বাংলাদেশের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এই প্রতিবেদন জবাবদিহি ও বিচারকে ত্বরান্বিত করবে। কেবল এই প্রতিবেদন দিয়েই প্রচেষ্টা শেষ করা উচিত হবে না জাতিসংঘের।

বৃহস্পতিবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জাতিসংঘের এই ১০৫ পাতার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনা সরকারের ভয়াবহ ও তীব্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে (প্রতিবেদনে) গত বছর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন যেসব প্রতিবেদন দিয়েছিল, সেগুলোর প্রতিধ্বনি রয়েছে এবং (তাদের প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের) বিস্তৃতি ঘটেছে। এই দেশের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন শনাক্তের প্রচেষ্টা হিসেবে এই প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ। তবে জাতিসংঘকে এখানেই তার প্রচেষ্টা শেষ করা উচিত নয়।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর জন্য জাতিসংঘের সুপারিশগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্য গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এই প্রতিবেদনে আরও যেসব দীর্ঘমেয়াদি এবং অন্যান্য তাৎক্ষণিক সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলোও সরকারকে অবশ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব সুপারিশের মধ্যে অন্য কিছুর মধ্যে রয়েছে চলমান তদন্তে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে চলা, ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দেওয়া, বিচার ও  নিরাপত্তা বিভাগ সংস্কার এবং জনপরিসরে কড়াকড়ি আরোপকারী কালো আইন বাতিল করা। তবে দীর্ঘস্থায়ী সত্য, বিচার, জবাবদিহি, ক্ষতিপূরণ এবং পুনরাবৃত্তি না হওয়া নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের দল এবং অন্যান্য সংগঠনকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এসব করার পথে কোনো ধরনের ব্যর্থতা হবে হতাহত ব্যক্তিদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার নামান্তর।’

আরও পড়ুনআন্দোলনে হেলিকপ্টারের ব্যবহার নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে৫ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) গতকাল বুধবার একটি তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ও সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল। স্বৈরাচারী সরকার নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার মারণাস্ত্র দিয়ে গুলি, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, চিকিৎসা পেতে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে সরকার।

আরও পড়ুনবাংলাদেশে আইন প্রয়োগে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার আহ্বান এইচআরডব্লিউর৫ ঘণ্টা আগে

লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশজুড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে সংগঠিত দমন-পীড়ন ও সহিংসতা নথিবদ্ধ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আমরা একটি ভিডিও যাচাইয়ের সিরিজ বের করেছিলাম, যেখানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী ও সরাসরি প্রাণঘাতী নয় এমন বেআইনি বল প্রয়োগের প্রমাণ নথিভুক্ত করা হয়েছিল।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য মন স ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মার্কেট-শপিংমলের আশপাশে তীব্র যানজট

রমজানের অর্ধেকটা পেরিয়ে আসায় ভিড় বেড়েছে রাজধানীর বড় মার্কেট ও শপিংমলে। ঈদের কেনাকাটায় এসব জায়গায় যাচ্ছে মানুষ। তবে মানুষের ভিড়ে এসব এলাকায় তীব্র হয়েছে যানজট। দুপুরের পর যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এ যানজট চরম মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সকাল থেকেই সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে ছিল গণপরিবহন। বিশেষ করে নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব, গুলশান ১-২, শাহবাগসহ আশপাশের এলাকা ছিল অনেকটা স্থবির। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও। মার্কেট ঘিরে আশপাশের এলাকার তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

রোববার দুপুরের পর রাজধানীর পল্টন, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, ধানমন্ডি-৩২ নম্বর সড়ক, চানখাঁরপুল, গুলিস্তান, বঙ্গবাজারসহ আশপাশের সব এলাকায় দেখা গেছে ভয়াবহ যানজট। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, রাজধানীর বড় মার্কেট ও শপিংমল সংলগ্ন এলাকায় এখন তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে এর সত্যতা মিলেছে। নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজার, উত্তরা জসিম উদ্দিন ও গুলশানের বিভিন্ন এলাকায় মার্কেটকেন্দ্রিক অসহনীয় যানজট দেখা গেছে।

নিউমার্কেট এলাকায় রিকশাযাত্রী ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ বলেন, স্ত্রী-সন্তানদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিব বলে মার্কেট করতে এসেছি। দুপুর আড়াইটার মধ্যে কেনাকাটা শেষ করে কমলাপুরের উদ্দেশে রিকশায় উঠেছি কিন্তু এক ঘণ্টায়ও নিউমার্কেট সিগন্যাল পার হতে পারিনি। আজ বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারব না বলেই মনে হচ্ছে।

মিরপুর ১ নম্বর থেকে সকাল ১০টায় মতিঝিলের উদ্দেশে বের হন মাহফুজ ইমন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘অন্যদিন মতিঝিলে আসতে আমার ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে না। কিন্তু আজ শাহবাগ, পল্টন হয়ে মতিঝিলে আসতে আড়াই ঘণ্টার বেশি লেগেছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ মানুষ ট্রাফিক সিগন্যাল মানছে না। আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা থেকেই শহরে যানজট বাড়ছে। এতে অকার্যকর হয়ে পড়ছে ট্রাফিক ব্যবস্থাও।

ডিএমপির রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) রাজিব গাইন সমকালকে বলেন, সায়েন্সল্যাবের পাশেই নিউমার্কেট এলাকায় নতুন একটি বড় শপিংমল তৈরি হওয়ায় এ এলাকার যানজট আরও তীব্র হয়েছে।

এদিকে রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রমজান মাসে সড়কে অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এতে বলা হয়, রমজান মাসে নগরীর সড়কগুলোতে যানবাহনের আধিক্য বেশি থাকে। এ অবস্থায় নগরবাসীর সুবিধার্থে রমজানের বাকি সময়গুলোতে রাস্তাঘাট অবরোধ করে অহেতুক জনভোগান্তি তৈরি না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