আগের দুই পর্বে আমরা রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব কাজ করতেন, তার কিছু কিছু আলোচনা করেছি। সেই আলোচনার এটি শেষ পর্ব। এখানে আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর আরও কিছু আমলের কথা বলব।

১২. শেষ রাতে রাসুল (সা.)-এর দোয়া-মোনাজাত এবং আল্লাহ্‌র কথা ভেবে ক্রন্দনের বর্ণনা বিভিন্ন হাদিসে পাওয়া যায়। এ সময় তিনি বিভিন্ন দোয়া পড়তেন এবং কাঁদতেন। (বুখারি, হাদিস: ১১২০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৭২৯; মুসলিম, হাদিস: ৭৭২; তিরমিজি, হাদিস: ২৬২)

১৩.

রাসুল (সা.) তিন রাকাত বিতর পড়তেন। বিতর পড়ার জন্য স্ত্রীকেও মাঝেমধ্যে জাগিয়ে তুলতেন। প্রথম রাকাতে সুরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়তেন। কখনও কখনও সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়তেন। (বুখারি, হাদিস: ৫১২, ৯৯৭; মুসলিম, হাদিস: ৭৪৪; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৭২০; তিরমিজি, হাদিস: ৪৬২)

আরও পড়ুননামাজ ও কোরআন পড়ার আগে অজু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোরআনে০৭ আগস্ট ২০২৩

শেষ রাতে জেগে উঠবেন, এ ব্যাপারে যাঁদের আস্থা আছে, তাঁদের শেষ রাতে বিতর পড়াই উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ নামাজ করো। (বুখারি, হাদিস: ৯৯৮)

শেষ রাতে জেগে ওঠার ব্যাপারে আস্থা না থাকলে এশার নামাজের পর বিতর পড়ে নেওয়াই উচিত। (আল-মুহিতুল বুরহানি, ২/২৬৫; ফতোয়া খানিয়া, ১/২৪৪; ফাতহুল কাদির, ১/৪০৯; শরহুল মুনইয়া, পৃষ্ঠা ৪২১; মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা ২১১)

আয়েশা (রা.)–র বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে নামাজ আদায় করতেন, তখন আমি তাঁর বিছানায় আড়াআড়িভাবে ঘুমিয়ে থাকতাম। অতঃপর তিনি যখন বিতর পড়ার ইচ্ছা করতেন, তখন আমাকে জাগিয়ে দিতেন এবং আমিও বিতর আদায় করে নিতাম। (বুখারি, হাদিস: ৯৯৭)

আরও পড়ুনজুমার খুতবা শুনে গাছের গুঁড়ি কেঁদেছিল০৭ আগস্ট ২০২৩

১৪. বিতরের নামাজের পর রাসুল (সা.) দোয়া পড়তেন। বিতর নামাজ শেষে তিনবার বলতেন, সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস। অর্থাৎ, মহামালিক মহাপবিত্র সত্তার জন্য মহিমা। তৃতীয়বার একটু টেনে লম্বা করে দোয়াটি পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৬,৯৪৩; তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৬৬; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫,৩৫৪)

১৫. জীবনের শেষ দিকে রাতের শেষ প্রহরে রাসুল (সা.) জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করতেন। তাঁর এ ঘটনার সাক্ষী আয়েশা (রা.)। তিনি বলেন, প্রতি রাতের শেষ দিকে রাসুল (সা.) জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে যেতেন এবং দোয়ায় বলতেন, মুমিন নিবাসীদের এ জায়গায় আসসালামু আলাইকুম! তোমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তোমরা তা পেয়েছ। অপেক্ষা করছ আগামী দিনের। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরাও আসব। হে আল্লাহ! বাকি গারকাদবাসীকে ক্ষমা করে দিন। (মুসলিম, হাদিস: ৯৭৪; সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ৩২৩৭)

আরও পড়ুন কতদিন থাকবেন, মেহমান হয়ে০৭ আগস্ট ২০২৩

১৬. কখনও কখনও রাসুল (সা.) এ সময়ে তাঁর মেয়ে ফাতেমার (রা.) বাসায় গিয়ে তাদের তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য ডেকে তুলতেন। আলি ইবনে আবু তালিব (রা.) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) এক রাতে তাঁর কন্যা ফাতিমার কাছে এসে বললেন, তোমরা কি নামাজ আদায় করছ না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের আত্মাগুলো তো আল্লাহতায়ালার হাতে রয়েছে। তিনি যখন আমাদের জাগাতে ইচ্ছা করবেন, জাগিয়ে দিবেন। আমরা যখন একথা বললাম, তখন তিনি চলে গেলেন। আমার কথার কোনো জবাব দিলেন না। পরে শুনতে পেলাম, তিনি ফিরে যেতে যেতে আপন উরুতে করাঘাত করছিলেন এবং কুরআনের এ আয়াত (সুরা কাহাফ,আয়াত: ৫৪) তিলাওয়াত করছিলেন, মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্কপ্রিয়। (বুখারি, হাদিস: ১,১২৭; মুসলিম, হাদিস: ৭৭৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৫,৫৭১)

