে থাকা জঞ্জাল সাফসুতরো করে নির্বাচন দেবে। সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে ইউনূস সরকারকে বৈধতা দিয়ে দেন।

অন্তর্বর্তী সরকার বলতে আমরা বুঝি দুটি ‘স্বাভাবিক’ সরকারের মধ্যবর্তী সময়ের একটি অস্থায়ী সরকার। এটির দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই এটি অন্তর্বর্তী সরকার। অনুমান করি, এই সরকারের অধীনে একটি সাধারণ নির্বাচন হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা একটি ‘স্থায়ী’ সরকার গঠন করবেন। তখন সবকিছু চলবে শাস্ত্রমতে। শাস্ত্র হচ্ছে সংবিধান। তবে সংবিধান কোনো আসমানি কিতাব নয়। এটি প্রয়োজন ও সুবিধা অনুযায়ী কাটছাঁট কিংবা বানানো হবে। যাঁরা দেশের অভিভাবকত্ব দাবি করেন, এটি তাঁরাই করবেন।

তর্কের খাতিরে ধরে নিই, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। গণতন্ত্রের কথা বলে কিছু ব্যক্তি ও পরিবার সংবিধান যথেচ্ছ কাটাছেঁড়া করে তন্ত্র রেখে গণ বাদ দিয়েছিল। এটাকে আমরা নাম দিয়েছি স্বৈরতন্ত্র। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে হাঁটি–হাঁটি পা–পা করে স্বৈরবাবু যাত্রা শুরু করে ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তার ষোলোকলা পূর্ণ করেছিল। সরকার থেকে ‘আমরা’ উঠে গিয়েছিল। চালু হয়েছিল ‘আমি’।

১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার প্রকল্প চালু হলো। কিন্তু জেঁকে বসল পরিবারতন্ত্র। পর্যায়ক্রমে দুই পরিবারের শাসন, রহমান অ্যান্ড রহমান। ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা নির্বাসনে পাঠিয়ে চালু হয় পুরোপুরি রাজতন্ত্র। এর সঙ্গে জুটে যায় নানা বর্ণের মৌ-লোভী স্তাবক-মোসাহেব। তাঁরা তাঁকে বলতেন ‘দেশরত্ন’।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এই দেশরত্ন যখন তাঁর বোন আর কয়েকটি স্যুটকেস নিয়ে মন খারাপ করে গণভবন থেকে বেরিয়ে যান, স্তাবকেরা কেউ তাঁকে দেখতে আসেননি। ধীরে ধীরে আমরা জানতে পারলাম, রানির পরিবারের সবাই চোর। তাঁরা গণতন্ত্রকে মাটিতে পুঁতে চালু করেছিলেন চোরতন্ত্র। ১৯৭২ সালে শুরু হয়েছিল সামান্য কম্বল চুরি দিয়ে। শেষ হলো ব্যাংক লোপাট করে।

হাসিনাকে যেতে হবে, এটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁর তাবৎ রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত লেঠেলদের বাইরে তিনি তাকিয়েছিলেন নয়াদিল্লির দিকে। নয়াদিল্লিও বুঝতে পেরেছিল, হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া এই ঘোড়ার ওপর নতুন করে আর বাজি ধরা যায় না। হাসিনা এটা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি কিছুটা সময় পেয়েছিলেন। ওই সময়ে তিনি তাঁর পরিবার, স্বজন ও কাছের জ্ঞাতি-গুষ্টির লোকেদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন।

সবার শেষে যান তিনি। সঙ্গে বোন আর বোনের দেবর, যাঁর হাতে ছিল সশস্ত্র বাহিনী। নয়াদিল্লি তাঁর ভার আর না বইতে চাইলেও তাঁকে ফেলে দেয়নি। আশ্রয় দিয়েছে পরম মমতায়। এত কিছু পাওয়ার পর এতটা অকৃতজ্ঞ কি তারা হতে পারে? তবে একটা নিশ্চিত তালুক হারিয়ে নয়াদিল্লিরও মন খারাপ। আমরা এখনো অনেক কিছু জানি না, কীভাবে কী হয়ে গেল। পুরো ম্যাজিকটা বুঝতে আরও সময় লাগবে।

হাসিনার চলে যাওয়াটা ছিল একটা ‘নেগোশিয়েটেড সেটেলমেন্ট’। না গেলে তাঁর বিপদ হতো। যেভাবে লাখো মানুষ চতুর্দিক থেকে ধেয়ে আসছিল গণভবনের দিকে, ওই সময় সটকে না পড়লে তাঁর জান যেত। এটা হতো পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তি। নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধভাবে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নিঃশেষ করে দেওয়ার ফলে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া আর কোনো পথ রাখেননি তিনি। একই ভুল করেছিলেন তাঁর পূর্বসূরি শেখ মুজিবুর রহমান।

