নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় ডিঙ্গাপোতা হাওরে নির্মিত ডুবো সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া থেকে ডিঙ্গাপোতা হাওরের ভেতর দিয়ে গাগলাজুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সড়কে আরসিসি ঢালাই করা হবে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না– অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ-গাগলাজুর সড়কের তেঁতুলিয়া থেকে গাগলাজুর বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ডুবো সড়ক প্রশস্তকরণ ও পুনর্নির্মাণ কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য সড়কটিতে আরসিসি ঢালাই করা হবে। গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি এ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৩ হাজার ১০০ টাকা চুক্তি মূল্যে এ কাজ পায় এমএস বিল্ডার্স নামে কুমিল্লার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছে নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জের মফিদুল ইসলাম ওরফে ওয়াসীম নামে একজন ঠিকাদার। ২০২৪ সালের ৩ জুলাই কাজ শুরু করে চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু এত দিনে ১০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষায় এই সড়ক পানির নিচে ডুবে থাকে। শুকনো মৌসুমে ডিঙ্গাপোতা হাওরের ধান পরিবহনে কৃষকদের জন্য এ সড়ক গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সড়কপথে গাগলাজুর বাজার থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পণ্য পরিবহনে সড়কটির গুরুত্ব অনেক। এদিকে খালিয়াজুরী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বেশ কিছু এলাকার মানুষ নৌপথে গাগলাজুর বাজারে এসে সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাওরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য বিশাল ব্যয়ে সরকার আরসিসি ঢালাই বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার ময়লা মিশ্রিত বালু, নিম্নমানের ইট-সিমেন্ট ও অপর্যাপ্ত সিমেন্টের মিশ্রণ ব্যবহার করছেন। ইট গাঁথুনির পর এতে ঢালা হচ্ছে না পানি। যে কারণে বছর পেরোনোর আগেই সড়কটি ভেঙে যাবে। বরাদ্দ লুটপাট হবে, কৃষকের দুর্ভোগ থেকেই যাবে। এ ছাড়া ধীরগতির কারণে চলতি শুকনো মৌসুমে কাজ শেষ হবে না বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। শুকনো মৌসুমে কাজ শেষ না হলে সারাবছর দুর্ভোগ পোহাতে হবে হাওর এলাকার মানুষের।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, ময়লা মিশ্রিত বালু, অপর্যাপ্ত সিমেন্ট ও নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়কের গাইড ওয়ালের গাঁথুনি দেওয়া হচ্ছে। অপর্যাপ্ত পানি দিয়ে বালু-সিমেন্ট মেশানো হচ্ছে। জানতে চাইলে নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, হাওরে পানি পাওয়া যায় না। তাই কম পানিতেই বালু-সিমেন্ট মেশানো হচ্ছে।
মোহনগঞ্জের তেঁতুলিয়া গ্রামের খোকন মিয়া ও আবদুল হাসেম জানান, হাওরের ফসল ঘরে তোলা ও যোগাযোগের জন্য এই সড়কই একমাত্র ভরসা। ময়লা মেশানো বালু, নিম্নমানের ইট-সিমেন্ট দিয়ে যেনতেনভাবে সড়কে কাজ করছে ঠিকাদারের লোকজন। নামমাত্র পানি দিয়ে বালু-সিমেন্ট মিশিয়ে ইটের গাঁথুনি দেওয়া হচ্ছে। বছর শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে যেতে পারে সড়কটি।
গাগলাজুর গ্রামের হাসান মিয়া বলেন, ‘সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়ম রোধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সরকারের টাকা জলে যাবে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠিকাদার মফিদুল ইসলাম ওরফে ওয়াসীমের ভাষ্য, ভালো ইটের সঙ্গে কিছু নিম্নমানের ইট মিশিয়ে দিয়েছিল ভাটার লোকজন। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী পরীক্ষা করে বেশ কয়েক হাজার ইট বাতিল করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে রেডিমিক্স মেশিনসহ বেশ কিছু মেশিন বসিয়ে নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। যথাযথ নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। এলজিইডি অফিসের লোকজনের সামনেই কাজ চলছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সোয়াইব ইমরান বলেন, কাজে অনিয়ম বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে সাইট থেকে নিম্নমানের ইট অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বালুসহ নিম্নমানের সামগ্রী অপসারণ করা হয়েছে। গাইড ওয়াল কিছুটা ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করানো হয়েছে। এখন তদারকি বাড়ানো হয়েছে। শুকনো মৌসুমেই কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য শ ষ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অসমাপ্ত আধা কিলোমিটারে দুর্ভোগ

