আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের আশা করছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে অংশগ্রহণের জন্য দুবাই সফরে থাকা প্রধান উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।

দেশে বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য ১৫টি কমিশন গঠন এবং সেগুলোর প্রতিবেদন এখন আসতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এসব কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য তৈরিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এসব সুপারিশ নিয়ে এখন রাজনৈতিক দলগুলো ও সুশীল সমাজের কাছে জানতে চাইব যে আপনারা এখন কোনটা বাস্তবায়ন করতে চান আর কোনটা আপনারা ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করতে চান এবং কোনটা একেবারেই বাস্তবায়ন করতে চান না।’

এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যে মতামত দেবেন, তার ভিত্তিতে সামনে এগিয়ে যাবেন বলে জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এর ভিত্তিতে ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশা করছেন। এরপর আরও কিছু সংস্কারের জন্য সময় নেওয়া হলে সেটা আগামী বছরের তিন মাস হতে পারে।

‘এটা আমাদের সরকারের সময়সীমা। এরপর ১৬ বছরের মধ্যে একটি যথাযথ নির্বাচন—একটি বিশ্বাসযোগ্য, দৃশ্যমান ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে আমরা সন্তুষ্ট হব। জনগণ এটা উদ্‌যাপন করবে এবং আমাদের দায়িত্ব শেষ হবে।’

এর আগে দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটের এক অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব যখন সম্পন্ন হবে, তখন সরে গিয়ে তিনি খুশি হবেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সেখানে বলেন, ‘এখন আমাদের একটি ঐকমত্য গঠনের কমিশন হয়েছে, যারা সব পক্ষের মতৈক্যের সুপারিশগুলো বের করে আনবে। সেসব সুপারিশ নিয়ে একটি সনদ হবে। এই সনদ সামনে রেখে চলতি বছরের ডিসেম্বরে একটি নির্বাচন হবে। যখন আমার দায়িত্ব শেষ হবে, আমি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করব।’

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শাস্তি

দ্য ন্যাশনালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শাস্তি এড়ানোর সুযোগ দেবেন না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে, যাতে তাঁরা আইনের মুখোমুখি হন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা ভারতকে নোটিশ পাঠিয়েছি যে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করতে হবে—মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনারের প্রতিবেদনসহ আমাদের কাছে বহু তথ্যপ্রমাণ আছে। তারা যা কিছু করেছে, সেগুলোর সাক্ষ্য এটা।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তাই আমরা আশা করছি, আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং আমরা তাঁকে বিচারের আওতায় আনব। এটা করতে হবে, না হলে মানুষ আমাদের ক্ষমা করবে না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড স ম বর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এত বড় লোকসানের বোঝা সইবেন কী করে

ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে সাড়ে সতেরো কোটি মানুষের খাবারের জোগান নিশ্চিত করা যেকোনো সরকারের জন্যই বিশাল চ্যালেঞ্জের কাজ। রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, মূল্যস্ফীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি—এ সবকিছু ছাপিয়ে বড় কোনো বিপর্যয় ছাড়াই এ দেশের মানুষ এখনো টিকে আছে, তার সবচেয়ে বড় অবদান কৃষকের। অথচ দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে সবচেয়ে অবহেলার শিকার হন তাঁরা। এবার আলুচাষিরা তাঁদের উৎপাদিত আলু নিয়ে যে সীমাহীন দুর্ভোগ ও লোকসানের মুখে পড়েছেন, তাতে মনে হতেই পারে, আলু উৎপাদন করে তাঁরা কি অপরাধ করে ফেলেছেন?

আমনের মৌসুমে দফায় দফায় বন্যা হওয়ায় চালের উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় বাজারে চালের দাম এখন গত বছরের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি। এ অবস্থাতেও শীতের সবজির ওপর ভর করে প্রায় দুই বছর পর গত মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০-এর নিচে নেমেছে। এ ক্ষেত্রেও প্রধান অবদান কৃষকের। কিন্তু শীতের সবজি চাষে এ বছর তাঁরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন। এবার পেঁয়াজ উৎপাদনেও কৃষকেরা চমক দেখিয়েছেন, ফলে ভোক্তারা তুলনামূলক কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। কিন্তু পেঁয়াজেও কৃষকেরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি। আলুর ক্ষেত্রেও কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।

এবার যে আলুর উৎপাদনও বেশি হবে, সেই পূর্বাভাস আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। আগাম বুঝতে পেরে হিমাগারের মালিকেরা সিন্ডিকেট করে হিমাগারের ভাড়া বাড়িয়ে দেন। কৃষকেরা মানববন্ধন করে, রাস্তায় আলু ফেলে প্রতিবাদ করে হিমাগারের ভাড়া কমানোর দাবি জানান। সরকার কিছুটা ভাড়াও কমান। কিন্তু প্রথম আলোসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে হিমাগারের মালিকেরা কৃষকদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আলু সংরক্ষণের অনুমতিপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত কতটা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অধিকাংশ আলুচাষি।

হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি এবং হিমাগারে সংরক্ষণের অনুমতিপত্র না পাওয়ায় কৃষকদের মাঠ থেকেই তাঁদের আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। ১ কেজি আলু উৎপাদনে যেখানে কৃষকদের খরচ হয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা, সেখানে মাঠ থেকে মাত্র ১৪ টাকায় বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এত বড় লোকসানের বোঝা তাঁরা সইবেন কী করে!

শীতের সবজি, পেঁয়াজ ও আলুর দাম এতটা পড়ে যাওয়ার পেছনে হঠাৎ করেই হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি উঠেছে। সরকার যদি একের পর এক ফসলে কৃষকের এই ক্রমাগত লোকসানের দিকে নজর না দেয়, তাহলে স্বল্প মেয়াদে বাজারে স্বস্তির দেখা মিললেও দীর্ঘ মেয়াদে বড় সংকট তৈরি করবে। হিমাগারের মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে কেন হাজার হাজার কৃষক লোকসানের মুখে পড়বেন? সরকারকে অবশ্যই কৃষকদের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