Samakal:
2025-03-29@09:59:14 GMT

শেষের মঞ্চে রিয়াদ-মুশফিক

Published: 14th, February 2025 GMT

শেষের মঞ্চে রিয়াদ-মুশফিক

একচল্লিশ চলছে তাঁর যেন একুশের গতিতে! তারপরও এই আসরই যে তাঁর শেষ, সেটা ঘোষণা দিয়েই নামছেন আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনিই যে সবচেয়ে বয়সী, তাতে সন্দেহ নেই। তাঁর পরেই যারা বয়সে সিনিয়র রয়েছেন, তাদের মধ্যে আটত্রিশ ছুঁইছুঁই ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং ছত্রিশের বিরাট কোহলিও ইঙ্গিত দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই এই ফরম্যাট থেকে অবসর নেবেন। 

তবে আটত্রিশের মুশফিকুর রহিম কিংবা ঊনচল্লিশ চলা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এখনও তেমন কোনো ঘোষণা দেননি। তবে বাস্তবতা এটাই যে তাদের জন্য এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই আইসিসির শেষ আসর হতে যাচ্ছে। এবং দলের এই দুই সিনিয়রের জন্য শেষ চ্যালেঞ্জটাও হতে যাচ্ছে দুবাই আর রাওয়ালপিন্ডিতে ভালো কিছু করার। শেষবার ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে এই টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন তারা। সেবার সেমিফাইনালে উঠেছিল দল। অতীত বলে সেবার তারা দু’জনই দারুণ কিছু ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন দলকে। এবারও তাদের অভিজ্ঞতা কাজে দেবে বলেই মনে করছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ‘তাদের অভিজ্ঞতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রিয়াদ ভাই, মুশফিক ভাইয়ের কাছে চাওয়া, তারা যেন নিজেদের অভিজ্ঞতা সবাইকে দেন। তাদের ভাবনা যেন মাঠের ভেতর শেয়ার করেন।’ ওয়ানডে ফরম্যাটের এই চ্যাম্পিয়ন্স টুর্নামেন্ট খেলতে গতকাল রাতে দুবাই ছেড়েছে বাংলাদেশ দল।

যেখানে ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নামবেন মুশফিকরা। এর আগে অবশ্য সোমবার সেখানে পাকিস্তান ‘এ’ দল খ্যাত শাহিনসের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন তারা। আসরে অংশ নেওয়া আট দলের মধ্যে বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানই এই মাসে কোনো ওয়ানডে সিরিজ খেলেনি। সেই হিসেবে প্রস্তুতির ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। যদিও আফগানরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে একটি অনুশীলন ম্যাচ খেলবে। সঙ্গে পাকিস্তানের শাহিনসের বিপক্ষে দুটি। সেই হিসেবে পিছিয়ে মুশফিকরা। 

যদিও অধিনায়ক শান্ত বলে গিয়েছেন, ‘এই সংস্করণে আমরা ছোটবেলা থেকে অনেক খেলি। সুতরাং মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না।’ আসলেই কি ব্যাপারটি তেমন। বাংলাদেশ সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে গেল ডিসেম্বরে উইন্ডিজের মাটিতে। মুশফিক তাঁর শেষ ওয়ানডে খেলেছেন এরও আগে শারজাহতে নভেম্বরে। মুশফিকের ব্যাট থেকে সর্বশেষ ওয়ানডে সেঞ্চুরি এসেছে ২৭ ম্যাচ আগে ২০২৩ সালের মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। মাঝে হাফ সেঞ্চুরি ছয়টি। মুশফিক নিজেও হয়তো এই পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নন। রেকর্ড বলে আইসিসি টুর্নামেন্টে ভালো করার আগে মুশফিক তাঁর আগের সিরিজগুলোতে পারফর্ম করে থাকেন। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ভারতের বিপক্ষে ৭৯ ও ৬১ রানের দারুণ দুটি ইনিংস খেলেছিলেন। এর আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হাফসেঞ্চুরি কাছাকাছি দুটি কার্যকরী ইনিংস ছিল তাঁর। ওই সিরিজে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও তিনটি ম্যাচে দারুণ কিছু পারফর্ম করেছিলেন। তারপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নেমে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন।

