বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের এক দিন আগেও পাইকারি পর্যায়ে ফুলের দর পড়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যশোরের গদখালী পাইকারি মোকামে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরাসহ সব ধরনের ফুলেরই এবার দরপতন ঘটেছে। এতে ফুলচাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন মানে বসন্ত উৎসব ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস—এই তিন দিবস ঘিরেই চাষিরা ফুল চাষ ও বাগানের পরিচর্যা করেন। এ বছর দিবস তিনটিকে কেন্দ্র করে গদখালী বাজারে শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ফুলচাষিরা। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে মনে করেন তাঁরা।

যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে এ বছর যশোরে শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য ছিল। ৪ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুটি দিবসে প্রায় ১৮ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। সামনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাজার কেমন হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের চাহিদা কম, দামও কম।

গতকাল ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি আজিজুর সরদার আড়াই হাজার গোলাপ, ৭০০ জারবেরা ও ২০০টি লিলিয়াম ফুল নিয়ে গদখালী মোকামে নিয়ে আসেন। তিনি প্রতিটি গোলাপ ৩ টাকা, জারবেরা ৪ টাকা ও লিলিয়াম ফুল ২০ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। আজিজুর সরদার বলেন, ‘এ বছর ১২ ফেব্রুয়ারি (গত বুধবার) সবচেয়ে বেশি দামে ফুল বেচাকেনা হয়েছে। তা–ও গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দাম পেয়েছি। তবে আজ (গতকাল) একদমই দাম ছিল না। এই সময়ে ফুলের ভালো দাম পাওয়ার আশায় সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু এ বছর মাঠে মারা গেছি। উৎপাদন খরচই উঠছে না।’

ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্ব ইজতেমাসহ ওরস ও শবে বরাত—এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরপর পড়ে গেছে। এগুলোর প্রভাব পড়েছে ফুলের বাজারে। তাতে ফুলের চাহিদা কম। ফলে দরপতন ঘটেছে।

তাওরা গ্রামের গোলাপচাষি মিলন হোসেন বলেন, ‘এ বছর গোলাপের বাজার ভালো না। প্রতিটি গোলাপের দাম সাত–আট টাকার বেশি কেউ বলছেন না। ব্যাপারীরা যে দাম বলেন, তাতে উৎপাদন খরচই উঠছে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম অর্ধেকের কম।’

কাকডাকা ভোরে শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যানে করে ফুলচাষিরা গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, মল্লিকা ও জিপসি ফুল এবং কামিনীপাতা নিয়ে গদখালী পাইকারি মোকামে আসেন। দুই হাজারের বেশি চাষি এই মোকামে ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেন। সেই ফুল সারা দেশের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নেন।  

পটুয়াপাড়া গ্রামের গোলাপচাষি মনিরুল ইসলাম বাবু জানান, ৩৬ শতক জমিতে তিনি গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন। ৩৩ শতকের এক বিঘা গোলাপ চাষ করতে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

ফুলচাষি জালাল উদ্দীন বলেন, ‘এ বছর ৩৮ শতক জমিতে ফুল চাষে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ২৫ হাজার টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি হয়েছে।’

ব্যবসায়ীরা জানান, মানভেদে প্রতিটি গোলাপ সাড়ে ৭ থেকে ৮, গ্লাডিওলাস ২ থেকে ১০, রজনীগন্ধা ১ থেকে ৪, জারবেরা ৫ থেকে ৮ ও প্রতি হাজার গাঁদা ফুল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং জিপসি ও কামিনীপাতা প্রতি মুঠা ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গদখালী ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, ‘এ বছর হঠাৎ গরম পড়ায় ফুল বেশি ফুটেছে। এতে গোলাপ ও গ্লাডিওলাসের দাম কমেছে। এ ছাড়া এ বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই মুসলিম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শবে বরাত পড়ায় ফুলের খুচরা ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিচ্ছেন না।’

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর জেলার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আবু তালহা বলেন, যশোর জেলায় ৬৩৭ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এখানে প্রায় তিন হাজার চাষি ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র এ বছর গদখ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দরপতনের ধারায় শেয়ারবাজার

ঊর্ধ্বমুখী ধারায় লেনদেন শুরু হলেও মঙ্গলবারও ফের বড় দরপতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। প্রায় ৬৪ শতাংশ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড দর হারিয়েছে। অন্যদিকে ২৪ শতাংশের দর বেড়েছে। এতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স হারিয়েছে ৩৭ পয়েন্ট। সূচকের এ পতন গত ১২ জানুয়ারির পর বা চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত রোববারও ৩৫ পয়েন্টের বেশি হারায় এ সূচক। দুই দিনে কমেছে ৭৩ পয়েন্ট।
প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৩৫৭টির কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩০টি দর হারিয়েছে, বেড়েছে ৮৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৮টির দর। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত ৩৭টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৬টির কেনাবেচা হয়েছে। যার মধ্যে ২৪টির দর কমেছে এবং বেড়েছে সাতটির। আইডিএলসি সিকিউরিটিজের এমডি মো. সাইফুদ্দিন বলেন, যখন নতুন করে কোনো আশা থাকে না, তখন বাজার এ ধরনেরই আচরণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ স্থগিত হলেও বস্ত্র খাতের শেয়ার দর হারাচ্ছে। এ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে এটি হতে পারে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কাগজ ও ছাপাখানা ছাড়া বাকি সব খাতের অধিকাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে। তুলনামূলক বেশি দর হারিয়েছে বস্ত্র, সিমেন্ট, তথ্যপ্রযুক্তি, পাট এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানি। পাঁচ খাতের লেনদেন হওয়া ৮৩ কোম্পানির মধ্যে ৬৬টির দর হারানোর বিপরীতে মাত্র ৯টির দর বেড়েছে। একক কোম্পানি হিসেবে প্রায় ১০ শতাংশ দর হারিয়ে পতনের শীর্ষে ছিল খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। ৭ শতাংশের বেশি দর হারিয়ে পরের অবস্থানে ছিল সোনারগাঁ টেক্সটাইল, এসকে ট্রিমস, এসকোয়্যার নিট, এসএস স্টিল এবং মিথুন নিটিং।
সার্বিক দরপতনের মধ্যেও ডিএসইতে শেয়ার কেনাবেচা প্রায় ৩২ কোটি টাকা বেড়ে ৪৪৬ কোটি টাকা ছাড়ায়। এর মধ্যে এককভাবে ২৪ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে শীর্ষে ছিল ম্যারিকো বাংলাদেশ। ২১ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে পরের অবস্থানে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দরপতনের ধারায় শেয়ারবাজার