১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের সাড়ে ১৫ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৫০০ মিটারের কাজ না করেই ঠিকাদার হাওয়া। এই ৫০০ মিটারই দুর্ভোগে ফেলেছে এলাকাবাসীকে। তারা ধুলায় একাকার হচ্ছেন। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার টুঙ্গিপাড়া-ঘোনাপাড়া সড়কের চিত্র এটি। স্থানীয়রা দ্রুত এ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করে তাদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সড়ক বিভাগের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,  পিরোজপুর-নাজিরপুর-মাটিভাঙ্গা-পাটগাতী-ঘোনাপাড়া সড়কটি পিরোজপুর, নাজিরপুর, টুঙ্গিপাড়া, জিয়ানগর ভাণ্ডারিয়া উপজেলা থেকে ঢাকা-গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলায় যাতায়াতের সহজ পথ। এ সড়কের মধ্যে  সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ডেন্টাল কলেজ, আঞ্চলিক ধান গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিআরটিসি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও বাস ডিপো, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া সরকারি কলেজ উল্লেখযোগ্য। তাই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির টুঙ্গিপাড়া থেকে ঘোনাপাড়া পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে চওড়া করার কাজ শুরু করা হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই সড়কের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা থেকে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৫০০ মিটার সড়কের কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। তার পরই এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল, পণ্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে হচ্ছে যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনাও।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের ফোরকান আলী বলেন, সড়কটির প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। মাত্র আধা কিলোমিটার কাজ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে গেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গেলে ভোগান্তির শেষ নেই। কখনও কখনও যানজট, ধুলাবালির মধ্যে পড়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে এখানে ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। তাই তিনি দ্রুত এই আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।
পাটগাতী গ্রামের ভ্যানচালক রইচ বিশ্বাস বলেন, সড়কের সব জায়গা ভালো। কিন্তু গিমাডাঙ্গা থেকে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। এখানে ভ্যান চালাতে গেলে প্রচুর ঝাঁকুনি হয়। এতে বয়স্ক যাত্রীর অসুবিধা হয়। মাঝেমধ্যে ভ্যানের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। ঘটে দুর্ঘটনা। এ সড়কের ৫০০ মিটার অংশটুকুর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
বাসচালক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, সড়কটি খুবই সুন্দর হয়েছে। কিন্তু মাত্র আধা কিলোমিটারের কাজ বাকি রয়েছে। এই আধা কিলোমিটার অতিক্রম করার সময় ধুলাবালি ওড়ে। এতে পথচারী ও ছোট যানবাহনের যাত্রীদের কষ্ট হয়। এ ছাড়া বাসের জানালা বন্ধ করতে হয়। কখনও কখনও যানজটে আটকা পড়তে হয়। আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন করা হলে এলাকাবাসী দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।
টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি গ্রামের সাইফুল শেখ বলেন, যাতায়াত ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য পাটগাতী হাটে পরিবহনে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তাই ওই সড়কের গুরুত্বপূর্ণ ৫০০ মিটার এলাকার কাজ দ্রুত শুরু করে শেষ করার দাবি জানান তিনি। 
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর পরও ওই সড়কের ৫০০ মিটারের নির্মাণকাজের সব বাধা অপসারিত হয়েছে। ২-১ দিনের মধ্যে ফান্ড ছাড় করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দ্রুত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে। কাজ শুরু হলে শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অসমাপ্ত আধা কিলোমিটারে দুর্ভোগ