জাতিসংঘ প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা ‘ফ্যাসিস্ট’ প্রমাণিত
Published: 14th, February 2025 GMT
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের নৃশংসতা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে স্বস্তি প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, এই প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা ‘ফ্যাসিস্ট’ প্রমাণিত হয়েছেন। এবার ভারত সরকার অবিলম্বে তাঁকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেবে এবং সহযোগীসহ বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে আশা করছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসংঘের তদন্ত দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা সঠিকভাবে বলেছে, হাসিনার নির্দেশেই গণহত্যা হয়েছে, যত মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, সব তাঁর নির্দেশে হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া, ইনস্টিটিউশনগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এর আগে বেলা ১১টায় যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান গুলশান কার্যালয়ে যান। এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে বের হন কার্যালয় থেকে। এই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ছিলেন। একই দিন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে বৈঠক করেন বলে জানা যায়।
আয়নাঘর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে (আয়নাঘরে) শুধু একটি দলের নেতাকর্মীকে নয়, দেশের মানুষকে গুম করা হয়েছে, নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কথাগুলো আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। যখন আয়নাঘর নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে, তখনও আওয়ামী লীগ এটাকে অস্বীকার করেছে। তারা জঙ্গি নাটক করে কোথাও দেখিয়েছে জঙ্গির প্রশিক্ষণ হচ্ছে, পড়াশোনা হচ্ছে, জঙ্গিবাদ তৈরি করা হচ্ছে, কোথাও বোম তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু আজকে প্রমাণ হয়ে গেল, আমরা যে কথাগুলো বলেছি, সেগুলো সত্য। আওয়ামী লীগ সরকার ওই সময় অত্যন্ত সচেতনভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দলকে ধ্বংস করেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন থাকা-না থাকার বিষয়ে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। বিএনপি একটা উদার গণতান্ত্রিক দল। এই দল গণতন্ত্রের সব রীতিনীতি মেনে চলে। সে জন্য আমরা মনে করি, কোন দল নিষিদ্ধ হবে, কোন দল কাজ করবে, কোন দল কাজ করবে না, কোন দল নির্বাচন করবে কী করবে না, তা জনগণ নির্ধারণ করবে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে কিনা– প্রশ্ন করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা তো আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, সংখ্যানুপাতিক ভোটের পুরোপুরি বিরোধী আমরা, একেবারে জোরালোভাবে বিরোধী। কারণ এখানকার মানুষ এটাতে অভ্যস্ত নয়।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়েও বিএনপি একমত নয়। মির্জা ফখরুল বলেন, এটা তো রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশকে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার একটা পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হবে, ততই রাজনীতি সহজ হবে, মানুষ স্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে আসবে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা পূর্বনির্ধারিত ছিল। বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অবস্থা, অন্তর্বর্তী সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে এবং কবে নির্বাচন হচ্ছে, তা নিয়ে তারা জানতে চেয়েছেন।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ধ ব স কর আওয় ম ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণের স্বার্থে আঘাত এলে আবারও মাঠে নামবে বিএনপি: মির্জা ফখরুল
দল ও দেশের জনগণের স্বার্থে আঘাত এলে বিএনপি আবার মাঠে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিএনপি সফল হবে।
আজ শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেলে রাজধানীর মাদানী অ্যাভিনিউর ১০০ ফিটের বেরাইদ ঈদগাহ মাঠে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে, কোনোভাবে কোনো চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া হবে না। ফ্রান্স, লন্ডন, আমেরিকা থেকে কেউ যদি দেশের মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেন, তবে তা রুখে দেওয়া হবে। দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ মেনে নেওয়া হবে না। মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
বিএনপি বাংলাদেশের পক্ষে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা ভারতের পক্ষেও না, পাকিস্তানের পক্ষেও না। আবার আমরা আমেরিকার পক্ষেও না ইংল্যান্ডের পক্ষেও না, আমরা বাংলাদেশের পক্ষে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন সবার আগে বাংলাদেশ।’
বিএনপি সব পরিবর্তন এনেছে দাবি করে দলটির মহাসচিব বলেন, সংস্কার করেছে বিএনপি, একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে তার দল।
বিগত ১৭ বছরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি করে এমন ৯৯ শতাংশ মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড. ইউনূসকে দেশের মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছে স্বল্প সময়ের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দেওয়ার জন্য। সব সংগ্রাম হয়েছে নির্বাচনের জন্য, সে জন্য বিএনপি নির্বাচনের কথাই বলে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই সরকার ক্ষমতায় বসে থাকবে, জনপ্রতিনিধিত্বে কেউ থাকবে না, এমনটা মেনে নেওয়া হবে না।
একটি মহল দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য নির্বাচনকে পেছাতে চাইছে অভিযোগ করে তিনি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।