১৭. রমজান মাসে অথবা বছরের অন্য যে কোনো মাসের যে কোনো দিনে রোজা রাখার নিয়ত থাকলে রাসুল (সা.) এ সময় সাহরি খেতেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সাহরি খাও। কারণ, সাহরিতে বরকত রয়েছে। (বুখারি, হাদিস: ১৯২৩)

তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি রোজা রাখার নিয়ত করেছে, সে অল্প করে হলেও যেন সাহরি খায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৯০০৯।) অন্য বর্ণনামতে, এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও যেন সাহরি করে।(প্রাগুক্ত, হাদিস: ৯০১০।) 

আরও পড়ুনকোরআন শুনে একদল জিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন০৬ আগস্ট ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য আল ল হ আগস ট করত ন পড়ত ন

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের কোথাও শেখ পরিবারের নামফলক থাকতে পারবে না: অলি আহমদ

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, দেশের কোথাও শেখ পরিবারের নামফলক থাকার সুযোগ নেই, কারণ তারা দেশদ্রোহী। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার অধিকারও হারিয়েছে।

অলি আহমদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবার যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। তারা গণহত্যাকারী দল। দ্রুত তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।

আজ সোমবার দুপুরে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকার সুপরামর্শ গ্রহণ করছে না, এমন অভিযোগ করে অলি আহমদ বলেন, ‘অতীতে আমরা ১২৭টি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা জানি না, প্রধান উপদেষ্টা এগুলো দেখেছিলেন কি না, না দেখলে দেখার অনুরোধ করব। আমাদের পরামর্শ এলডিপি কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয়; বরং এটা জনগণের ভালোর জন্য।’

অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এলডিপির শীর্ষ নেতা বলেন, সরকার গঠনের আট মাস পরে এখনো টাকায় মুজিবের ছবি কেন? মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো অবদান নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে তাঁদের অনৈতিক সুবিধাগুলো অনতিবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান অলি আহমদ। তাঁরা জনগণের করের টাকায় অবৈধ সুবিধা কেন নেবেন, এমন প্রশ্ন তুলে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানান।

আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ‘পালিত খুনি বাহিনীর’ কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, ‘অভিযুক্ত ডিসি ওসিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাঁদের শাস্তি হচ্ছে না কেন?’ তিনি মনে করেন, গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে।

দেশের ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান পৃথক অস্তিত্ব বহন করে উল্লেখ করে এলডিপির সভাপতি বলেন, একাত্তর ও চব্বিশ দুটো এক জিনিস এক নয়। অনেকে দুটি প্রেক্ষাপটকে একীভূত করে বিবেচনা করছেন। কিন্তু এটা পাগলামির শামিল। দুই ইতিহাসের কোনোটিকে হেয়প্রতিপন্ন করার সুযোগ নেই।

দেশ গড়তে প্রবীণদের ভূমিকা উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, নবীনদের মেধা ও যোগ্যতার সঙ্গে প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করতে হবে। স্বপ্নের দেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত গাড়ির তালিকা তৈরি, বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, রাস্তার ওপর বসানো হাটবাজার উচ্ছেদ, দুর্নীতি বন্ধে অনলাইনে টেন্ডার আয়োজন, মানুষকে উন্নত সেবা দিতে বিশেষায়িত একাধিক হাসপাতাল স্থাপন এবং দেশের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান অলি আহমদ।

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয় এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, কে কিউ সাকলায়েন ও অধ্যাপক ওমর ফারুক। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এলডিপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়নের ডাকে পালিত স্বাধীনতা দিবস
  • আবুধাবি এখন থেকে আফগানিস্তানের হোম ভেন্যু
  • তাজউদ্দীন আহমদের স্বহস্তে লেখা মুক্তিযুদ্ধের অজানা দলিল: আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সারসংক্ষেপ
  • নদীর তীর ছাড়ছে না বালুখেকোরা
  • ইতিহাসই স্বাধীনতার প্রেরণা
  • সেকালের হাট এবং ঈদের ব্যস্ততা নিয়ে কিছু কথা
  • 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'ই থাকছে, প্রতিপাদ্য ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’
  • নাম মঙ্গল শোভাযাত্রাই থাকছে, প্রতিপাদ্য ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’
  • টাকার বিনিময়েও মিলল না সিট, শিশুর মৃত্যুর খবরে দালালকে পিটুনি
  • দেশের কোথাও শেখ পরিবারের নামফলক থাকতে পারবে না: অলি আহমদ