ডুবো সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী
Published: 13th, February 2025 GMT
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় ডিঙ্গাপোতা হাওরে নির্মিত ডুবো সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া থেকে ডিঙ্গাপোতা হাওরের ভেতর দিয়ে গাগলাজুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সড়কে আরসিসি ঢালাই করা হবে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না– অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ-গাগলাজুর সড়কের তেঁতুলিয়া থেকে গাগলাজুর বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ডুবো সড়ক প্রশস্তকরণ ও পুনর্নির্মাণ কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য সড়কটিতে আরসিসি ঢালাই করা হবে। গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি এ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৩ হাজার ১০০ টাকা চুক্তি মূল্যে এ কাজ পায় এমএস বিল্ডার্স নামে কুমিল্লার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছে নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জের মফিদুল ইসলাম ওরফে ওয়াসীম নামে একজন ঠিকাদার। ২০২৪ সালের ৩ জুলাই কাজ শুরু করে চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু এত দিনে ১০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষায় এই সড়ক পানির নিচে ডুবে থাকে। শুকনো মৌসুমে ডিঙ্গাপোতা হাওরের ধান পরিবহনে কৃষকদের জন্য এ সড়ক গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সড়কপথে গাগলাজুর বাজার থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পণ্য পরিবহনে সড়কটির গুরুত্ব অনেক। এদিকে খালিয়াজুরী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বেশ কিছু এলাকার মানুষ নৌপথে গাগলাজুর বাজারে এসে সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাওরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য বিশাল ব্যয়ে সরকার আরসিসি ঢালাই বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার ময়লা মিশ্রিত বালু, নিম্নমানের ইট-সিমেন্ট ও অপর্যাপ্ত সিমেন্টের মিশ্রণ ব্যবহার করছেন। ইট গাঁথুনির পর এতে ঢালা হচ্ছে না পানি। যে কারণে বছর পেরোনোর আগেই সড়কটি ভেঙে যাবে। বরাদ্দ লুটপাট হবে, কৃষকের দুর্ভোগ থেকেই যাবে। এ ছাড়া ধীরগতির কারণে চলতি শুকনো মৌসুমে কাজ শেষ হবে না বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। শুকনো মৌসুমে কাজ শেষ না হলে সারাবছর দুর্ভোগ পোহাতে হবে হাওর এলাকার মানুষের।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, ময়লা মিশ্রিত বালু, অপর্যাপ্ত সিমেন্ট ও নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়কের গাইড ওয়ালের গাঁথুনি দেওয়া হচ্ছে। অপর্যাপ্ত পানি দিয়ে বালু-সিমেন্ট মেশানো হচ্ছে। জানতে চাইলে নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, হাওরে পানি পাওয়া যায় না। তাই কম পানিতেই বালু-সিমেন্ট মেশানো হচ্ছে।
মোহনগঞ্জের তেঁতুলিয়া গ্রামের খোকন মিয়া ও আবদুল হাসেম জানান, হাওরের ফসল ঘরে তোলা ও যোগাযোগের জন্য এই সড়কই একমাত্র ভরসা। ময়লা মেশানো বালু, নিম্নমানের ইট-সিমেন্ট দিয়ে যেনতেনভাবে সড়কে কাজ করছে ঠিকাদারের লোকজন। নামমাত্র পানি দিয়ে বালু-সিমেন্ট মিশিয়ে ইটের গাঁথুনি দেওয়া হচ্ছে। বছর শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে যেতে পারে সড়কটি।
গাগলাজুর গ্রামের হাসান মিয়া বলেন, ‘সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়ম রোধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সরকারের টাকা জলে যাবে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠিকাদার মফিদুল ইসলাম ওরফে ওয়াসীমের ভাষ্য, ভালো ইটের সঙ্গে কিছু নিম্নমানের ইট মিশিয়ে দিয়েছিল ভাটার লোকজন। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী পরীক্ষা করে বেশ কয়েক হাজার ইট বাতিল করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে রেডিমিক্স মেশিনসহ বেশ কিছু মেশিন বসিয়ে নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। যথাযথ নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। এলজিইডি অফিসের লোকজনের সামনেই কাজ চলছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সোয়াইব ইমরান বলেন, কাজে অনিয়ম বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে সাইট থেকে নিম্নমানের ইট অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বালুসহ নিম্নমানের সামগ্রী অপসারণ করা হয়েছে। গাইড ওয়াল কিছুটা ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করানো হয়েছে। এখন তদারকি বাড়ানো হয়েছে। শুকনো মৌসুমেই কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য শ ষ কর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কের পাশে গর্ত করে মাটি কাটার হিড়িক
