বালুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে বেহাল হয়ে পড়েছে একটি সেতু। ভেঙে গেছে রেলিং। দেবে গেছে সেতুর দু’পাশের মাটি। এতে দুই-তিন ফুট উঁচু হয়ে চলাচলের অনুযোগী হয়ে পড়েছে সেতুটি। প্রায় দেড়শ ফুট লম্বা ও ছয় ফুট প্রশস্ত সেতুটি মানিকছড়ি উপজেলার তিনটহরী মধ্যম পাড়া এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালের দিকে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভুঁইয়া একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। যার কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দীর্ঘদিন ধীরগতিতে চলে নির্মাণকাজ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শেষ হয় সেতুর নির্মাণকাজ। সেতুটি উদ্বোধনের ফলে কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের কষ্ট অনেক কমে যায়। বেড়ে যায় বালু ও কাঠ বোঝাই যানবাহনের চলাচল। অতিরিক্ত ভারী যানবাহনের কারণে সেতুর দুই প্রান্তের মাটি ২-৩ ফুট দেবে যায়। ট্রাকের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুর রেলিং।
কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা লাথোই মারমা, মনির হোসেন, মাওলানা আবুল কাশেম, নায়েব আলীর সঙ্গে। তারা জানান, সেতুটির প্রস্থ আনুমানিক ৬ ফুট। বড় ট্রাকের প্রস্থও এর কাছাকাছি। সেতুর ওপর ট্রাক উঠলে তখন পাশে আর জায়গা থাকে না। এর ফলে একটু এদিক-সেদিক হলেই সেতুর বিভিন্ন অংশের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ভেঙে যায় রেলিং। এসব ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে না পারলে যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে সেতুটি।
স্কুল শিক্ষক আইয়ুব আলী ও কৈংক দেওয়ান জানান, এক সময়ে কয়েক গ্রামের মানুষের বাজারে যেতে হলে খাল পার হতে হতো। মধ্যম তিনটহরী খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এখানকার মানুষের দুর্ভোগ কমে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে এই সেতুর ওপর এক ধরনের নির্যাতন চলছে। কেননা ছোটখাটো যানবাহন চলাচলের কথা থাকলেও প্রতিনিয়ত বালুবাহী ভারী ট্রাকের অবাধ চলাচল বেড়ে গেছে। আর ট্রাকের ধাক্কায় দিন দিন সেতুর বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য নূর জাহান বলেন, ‘স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বালুভর্তি ট্রাক এ পথে আসা-যাওয়া করায় সেতুর আজ দুরবস্থা। ধসে গেছে অনেক জায়গা। তারপরও কে শোনে কার কথা।’
মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিন আফরোজ ভূঁইয়ার ভাষ্য, সেতুর ওপর দিয়ে যাতে বড় যানবাহন চলতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
এত বড় লোকসানের বোঝা সইবেন কী করে
ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে সাড়ে সতেরো কোটি মানুষের খাবারের জোগান নিশ্চিত করা যেকোনো সরকারের জন্যই বিশাল চ্যালেঞ্জের কাজ। রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, মূল্যস্ফীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি—এ সবকিছু ছাপিয়ে বড় কোনো বিপর্যয় ছাড়াই এ দেশের মানুষ এখনো টিকে আছে, তার সবচেয়ে বড় অবদান কৃষকের। অথচ দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে সবচেয়ে অবহেলার শিকার হন তাঁরা। এবার আলুচাষিরা তাঁদের উৎপাদিত আলু নিয়ে যে সীমাহীন দুর্ভোগ ও লোকসানের মুখে পড়েছেন, তাতে মনে হতেই পারে, আলু উৎপাদন করে তাঁরা কি অপরাধ করে ফেলেছেন?
আমনের মৌসুমে দফায় দফায় বন্যা হওয়ায় চালের উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় বাজারে চালের দাম এখন গত বছরের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি। এ অবস্থাতেও শীতের সবজির ওপর ভর করে প্রায় দুই বছর পর গত মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০-এর নিচে নেমেছে। এ ক্ষেত্রেও প্রধান অবদান কৃষকের। কিন্তু শীতের সবজি চাষে এ বছর তাঁরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন। এবার পেঁয়াজ উৎপাদনেও কৃষকেরা চমক দেখিয়েছেন, ফলে ভোক্তারা তুলনামূলক কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। কিন্তু পেঁয়াজেও কৃষকেরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি। আলুর ক্ষেত্রেও কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।
এবার যে আলুর উৎপাদনও বেশি হবে, সেই পূর্বাভাস আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। আগাম বুঝতে পেরে হিমাগারের মালিকেরা সিন্ডিকেট করে হিমাগারের ভাড়া বাড়িয়ে দেন। কৃষকেরা মানববন্ধন করে, রাস্তায় আলু ফেলে প্রতিবাদ করে হিমাগারের ভাড়া কমানোর দাবি জানান। সরকার কিছুটা ভাড়াও কমান। কিন্তু প্রথম আলোসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে হিমাগারের মালিকেরা কৃষকদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আলু সংরক্ষণের অনুমতিপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত কতটা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অধিকাংশ আলুচাষি।
হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি এবং হিমাগারে সংরক্ষণের অনুমতিপত্র না পাওয়ায় কৃষকদের মাঠ থেকেই তাঁদের আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। ১ কেজি আলু উৎপাদনে যেখানে কৃষকদের খরচ হয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা, সেখানে মাঠ থেকে মাত্র ১৪ টাকায় বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এত বড় লোকসানের বোঝা তাঁরা সইবেন কী করে!
শীতের সবজি, পেঁয়াজ ও আলুর দাম এতটা পড়ে যাওয়ার পেছনে হঠাৎ করেই হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি উঠেছে। সরকার যদি একের পর এক ফসলে কৃষকের এই ক্রমাগত লোকসানের দিকে নজর না দেয়, তাহলে স্বল্প মেয়াদে বাজারে স্বস্তির দেখা মিললেও দীর্ঘ মেয়াদে বড় সংকট তৈরি করবে। হিমাগারের মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে কেন হাজার হাজার কৃষক লোকসানের মুখে পড়বেন? সরকারকে অবশ্যই কৃষকদের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।