দেশে আগে একটা সরকার ছিল, এটা বোঝা যেত। এখন বোঝা যাচ্ছে না। অথবা আমরা অনেকেই বুঝতে পারছি না সরকারটা কোথায়? এটা কি ওয়াশিংটনে, প্যারিসে, শ্যামলীতে, নয়াপলটনে, মগবাজারে, হাটহাজারীতে নাকি মোনাইয়ের চরে। শাহবাগের চৌরাস্তা এখন পানিপথের ময়দান। সেখানে প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধ হচ্ছে। যাঁর যা দাবি আছে, তা–ই নিয়ে লোকেরা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। এটা চাই, ওটা চাই। তাঁরা বলছেন এসব হলো ‘আন্দোলন’। সমস্যা কী? টাকা দেবে গৌরী সেন। গৌরী সেনের তো টাকা নেই। তো টাকা আসবে কোথা থেকে? ট্যাক্স-ভ্যাট বাড়িয়ে গলায় গামছা দিয়ে গরিব মানুষদের কাছ থেকেই টাকা আদায় করা হবে। ২০ লাখ লোককে পুষতে ১৭ কোটি লোক কাফফারা দেবে। রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার এই এক দায়।

যাহোক, এখন আমরা আছি অন্তর্বর্তী জমানায়। প্রশ্ন হলো, এটা চলবে কত দিন? আমরা জানি, এ রকম টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হলে তার জের চলে অনেক দিন ধরে। ১৯১৭ সালের নভেম্বরে সেন্ট পিটার্সবার্গে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ঘটল রুশ বিপ্লব। তারপর গৃহযুদ্ধ চলল কয়েক বছর। স্থিতি আসতে সময় লেগেছিল অনেক। আশপাশের দেশ কম্বোডিয়ায় এটি চলেছে কয়েক বছর। পাশের দেশ মিয়ানমারে চলছে অনেক বছর ধরে।

এটাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়? চোখে যা দেখছি, মনে হচ্ছে একটা গণরাজ কায়েম হয়েছে। রাজনৈতিক সন্তরা অনেকেই অধীর হয়ে আছেন নির্বাচনের জন্য। ফেলে আসা চোরতন্ত্র আর আগামীর বহু আকাঙ্ক্ষিত সাধুতন্ত্রের অন্তর্বর্তী স্তরে এখন চলছে এক অভূতপূর্ব ‘মবতন্ত্র’। এই মবের মধ্যে আবার অনেক রঙের মানুষ আছেন। এই মব কোনোক্রমেই অবিভাজ্য নয়। এ নিয়ে একদিন হয়তো তৈরি হবে নতুন তত্ত্ব, লেখা হবে নতুন শাস্ত্র। অনেকে এ নিয়ে গবেষণা করবেন। তার তথ্য-উপাত্ত জোগাড়ের আয়োজন চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু কিতাব লেখা হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আরও হবে। পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত। শেষ কথাটি বলা যাচ্ছে না।

এ দেশে বাণী দেওয়ার জন্য পীর-মুরশিদের অভাব হয়নি কখনো। তাঁদের কেউ পলিটিক্যাল, কেউ আধ্যাত্মিক। দেশের এই উথালপাতাল সময়ে বেশ কজন ত্রাতার আবির্ভাব দেখছি। তাঁদের সমর্থকের অভাব নেই। তাঁরা ফতোয়া দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, এই মব হলো উচ্ছৃঙ্খল জনতা। এদের রুখতে হবে।

অন্যরা বলছেন, মব বলে গালি দেওয়ার অর্থ হলো পতিত স্বৈরাচারের গণবিরোধী ভূমিকাকে সমর্থন করা। উভয় দলই পরস্পরকে নির্মূল করার জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছে। আপনি যে আপনার মতটি নির্ভয়ে প্রকাশ করবেন, তার জো নেই। কিছু একটা বললেই আপনাকে কেউ না কেউ চেপে ধরবে। বলবে, ব্যাটা ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসর, সাম্রাজ্যবাদের দালাল, ধর্মদ্রোহী, সুবিধাবাদী। একদল আরেক দলকে বলছে তৌহিদি জনতা কিংবা নাস্তিক। ভিন্নমত মানেই শত্রু। অতএব তাকে ধরে পেটানো জায়েজ।

এরা আমাদের অতিপরিচিত। এদের ঠিকুজি, এদের অতীত আমাদের জানা। তাঁরা আগে কে কোথায় কী বলেছিলেন, কী করেছিলেন, সেসব এখনো স্মৃতিতে রয়ে গেছে তাজা। কী আর করা! শেষমেশ রবীন্দ্রনাথেই আশ্রয় নিয়ে মনে মনে বলি:

আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে—

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!

মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণতন ত র নয় দ ল ল কর ছ ল ন সরক র র রতন ত র হয় ছ ল পর ব র আগস ট করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে যমুনায় বিএনপির প্রতিনিধি দল

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনায় গেছে বিএনপির প্রতিনিধি দল। 

বুধবার বেলা ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্য তারা যমুনায় যান।  

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে উপস্থিত আছেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

বিএনপিদলীয় সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠকের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ বা কর্মসূচি কী হবে। নেতারা সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবেন। যদি ডিসেম্বরে নির্বাচনের নিশ্চিত আভাস পাওয়া যায়, তাহলে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেবে দলটি। নির্বাচনের সময়সীমা ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা না পেলে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ভাববে বিএনপি। 

এ বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে হবে। আমরা তো সবসময় বলে আসছি, আলোচনার মধ্য দিয়ে, ঐক্যের মধ্য দিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই। নিঃসন্দেহে এটি সম্ভব হবে এবং আমরা সবাই সফল হবো।’ চিকিৎসা শেষ ওই দিনই তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় ফেরেন। 

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সমকালকে জানান, সরকারের সঙ্গে এর আগের বৈঠকগুলোতে নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। বরং সরকারের ভেতরে-বাইরের নানা কথায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকেও তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন। সেই মতে বিএনপি অনুরোধ জানিয়েছিল, জনমনে বিভ্রান্তি দূর করতে প্রধান উপদেষ্টা যেন জাতির সামনে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি যেন নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এর বাস্তবরূপ দেখা যায়নি। এখন আবার শুরু হয়েছে এই সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় রাখার প্রচারণা। পাঁচ বছরের কথাও কেউ কেউ বলছেন। এর পেছনে সরকারের কারও কারও ইন্ধন থাকতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করে উল্টো পথে হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি– এ কেমন আচরণ? যখনই ডিসেম্বরের মধ্য নির্বাচনের দাবি করা হয়, তখনই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের জন্য এত মানুষ প্রাণ দিল, আন্দোলন করল, সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে আপত্তি কোথায়? কাদের সুবিধা দিতে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা আসছে? কেন অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে? এসব বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না পেলে দলীয় কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছিল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে। সংস্কার ইস্যুকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছিল বিএনপি। দলটি শুরু থেকে বলে আসছে, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত ভোটের ব্যবস্থা করা হোক। এ দাবির সপক্ষে তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও বাম ঘরানার দলগুলোর সম্মতি আছে। এর বিপরীত অবস্থানে আছে জামায়াতে ইসলামী, নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ কয়েকটি ইসলামী দল। তাদের দাবি, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। কথা হচ্ছে ছোট না বড় সংস্কার, এ নিয়েও।

বিএনপি নেতারা সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে করার পক্ষে। তারা বলছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচন-সংক্রান্ত সংস্কারগুলো কিংবা সংবিধান বাদে অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সরকারের নির্বাহী আদেশ কিংবা অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে পারে। শুধু সংবিধান সংস্কারের যেসব বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হবে সেসব নির্বাচিত সংসদে বাস্তবায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কোনো প্রয়োজন নেই। 

এ অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে সমমনা সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করছে বিএনপি। আজকের বৈঠকেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি না পেলে পরিস্থিতি অনুযায়ী করণীয় ঠিক করে ইতিবাচক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার ইচ্ছা দলটির। এরই মধ্যে তারা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকও শুরু করেছে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা। আবার আরেকজন বলেন জুনে নির্বাচন। আরেকজন বলেছেন, পাঁচ বছর এই সরকার থাকার দরকার, জনগণ চায়। একজন উপদেষ্টা বললেন, তারা নির্বাচিত। এদিকে সরকারের ঘনিষ্ঠ একজন বললেন, গণতন্ত্রের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারের সৃষ্টি হয়। এই যে কথাগুলো—এতে একটা বিভ্রান্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এতে নির্বাচন নিয়ে জনগণের মনে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। এটি পরিষ্কার করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাচ্ছি আমরা।’ সরকার নির্বাচনের নির্দিষ্ট রূপরেখা না দিলে বিএনপি কী করবে–এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে আলোচনা হোক। কী আলোচনা হয় দেখি, শুনি; তারপর এ বিষয়ে কথা বলব।’

কাল ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আগামীকাল বৃহস্পতিবার। বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৩ মার্চ ঐকমত্য কমিশনে সংস্কারের মতামত জমা দেওয়ার পর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। 

এর আগে ৬ মার্চ পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ‘স্প্রেড শিট’ (ছক আকারে) পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘গণমাধ্যম কর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে’
  • সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে: মান্না 
  • নির্বাচনের বিকল্প সংস্কার কেন, প্রশ্ন রিজভীর
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে: মান্না
  • সংস্কার কেন ভোটাধিকার আর গণতন্ত্রের বিকল্প হবে: প্রশ্ন রিজভীর
  • প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠিতে যা বলল বিএনপি
  • নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে যমুনায় বিএনপির প্রতিনিধি দল
  • বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্নের জবাবে যা বলল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
  • আজ ঢাকায় আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দুই কর্মকর্তা 
  • নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা চায় বিএনপি