নান্দাইল চৌরাস্তা-তাড়াইল আঞ্চলিক সড়কের পাশ থেকে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ায় সড়কটি হুমকির মুখে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মাটি কাটা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারি চোখে পড়ছে না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এভাবে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়কের নান্দাইল উপজেলার চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি সড়ক কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা সদরে চলে গেছে। ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি দিয়ে কেন্দুয়া, তাড়াইলসহ কিশোরগঞ্জের ভাটিতে থাকা বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ চলাচল করে। সম্প্রতি সেতু-কালভার্টগুলো প্রশস্ত করে সড়কটির আধুনিকায়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নান্দাইল উপজেলার যুগের হাওর থেকে শিমুলতলা বাজার পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ পাশ থেকে ১৫ থেকে ২০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে অসাধু চক্র। কাছাকাছি এ ধরনের গর্তের কারণে সড়কটির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে যানবাহন ওইসব গর্তে পড়ে বড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা স্থানীয়দের।
রোববার যুগের হাওর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়কটির পাশ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি গভীর গর্ত হয়েছে। দেখেই বোঝা যায়, এ ধরনের গভীর গর্ত শুধু মাটি বিক্রির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে, মাছ চাষের জন্য নয়। গর্তের গভীরতার পরিমাণ যাতে না বোঝা যায়, সে জন্য পানিভর্তি করে রাখা হয়েছে। একটু সামনে এগিয়ে সম্প্রতি মাটি কেটে নেওয়া আরও কয়েকটি গভীর গর্ত দেখা যায়। পাশের একটি ডোবায় ভেকু (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে সেই মাটি একের পর এক ট্রাক্টরে ভর্তি করতে দেখা যায়। মাটিবোঝাই ট্রাক্টরগুলো আশপাশের কয়েকটি ইটভাটায় পৌঁছে দিচ্ছে।
ভেকুর চালক শহীদ মিয়া জানান, তিনি চুক্তিতে মাটি কেটে দিচ্ছেন। ঠিকাদার জাবেদ মিয়া তাঁকে এখানে এনেছেন। ট্রাক্টর চালক রইচ উদ্দিন বলেন, মাটি পৌঁছে দিয়ে দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন ৭০০ টাকা।
ঠিকাদার জাবেদ মিয়ার ভাষ্য, জমির মালিকদের কাছ থেকে প্রতি হাজার মাটি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে কিনে ইটভাটায় পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। ভাটা মালিকদের কাছে প্রতি হাজার মাটি বিক্রি করছেন ৬-৭ হাজার টাকা করে। ইতোমধ্যে তিনি মঞ্জিল মিয়া, আবুল কাসেম, রাসেল মিয়ার জমির মাটি কেটে নিয়েছেন বলে জানান।
সড়কের পাশে গভীর গর্ত করার কারণে সড়কের ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে জাবেদ বলেন, জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করছেন, তাই তিনি নিচ্ছেন।
জমির মালিক মঞ্জিল মিয়া জানান, তাঁর জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে ঠিকই; কিন্তু এখনও টাকা দেননি ঠিকাদার। অন্যদের যে দামে টাকা দিয়েছেন, তাকেও সে দামেই টাকা দেবেন। সড়কের স্থায়িত্ব ও দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বলার পর তিনি জানান, সবাই দিয়েছে; তাই তিনিও দিয়েছেন। জমির মালিক আবুল কাসেমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে মাছ চাষের জন্য মাটি বিক্রির কথা স্বীকার করেন। সড়কের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির জানান, তিনি সশরীরে গিয়ে তাদের বাধা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু জড়িতরা তা মানছেন না বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অভিযোগটি সত্য নয়।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মো. ফয়সাল বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে আমাদের লোকজন যাবে। যদি কেউ এমন করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতেও বলে দিয়েছি। এ ছাড়া তো আর আমাদের কিছু করার নেই।’
নান্দাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়েজুর রহমান জানান, এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিষয়টি দেখার জন্য বলে দিয়েছেন।