মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের মাঠ সবুজ হয়ে উঠছে বোরো ধানে। গেল মৌসুমে বন্যার কারণে এসব মাঠ থেকে আমন ধান ঘরে তুলতে পারেননি হাওরপারের কৃষকেরা। বোরো চাষে আমনের সেই ক্ষতি হয়তো পূরণ হবে না। তবু ঘুরে দাঁড়াতে কৃষকের সব মনোযোগ এখন এই মাঠের দিকেই। কৃষকদের কেউ সেই জমিতে আগাছা পরিষ্কার করছেন, কেউ পোকা দমনে ওষুধ স্প্রে করছেন। কেউ খেতে ছিটিয়ে দিচ্ছেন সার। কেউ দিচ্ছেন সেচ। চলছে ধানখেতের নানামুখী পরিচর্যা।

কাউয়াদীঘি হাওরপারজুড়ে এখন যত দূর চোখ যায়, সবুজের বিস্তৃতি। এই সবুজ সম্প্রতি রোপণ করা বোরো ফসলের। মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে বিস্তীর্ণ কাউয়াদীঘি হাওর ও হাওরপারের সব দিকেই স্থির, শান্ত সবুজভূমি অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে। মাথা তুলে দাঁড়ানো বোরো ধানের গোছা মৃদু বাতাসে দুলছে। হাওরের দিগন্তজুড়ে চোখজুড়ানো ধুধু সবুজ প্রকৃতি, আর কিছু নেই।

সম্প্রতি সদর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরপারের একাটুনা ও আখাইলকুড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মাঠে এরই মধ্যে সবুজ হয়ে উঠেছে বোরো ধানের চারা। হাওরে যাওয়ার পথে চোখে পড়েছে কিছু গ্রামের বাড়ির আশপাশে দু–এক টুকরা জমিতে হালি চারা রোপণ করা হচ্ছে, দু–একটি স্থানে রোপণের জন্য চারা তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় মাঠেই চারা রোপণের কাজ পৌষের শেষ ও মাঘের শুরুতে শেষ হয়ে গেছে।

হাওরের বিরাইমাবাদসহ কয়েকটি মাঠে দেখা গেছে, ধানের চারা শুধু মাথা তুলেই দাঁড়ায়নি, ধানের গোছা সবল হয়ে সেই গাছ বাতাসে দুলছে। কোনো খেতে কৃষক আগাছা পরিষ্কার করছেন, কোনো খেতে আগাছা ও পোকা দমনে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। অনেক কৃষক দুপুরবেলায় খেত দেখতে বেরিয়েছেন। এ রকম সকাল-বিকাল অনেকেই খেতে পানি ঠিকঠাক মতো আছে কি না, খেতে পোকার আক্রমণ হয়েছে কি না, এসব ঘুরে ঘুরে দেখছেন। বিরাইমাবাদ এলাকা থেকে হাওরপার ও হাওরের যত দূর চোখ যায়, তত দূর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ বোরো ধানের সবুজ।

দুপুরে খেতের আগাছা পরিষ্কার করে বাড়ি ফেরার পথে বিরাইমাবাদের ইসরাইল মিয়া বলেন, ‘মাঘ মাসের প্রথম দিকেই চারা রোয়ার (রোপণ) কাজ শেষ অই (হয়ে) গেছে। এখন মাঝেমাঝে কিছু পোকার আক্রমণ আছে। এ ছাড়া সমস্যা দেখছি না। এখন ঘাস বাছরাম (আগাছা বাছাই করা হচ্ছে)। ধান তো ভালাই অর দেখরাম (হচ্ছে দেখছি)।’ তিনি জানান, তিনি ৩২ কিয়ার (১ কিয়ার=৩০ শতাংশ) জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। এখন আগাছা পরিষ্কারের কাজ চলছে। আগাছা পরিষ্কার করাতে একজন শ্রমিককে রোজ ৬০০ টাকা দিতে হয়। কিয়ারপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। তিনি ব্রি-২৯ ও ৮৯ জাতের ধান চাষ করেছেন।

হাওরের একটি এলাকার খেতে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন মো.

জাহাঙ্গীর। স্প্রে শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে হাঁটতে হাঁটতে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ধানের রং সুন্দর আছে। ধান দেখতে ভালা আছে। তবে কিছু জমিতে পোকা ধরছে। ওষুধ দিলাম, যাতে ধান নষ্ট করতে না পারে। ১৪ কিয়ার জমি চাষ করছিলাম। দুবার সার দেওয়ার পর ধান পানিয়ে নষ্ট করছে। জানে মারি লাইছে (প্রাণে মেরে ফেলেছে)।’ তিনি জানান, ১৩ কিয়ার জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। তবে বোরো ফসল দিয়ে আমনের ক্ষতি পোষানো কঠিন হবে বলে মনে করেন।

বোরো চাষে আমনের ক্ষতি পোষানো কঠিন বলে মনে করেন পাড়াশিমইল গ্রামের রনি আহমদ মিজু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সময়মতো পানির অভাবে আমরা দেরিতে ধান রোপণ করছি। তবে আমাদের রোপণ শেষ। এবার আমাদের এলাকার (পাড়াশিমইল) কেউ আমন ধান পায়নি। বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গিয়েছিল। এখন বোরো ফসলই ভরসা। কিন্তু বোরো ফসল দিয়ে আমনের ক্ষতি পোষানো যাবে না। সারের দাম বাড়ছে, ওষুধের দাম বাড়ছে। আমরা কৃষকেরা সম্পূর্ণ ধরা খাইছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মৌলভীবাজারে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর। এর মধ্যে কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে মনু সেচ প্রকল্পে আছে ১০ হাজার হেক্টর।

হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন একাটুনা ও আখাইলকুড়ার কৃষকেরা আমন চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই এবার গত বছরের তুলনায় অধিক পরিমাণে বোরো চাষাবাদ করছেন। তবে কৃষকদের মধ্যে একটা শঙ্কা আছে। বৈশাখ মাসে ধান পাকার সময় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে অনেক কৃষকের ধান তলিয়ে যায়। ওই সময় মনু সেচ প্রকল্পের কাশিমপুর পাম্প হাউস যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে কৃষকেরা ঘরে ধান তুলতে পারবেন। সদর উপজেলার খোজারগাঁও, গল্লা, বুড়িকোনা, বিরাইমাবাদ, কালাইউড়া, খৈসাউড়া, রসুলপুর, রায়পুর, বানেশ্রী, পাড়াশিমইল, সানন্দপুর, কান্দিগাঁও, জগৎপুর, জুমাপুর, কাদিপুর, মিরপুর, পালপুর, কচুয়া, একাটুনা, বড়কাপন, উলুয়াইল, লালাপুরসহ হাওরপারের বিভিন্ন মাঠে বোরোর আবাদ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাওরের দিকে আবাদ প্রায় শেষ। সারা জেলায় এরই মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি আবাদ হয়ে গেছে। মনু সেচ প্রকল্পের আওতায় কাউয়াদীঘি হাওরের সবটাই আবাদ হবে। এখন উপরের দিকে কিছু খেতে রোপণ বাকি আছে। খেতে কিছু পোকার আক্রমণ আছে, তবে তা কম।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল হ ওরপ র র চ ষ কর করছ ন আমন র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পুড়ে যাওয়া মার্কেটের মালিকের কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন যুবদল নেতা, অডিও ভাইরাল

খুলনা নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে পুড়ে যাওয়া অস্থায়ী মার্কেটের মালিক রাসেল মিয়ার সঙ্গে যুবদল নেতা নাজমুল হুদা সাগরের চাঁদা চাওয়ার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

গত ১৯ মার্চ আগুনে পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেট পুড়ে যায়। ফোনালাপটি এর কয়েকদিন আগের। সাগর খুলনা মহানগর যুবদলের সদ্য সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। যুবদলের ওই কমিটির সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু গত ২৩ মার্চ রাতে মুক্তিপণের দাবিতে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ফোনালাপের শুরুতে মার্কেট মালিক রাসেলকে সাগর বলেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছো না, এটা কি ঠিক হচ্ছে তোমার?’

জবাবে রাসেল বলেন, ‘ভাই, আমি আছি খুব বিপদে।’

তখন সাগর বলেন, ‘তুমি আমারে বলছো টাকা দিয়ে যাবা, তুমি পাঁচ মাসেও আমার সঙ্গে যোগাযোগই করলে না। এটা তোমার কাছে আমি প্রত্যাশা করি?’

রাসেল বলেন, ‘ভাই টাকা ইনকাম করাই এখন কঠিন হয়ে গেছে।’

উত্তরে সাগর বলেন, ‘কেন ইনকাম কঠিন হয়ে গেল কেন? তুমি আমারে প্রথমে বললা ৫০ হাজার করে দিবা পিকচার প্যালেস থেকে। সেদিন বললা না ভাই ৩০ হাজার করে দিব। একটা টাকাও দিলা না। তুমি তো মেলাটেলা করতেছো।’

মার্কেট মালিক বলেন, ‘আমি মেলা করছি না। মন্টুর মেলায় কয়েকটি স্টল দিয়েছি।’ এরপর আরও কিছু কথা হয় দু’জনের মধ্যে।

শেষে যুবদল নেতা বলেন, ‘যাই হোক তুমি আমার সঙ্গে যে কমিটমেন্ট করেছো সেটা কি রাখবা, না রাখবা না ? সেটা বললেই হয়ে যায়।’

মার্কেট মালিক বলেন, ‘এখন পিকচার প্যালেসের যে অবস্থা, আছি খুব বিপদে। দোকানদারদের বেচাকেনা কম। টাকা-পয়সা ঠিকমতো দিতে পারছে না। আমিও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেছি না।’

ব্যবসায়ীর বক্তব্য শেষে কিছুটা সময় চুপ করে রূঢ় কণ্ঠে সাগরকে বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

অডিও রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, ‘কোনো মন্তব্য করব না।’ 

এ বিষয়ে রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমি শেষ হয়ে গেছি। পথে বইসে গেছি। আমারে আর শেষ কইরেন না’।

আগুনে পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেটের ৪৪টি দোকান পুড়ে যায়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা জানান, ভেঙে ফেলা পিকচার প্যালেস সিনেমা হলের জায়গা ভাড়া নিয়ে এক বছর আগে অস্থায়ী মার্কেট তৈরি করেন ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া। তিনি শহরে মেলা রাসেল নামে পরিচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