স্বামী ছিলেন সাঁতারু। জিতেছিলেন বিভিন্ন ইভেন্টে পদকও। কিন্তু, সাঁতার না জানা স্ত্রীকে বাঁচাতে হ্রদে ঝাঁপ দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বরণ করছিলেন মৃত্যু। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন স্ত্রীকে। তিনদিন পর যখন তাদের মরদেহ ভেসে উঠে, তখন দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী দুইজনই আলিঙ্গনরত।

মৃত্যুও যেন আলাদা করতে পারেনি তাদের। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার এই স্মৃতি ধরে রাখতে রাঙামাটিতে স্থাপন করা হয়েছে দেশের প্রথম লাভ পয়েন্ট। যেখানে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করেন।

সেদিন কী ঘটেছিল?

২০১৪ সালের ১৯ মার্চের এক চৈত্রের দুপুর। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আলাউদ্দিন পাটোয়ারী তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী আইরিন সুলতানা লিমাকে নিয়ে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ভ্রমণে বের হন।

নৌকা যখন হ্রদের ঠিক মধ্যখানে, সে সময় কালবৈশাখীর ঝড় উঠে। বাতাসের তীব্র বেগের কারণে তাদের নৌকাটি দুলতে শুরু করলে লিমা ভয়ে পানিতে ঝাঁপ দেন। স্ত্রীকে বাঁচাতে আলাউদ্দিনও হ্রদের পানিতে লাফিয়ে পড়েন। এভাবেই কাপ্তাই হ্রদে নিখোঁজ হন তারা।

ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নিখোঁজ স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধারে হ্রদে অভিযান শুরু করে। দুদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তাদের সন্ধান মেলেনি। ২২ মার্চ সকালে তাদের মরদেহ ভেসে উঠে। উদ্ধারকারী দল দুজনের মরদেহ হ্রদের তীরে নিয়ে আসলে এলাকাবাসী তাজ্জব হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী দুজনই আলিঙ্গনরত।

প্রত্যক্ষদর্শী আরিফ আহমেদ নামে একজন বলেন, ‘‘সেদিন দুজনকে আলিঙ্গনরত অবস্থায় দেখে মনে হচ্ছিল, মৃত্যুও যেন তাদের আলাদা করতে পারেনি। মৃত্যুর সময় জড়িয়ে থাকার কারণে এবং দুদিন পানিতে থাকায় শক্ত হয়ে যাওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ আলাদা করতে উদ্ধারকারীদের বেগ পেতে হয়েছিল। ভালোবাসার এমন বিরল দৃশ্য আপ্লুত করেছিল উপস্থিত সবাইকে।’’

আলাউদ্দিনের বড় ভাই সে সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তার ভাই সাঁতারু ছিল। সাঁতারে তার পদক থাকার পরও স্ত্রীকে বাঁচাতে না পেরে নিজেও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন।

দেশের প্রথম লাভ পয়েন্ট

আলাউদ্দিন-লিমার ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যে জায়গায় তাদের মরদেহ দুটি উদ্ধার করে রাখা হয়, সেই স্থানে ২০১৮ সালে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম লাভ পয়েন্ট।

শুধু এই দম্পতি নয়, সারা পৃথিবীর সব প্রেমিক-প্রেমিকার চিরন্তন ভালোবাসার প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এই স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছে। পর্যটকরা ঘুরতে এসে লাভ পয়েন্টের পাশে আলাউদ্দিন-লিমার শোকগাঁথার কাহিনী পড়ে আবেগে আপ্লুত হন।

রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসা ডা.

লিমন বসু বলেন, ‘‘লাভ পয়েন্টকে প্রথমে সাধারণ একটি স্থাপনা ভেবেছি। কিন্তু, এর পেছনে যে এত মর্মস্পর্শী ঘটনা আছে তা জানতাম না। এমন ভালোবাসা বর্তমান সময়ে দুর্লভ।’’

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মো. জালাল বলেন, ‘‘খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা। এদের ভালোবাসা থেকে বর্তমান প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীরও অনেক কিছু শেখার আছে।’’

লাভ লক

লাভ পয়েন্টের আরেকটি বিশেষত্ব হলো লাভ লক। নিজেদের ভালোবাসার অমরত্ব প্রার্থনা করে প্রেমিক-প্রেমিকরা বা দম্পতিরা এই লাভ পয়েন্টে তালা ঝুলিয়ে তার চাবি কাপ্তাই হ্রদে ফেলে দেন। লাভ পয়েন্টে গেলে চোখে পড়বে শত শত তালা ঝুলে আছে। প্যারিসের শিন নদীর উপরের লাভ লক ব্রিজের ধারণা থেকেই এখানে লাভ লক গড়ে তোলা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, পোল্যান্ডের ক্রোকো, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন, ইতালির ভ্যানিস, ইংল্যান্ডের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিসসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লাভ পয়েন্ট থাকলেও বাংলাদেশে নির্মিত এটিই দেশের প্রথম লাভ পয়েন্ট। তবে, পরবর্তীতে দেশের আরো অনেক স্থানেই লাভ পয়েন্ট নির্মিত হয়েছে।

ঢাকা/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

ধোনির বুড়ো হাড়ের ভেলকি

বিজয় শঙ্কর ১৫তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার পর জয়ের জন্য ৩০ বলে ৫৬ রান দরকার ছিল চেন্নাই সুপার কিংসের। হাতে ৫ উইকেট। এমন সময় সাতে ব্যাটিংয়ে নামলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। দেখালেন বুড়ো হাড়ের ভেলকি। ১১ বলে করলেন অপরাজিত ২৬। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের ১৬৬ রান তাড়া করতে নেমে চেন্নাইও ম্যাচটা জিতল হেসেখেলে। ৩ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে চেন্নাই।

আরও পড়ুনপিএসএলে বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করে পেলেন চুল শুকানোর মেশিন১ ঘণ্টা আগে

জয়ের জন্য শেষ ওভারে ৫ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের। রান তাড়াটা এমন সহজ হয়ে আসার কারণ ষষ্ঠ উইকেটে ধোনি ও দুবের ২৮ বলে অবিচ্ছন্ন ৫৮ রানের জুটি। যেখানে ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় হিসেবে নামা দুবের অবদান ১৭ বলে ২৬ আর ৪৩ বছর বয়সী ধোনির অবদান ১১ বলে ২৬! এর মধ্যে ১৭তম ওভারের শেষ বলে শার্দুল ঠাকুরকে এক হাতে মারা ধোনির ছক্কাটি চেন্নাই সমর্থকদের মনে থাকবে বহুদিন। ম্যাচ শেষ করে আসায় কিংবদন্তি হয়ে ওঠা এই ধোনিকে পুরোনো চেহারায় দেখে নিশ্চয়ই খুশি হবেন চেন্নাইয়ের সমর্থকেরা।

জয়ের পর লক্ষ্ণৌর খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন ধোনি

সম্পর্কিত নিবন্ধ