সেই হিসেবে রিয়াদ এবারও দারুণ কিছু করার ইঙ্গিতই রাখছেন। সর্বশেষ চারটি ওয়ানডেতে তাঁর স্কোর ৮৪*, ৬২, ৫০* ও ৯৮! তা ছাড়া বিপিএলেও কার্যকরী কিছু ইনিংস খেলেছেন তিনি। এবার আসর শুরুর আগে রিয়াদের মতো অন্য দলের অভিজ্ঞরাও তাদের শেষের চ্যালেঞ্জে ভালো কিছু করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। 

এই তো সেদিন রোহিত শর্মা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৯ রান করলেন, কোহলিও আহমেদাবাদে পেলেন ৫২ রান। নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়াসন লাহোরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৩৩ করে দলকে জেতালেন। প্রোটিয়াদের মধ্যে অভিজ্ঞ ব্যাটার ক্লাসেন করাচিতে ৮৭ রান করলেন। আর পাকিস্তানের অভিজ্ঞ ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান তো সালমান আগাকে নিয়ে রেকর্ড রান তাড়া করে ম্যাচই জেতালেন। হাওয়া বলছে, এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসরে হয়তো বয়স্করা বাজিমাত করবেন; সেখানে মুশফিক-রিয়াদও থাকবেন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিঙ্গা সংকট: উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন করার প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত

রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধানের লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে জানিয়েছে, বুধবার (২৬ মার্চ) মালয়েশিয়া এবং ফিনল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতির ওপর উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের পরিধি, পদ্ধতি, বিন্যাস এবং সংগঠন-সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মো. সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী উন্মুক্ত বিতর্ক অধিবেশনে হস্তক্ষেপ করেন। রাশিয়া বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব দেয়, তবে বাংলাদেশ তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় সালাহউদ্দিন নোমান প্রস্তাবটি ভোটাভুটির জন্য উত্থাপন করেন।

আরো পড়ুন:

টেকনাফে নৌকাডুবি: ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার, বিজিবি সদস্য নিখোঁজ

টেকনাফে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা ডুবি: এক নারীর মরদেহ উদ্ধার 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাধারণ পরিষদের সভাপতি প্রস্তাবে ওপর ভোট আহ্বান করেন। ১৪১টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কোনো ভোট পড়েনি। তবে ১০টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এই প্রস্তাবটি গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, এটি এমন এক সময়ে গৃহীত হলো, যখন সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর একটি বিশেষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কয়েক দিনের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে চলে আসে। সেখানে তাদের জন্য তৈরি হয় অস্থায়ী আশ্রয়শিবির। 

উখিয়া ও টেকনাফ অঞ্চলে আগে থেকেই প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা ছিল, যারা বিভিন্ন সময় নিপীড়নের মুখে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। সব মিলে এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশকে বইতে হচ্ছে।

পূর্বাপর

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের  শেষ দিকে মিয়ানমারের তৎকালীন অং সান সু চির সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়। সেপ্টেম্বরে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও হয়। তবে সেই চুক্তির আর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি রোহিঙ্গারা, ফলে ভেস্তে যায় আলোচনা। ভেস্তে যায় রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কার্যক্রমও।

এরপর আসে কোভিড মহামারি। রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। তাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন ধাক্কা।

এর মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের যুদ্ধের তীব্রতার মধ্যে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আলোচনাতেই কম আসছে।

প্রত্যাবাসনের আলোচনা আপাতত বন্ধ; উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। এর মধ্যে সম্প্রতি আরও ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের তথ্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো বড় পরিসরে সম্পৃক্ত করার কথা বলছে।

এর অংশ হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে ‘সব অংশীজনের সম্মেলন’ আয়োজনের প্রস্তাব দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিজে চোখে দেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান দেখেন মিয়ানমারের ভেতরেই। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তিনি তার দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে যান।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রোহিঙ্গা সংকট: উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন করার প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত