চট্টগ্রামকে একটি পরিকল্পিত, আধুনিক নগর ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলার মূল দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)। নগরবাসীর জন্য আবাসন নিশ্চিত করার কাজও এ সংস্থার। সিডিএর গত ১৫ বছরের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলীরা বলছেন, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম গড়ার চেয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশি নজর দিয়েছে সিডিএ। বিশেষ করে উড়ালসড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে মনযোগ ছিল তাদের। সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজও ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তারা। এসব কাজ করতে গিয়ে নগরবাসী আবাসন নিশ্চিতের দায়িত্বটি ছিল উপেক্ষিত। এছাড়াও নকশা অনুযায়ী ইমারত বা ভবন নির্মিত হচ্ছে কি না, তাও ঠিকভাবে তদারকি করেনি সংস্থাটি। ফলে অপরিকল্পিত নগরায়নে বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে চট্টগ্রাম। 

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম বলেন, ‘আবাসন প্রকল্পের দিকে খুব বেশি আগ্রহ নেই। আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা মানে মধ্যবিত্তের জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করে উচ্চ মধ্যবিত্ত বা বিত্তশালীদের কাছে বিতরণ করে দেওয়া। সিডিএর দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখলাম, অনেক সংসদ সদস্য কয়েকটা করে প্লট নিয়েছেন। অথচ প্লট নেওয়ার আগে অঙ্গীকার করতে হয়, চট্টগ্রাম শহরে তার কোন জায়গা নেই। যেসব সংসদ সদস্য প্লট পেয়েছেন তাদের কি চট্টগ্রাম শহরে জায়গা ছিল না? ঢাকা-চট্টগ্রামে কয়টা বাড়ি আছে ঠিক নেই। তবুও এক-দুটো প্লটের লোভ তারা সামলাতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘যেসব আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেখানেও নাগরিক সুযোগ সুবিধা না থাকায় ভবন নির্মাণ করা হয়নি। সেগুলোকে কীভাবে বসবাসযোগ্য করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি। এছাড়া প্লট না দিয়ে ফ্ল্যাট নির্মাণ করে বরাদ্দ দেয়া যায় কি না সেটা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’
সিডিএ সূত্র জানায়, সিডিএর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের একটি ছিল পরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিত করা। কিন্তু ২০০৫ সালের পর থেকে আর কোনো আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি সিডিএ। ২০১৭ সালে অনন্যা আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায় নামের একটি প্রকল্প নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সে প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে সংস্থাটি। যদিও এই প্রকল্পের আওতায় বিদেশ সফর করেছিলেন সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠার পর সিডিএ প্রথম আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ১৯৬৩ সালে কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায়। এরপর আরও ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল। তবে ১৯৯৫ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাশে কর্ণফুলী আবাসিক এলাকা এবং ২০০৫ সালে নেওয়া অনন্যা আবাসিক এলাকায় এখনো কোনো ভবন নির্মিত হয়নি। ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় এসব আবাসিক এলাকায় ভবন নির্মাণ করতে পারছেন না প্লটের মালিকেরা।
পরিকল্পিত নগরায়ণের ক্ষেত্রে সিডিএর যে ধরনের ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তা করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘এই দায়িত্ব পালনের চেয়ে জলাবদ্ধতা প্রকল্প, উড়ালসড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশি মনোযোগ দিয়েছে সংস্থাটি। এগুলো অন্য সংস্থার কাজ। সিডিএর এমন ভূমিকার কারণে নগরের মানুষকে ভুগতে হচ্ছে।’ সিডিএর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১২টি আবাসিক প্রকল্প নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব আবাসিকে ৬ হাজার ৭৫৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আবাসিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় প্লট রয়েছে ৩৯১টি, চান্দগাঁও আবাসিকে রয়েছে ৭৫৯টি, চান্দগাঁওয়ে ৮২টি, চন্দ্রিমায় ১৮০টি, কল্পলোকে প্রথম পর্যায়ে ৪২৩ ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ৩৫৬টি এবং কাতালগঞ্জে প্লট রয়েছে ৫৮টি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভবন ন র ম স ড এর

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, হল খুলবে ২ মে 

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ২ মে থেকে আবাসিক হলসমূহ খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে শিক্ষা কার্যক্রম  শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহেদুজ্জামান শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

এদিকে, হল খুলে না দেওয়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‌‘মার্চ ফর কুয়েট’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন বলেও উল্লেখ করেছেন।

আরো পড়ুন:

হাসপাতালে পবিপ্রবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন

দাবিতে অনড় কুয়েট শিক্ষার্থীরা, সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভা

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহেদুজ্জামান শেখ সিন্ডিকেট সভার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি হামলার ঘটনায় ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৯৮ তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় সভায় উপস্থাপন করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়।”

তিসি আরো বলেন, “সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে থেকে শুরু করার এবং সব আবাসিক হলসমূহ আগামী ২ মে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েজন শিক্ষার্থী সোমবার রাতে জানান, তারা সবাই সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত জানার জন্য প্রশাসনিক ভবনের সামনে অপেক্ষা করেন। তারা আশাবাদী ছিলেন, সিন্ডিকেট মেম্বাররা মিটিং শেষে তাদের আপডেট জানাবেন। মিটিং শেষ হলে তারা আপডেট জানতে চান শিক্ষকদের কাছে। কিন্তু, তারা কোনো সাড়া পাননি। এ কারণে পূর্বঘষিত কর্মসূচি অনুসারে হল না খোলা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। যতক্ষণ পর্যন্ত হল খোলা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তারা।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