Samakal:
2025-03-26@00:50:29 GMT

ফাগুন হাওয়ায় মন উচাটন

Published: 14th, February 2025 GMT

ফাগুন হাওয়ায় মন উচাটন

শীতের রুক্ষতা শেষে রঙিন হয়ে উঠছে প্রকৃতি। কোকিলের ডাকে মাতোয়ারা চারপাশ। উচাটন মন আর ঘরে থাকে না। বেরিয়ে পড়ে প্রিয়জনের হাত ধরে উৎসব বিহারে। কারণ বসন্ত এসে গেছে ভালোবাসার পসরা নিয়ে। 

এক সময় পাশাপাশি দুই দিন পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হতো। তবে পঞ্জিকা সংশোধনে কয়েক বছর ধরে প্রেম ও প্রকৃতির উৎসব দুটো একই দিন উদযাপিত হয়ে আসছে। এবার দিবস দুটি শুক্রবারে পড়ায় উৎসবপ্রিয় জাতির কাছে এ যেন মধুচন্দ্রিমা।

বসন্ত প্রেমের ঋতু। ফাল্গুনে শুরু হয় ভালোবাসার গুনগুনানি। শুধু প্রকৃতি নয়, মানব মনও রঙিন হয়ে ওঠে। খুলে যায় দখিনা দুয়ার। কী নেই বসন্তের! রং, রূপ,  রস ও লাবণ্য– সব রয়েছে। আছে মাতাল দখিনা সমীরণ। পাহাড়, বন, নগর, বন্দর– সব রঙিন হয়ে উঠবে বসন্তের আগমনে। রঙিন প্রজাপতির ডানায় প্রেমের বারতা। ডালে ডালে শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়াদের মিছিল। কবিগুরু ভাষায় ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’ তারপরও হুট করে বিষণ্ন দুপুরে কোকিলের কুহু ডাকে মন কেমন করে ওঠে। যেন দূরের কোনো বেদনা মনে উঁকি দেয়। কবি নজরুলের কবিতার মতো ‘এলো মেলো দখিনা মলয় রে প্রলাপ বকিছে বনময় রে/ অকারণ মন মাঝে বিরহের বেণু বাজে/ জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।’

প্রাচীনকাল থেকে বসন্ত উৎসব পালিত হয়ে আসছে। খ্রিষ্টের জন্মের বেশ কয়েকশ বছর আগে মানুষ বসন্ত উৎসব পালন করত। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পাথরে খোদাই করা বসন্ত উৎসবের নমুনা পাওয়া গেছে। সব জাতির পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাতে এই উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। বেদ, পুরাণেও এই উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। ১৫৮৫ সালে সম্রাট আকবর ফসলি সনের প্রবর্তন করেন। একই সঙ্গে প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে বাংলাদেশে ঘটা করে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপনের রীতি চালু হয়। এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে বসন্ত বরণ। পহেলা ফাল্গুন দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গত শতকের নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে পশ্চিমের ভ্যালেনটাইন্স ডে দেশে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। ভালোবাসার যুগল কাব্যে ভরে ওঠে পথপ্রান্তর। যেন ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে।’ শুধু কি যুগল ভালোবাসা? না। এখন ভালোবাসা দিবস হয়ে গেছে সর্বজনীন। আবালবৃদ্ধবণিতার প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে চারপাশ। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় উৎসব হয়ে উঠেছে আরও রঙিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরে বলতে হয়, ‘আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে– দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।’
ভালোবাসার এই দিনে বাংলাদেশের রয়েছে দ্রোহের ইতিহাস। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি  স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীরা। সেই আন্দোলনের পথ বেয়ে নব্বইয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল গণতন্ত্রের স্বাদ।

জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হতে যাচ্ছে বসন্ত ও ভালোবাসার উৎসব। রুক্ষ শীত শেষে বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে যেভাবে জেগে ‍ওঠে, রক্তস্নাত বিপ্লবের পর এবারের বসন্ত নতুন রূপে ধরা দিক জাতির কাছে। দেশ হয়ে উঠুক সাম্য ও ভালোবাসার, দায় ও দরদের। বসন্তের দোলা লাগুক সবার হৃদয়ে। ভালোবাসার ভ্রমর গান গেয়ে উঠুক প্রতিটি প্রাণে। জীবন উদ্ভাসিত হোক উৎসবে উচ্ছ্বাসে। ফের ফিরে যেতে হয় কবিগুরুর কাছে, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ আমার আপন হারা প্রাণ আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ/ তোমার অশোকে কিংশুকে অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে…।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বসন ত উৎসব উৎসব প ল বসন ত র উদয প

এছাড়াও পড়ুন:

এ বছর জাতীয়ভাবে নববর্ষ পালন হবে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে

এ বছরের বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসবের মধ্য দিয়ে। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকার জাতীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে একটি সার্বজনীন অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। আজ রোববার দুপুরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আগামী ১৩ এপ্রিল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চৈত্র সংক্রান্তি কনসার্ট আয়োজন করা হয়েছে। এই কনসার্টে মাইলস্, ওয়ারফেজ, দলছুট, এভোয়েড রাফা, ভাইকিংস্ ও স্টোন ফ্রি ব্যান্ড দল গান পরিবেশন করবে।

এবারের বাংলা নববর্ষ উদযাপনে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আগে নির্ধারণ করা অনুদানের অর্থ দ্বিগুণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এ বছরই প্রথম সরকার প্রতিটি জেলায় এক লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে, যা আগে ছিল ৫০ হাজার টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে ৪৯৫টি উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা আগে ছিল ৩০ হাজার টাকা।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এবার বাংলা নববর্ষ পালনে শুধু রাজধানীকে কেন্দ্র করে না সারা দেশের সব জেলায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপস্থিতি শুধু অংশগ্রহণ নয়, দৃশ্যমানভাবে যাতে উপস্থিতি স্পষ্ট হয় সেভাবে সাজানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুরের ধারার হাজার কন্ঠের গান এবার হবে উন্মুক্ত চত্বরে এবং সেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে আয়োজন হবে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, পহেলা বৈশাখের আগের দিন চৈত্রসংক্রান্তিতে বিভিন্ন ব্যান্ড দলের পরিবেশনার পাশাপাশি বাউল–ফকিরদের অংশগ্রহণেও হবে বিশেষ পরিবেশনা। পহেলা বৈশাখের দিন সন্ধ্যায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পহেলা বৈশাখ ও জুলাই বিপ্লব নিয়ে প্রদর্শিত হবে ড্রোন শো। এটি হবে চীন সরকারের সহেযাগিতায়।

উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, এবারের বর্ষবরণের আয়োজনের মোট বরাদ্দ এখনই নির্ধারণ করে বলা সম্ভব না। তবে পরে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

এবার রাজধানীতে নববর্ষের শোভাযাত্রার সময় ও স্থান সম্পর্কে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামীকাল এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংস্কৃতি উপদেষ্টার বৈঠকের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈদ আনন্দ উৎসব আয়োজন করছে ডিএনসিসি
  • শিলিংয়ে লড়াইটা মূলত হামজা বনাম ছেত্রী
  • ‘কন্যা’র পর নুসরাত ফারিয়া-সজলের ‘ব্যবধান’
  • বৈশাখের উৎসবে রঙ বাংলাদেশ
  • অচেনা ফোনকলে ঝুঁকি!
  • উৎসবে ডিজিটাল ক্যানভাস
  • মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে, জানালেন উপদেষ্টা ফারুকী
  • এ বছর জাতীয়ভাবে নববর্ষ পালন হবে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে
  • এক উৎসবে অনেক দেশ
  • চারদিকে এত এত পুরুষের গল্প