Samakal:
2025-04-15@15:57:26 GMT

মধ্য শাবানের পুণ্যময় রাত

Published: 13th, February 2025 GMT

মধ্য শাবানের পুণ্যময় রাত

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিম জাতিকে এমন কিছু বরকতময় দিন ও রাত উপহার দিয়েছেন, যাতে ইবাদত করলে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। এগুলোর মধ্যে শবেবরাত অন্যতম। 
ফারসি ভাষায় ‘শব’ অর্থ রাত; ‘বরাত’ অর্থ ভাগ্য। শবেবরাতের অর্থ হলো ভাগ্যরজনি। যেহেতু এ রাতে মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়, তাই একে ভাগ্যরজনি বলা হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হজরত ইকরামা (রা.

) বলেন, এ রাতে আগামী এক বছরের রিজিক নির্ধারণ করা হয়।

আগামী এক বছরে যারা মারা যাবে, যারা জন্মগ্রহণ করবে, তাদের তালিকা এ রাতে নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণের হাতে সোপর্দ করা হয়। অন্যদিকে আরবি পরিভাষায় এটিকে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বলা হয়। লাইলাতুল অর্থ রাত আর ‘বারাআত’ অর্থ মুক্তি, ক্ষমা। যেহেতু এ রাতে আল্লাহ তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন, তাই একে মুক্তির রজনি বলা হয়। হাদিসে এ রাতকে ‘লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত নামে অভিহিত করা হয়েছে। 

একাধিক সহিহ হাদিসে এ রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। তা ছাড়া এ রাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে রয়েছে বিশিষ্ট ইমামদের নির্ভরযোগ্য বহু বক্তব্য। শবেবরাতে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ নাজিল হয়। বিখ্যাত সাহাবি হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান)

অপর হাদিসে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সব বান্দাকে ক্ষমা করেন। তবে মুশরিক, হিংসুক, জাদুকর, ব্যভিচারী, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান ও অন্যায়ভাবে হত্যাকারীকে ক্ষমা করেন না।’ (ইবনে মাজাহ) 
শবেবরাতে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যা করলে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। এ রাতে করণীয় আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে: রাতে নফল নামাজ আদায় করা এবং দিনে রোজা রাখা। এ রাতে সাধ্যমতো নফল নামাজ আদায় করা এবং পরদিন নফল রোজা রাখা খুবই পুণ্যের কাজ।
হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত আসবে, তখন তোমরা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে এবং দিনে রোজা রাখবে।’ (ইবনে মাজাহ)
অন্যত্র হজরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন রয়েছে, যে রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না– ১. জুমার রাত, ২. রজব মাসের প্রথম রাত, ৩. শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (শবেবরাত),

৪. ঈদুল ফিতরের রাত; ৫. ঈদুল আজহার রাত।’
শবেবরাতের রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতুল বাকিতে উম্মতের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একদা এ রাতে আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে থাকি। এর পর আমি তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে দু’হাত তোলা অবস্থায় পেলাম।’ (ইবনে মাজাহ)। 
শবেবরাত পুণ্যময় রজনি। এ রাতে যে কোনো ধরনের পাপ বা গর্হিত কাজ না করে বরং আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে ইবাদতে কাটিয়ে দেওয়াই উত্তম। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য যা ক্ষতিকর এবং যে কাজের দ্বারা সমাজের মানুষের মাঝে ভীতির সৃষ্টি করে, তা পরিহার করাই হলো ইসলামের অন্যতম নির্দেশ।
এ রাতে আতশবাজি ছোড়া এবং পটকা ফুটানো উচিত নয়। এর কারণে যেখানে সেখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। তাই এসব কাজ ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। কোনো কোনো এলাকায় এ রাতে অনেক বাড়িঘর, মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়। অথচ এগুলোর সঙ্গে শবেবরাতের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এসব করা অপচয়ের শামিল। আল্লাহ তায়ালা সুরা বনি ইসরাইলে এরশাদ করেন, ‘তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’ 

ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, 
ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত বর ণ ত

এছাড়াও পড়ুন:

অলৌকিক উট

নবী নুহ (আ.)-এর ছেলে ছিলেন সাম। হজরত সালেহ (আ.) ছিলেন সামের বংশধর। তিনি সামুদ জাতির নবী। হিজাজ ও সিরিয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত ওয়াদিউল কুরা প্রান্তরে ছিল তাঁদের বসতি, বর্তমানে লোকে যাকে চেনে ‘ফাজ্জুহ নাকাহ’ বা ‘মাদায়েনে সালেহ’ নামে। ঐতিহাসিক মাসউদি বলেন, ‘সিরিয়া থেকে হিজাজে যাওয়ার পথে সামুদ সম্প্রদায়ের ধ্বংসপ্রাপ্ত বসতিগুলোর ভগ্নাবশেষ এবং তার প্রাচীন চিহ্নগুলো দেখা যায়।’ (কাসাসুল কোরআন, মুহাম্মদ হিফজুর রহমান, অনুবাদ: আবদুস সাত্তার আইনী, ১/ ১২৮)

বেশ সচ্ছল ও অবস্থাপন্ন ছিল সামুদ জাতি। শক্তিতে বলীয়ান ছিল, সুখ-শান্তির কমতি ছিল না। পাথর খোদাই ও স্থাপত্যবিদ্যায় তাদের ছিল বিশেষ পারদর্শিতা। বড় বড় প্রাসাদ ও পাহাড় কেটে ঘর বানাত তারা। তাদের ছিল সবুজ-শ্যামল উদ্যান। সোনা-রুপার প্রাচুর্যে মোড়ানো জীবন। কিন্তু তারা আল্লাহকে মানত না। আল্লাহর সঙ্গে অংশীদারি করত। সালেহ (আ.) ছিলেন তাদের গোত্রের একজন। তিনি ছিলেন বিচক্ষণ, সুবক্তা ও পণ্ডিত ব্যক্তি।

আরও পড়ুনআল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন নবী সোলায়মান (আ.) ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

একদিন তিনি আল্লাহর নবী হয়ে তাদের কাছে গেলেন। তাদের একাত্মবাদের পথে আহ্বান করলেন। বললেন, ‘আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো উপাসক নেই, তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাতেই তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, কাজেই তাঁর কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো, আর তাঁর দিকেই ফিরে এসো, আমার প্রতিপালক তো অতি কাছে, আর তিনি ডাকে সাড়া দানকারী।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৬১)

গুটিকয়েকজন ছাড়া কেউ তাঁর ডাকা সাড়া দিল না। সতর্কবার্তাও এড়িয়ে গেল। তারা প্রাসাদ, অর্থবৈভব ও বিলাসসামগ্রী নিয়ে গর্ব-অহংকার করল। বলল, ‘আমাদের মধ্য থেকে কি তার ওপরই অহি নাজিল হলো?’ (সুরা সাদ, আয়াত: ৮)

তারা সালেহ (আ.)-এর কাছে নবী হওয়ার প্রমাণ চাইল, আপনি যদি আল্লাহর রাসুল হন, তাহলে আমাদের কাতেবা নামের পাথরময় পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি ১০ মাসের গর্ভবতী, সবল ও স্বাস্থ্যবতী উট বের করে দেখান। সালেহ (আ.) তাদের থেকে ইমান আনার প্রতিশ্রুতি নিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী উট বেরিয়ে এলো পাথুরে পাহাড় থেকে। কোরআনে এটিকে ‘আল্লাহর উট’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ বিস্ময় দেখে কিছু লোক তৎক্ষণাৎ ইমান আনল। অন্যরা ইমান আনতে চাইলে পুরোহিতরা বাধা দিল।

আরও পড়ুনইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামের ফজিলত১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সালেহ (আ.) তাদের উটের ব্যাপারে সতর্ক করলেন, ‘আল্লাহর এই উটটি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন। অতএব তাকে আল্লাহর জমিনে বিচরণ করতে দাও এবং তাকে মন্দভাবে স্পর্শও করো না। নতুবা অতিসত্বর তোমাদের আজাব পাকড়াও করবে।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৬৪)

একই কূপ থেকে উট ও অন্য জন্তুদের পানি পান করাত তারা। উট পানি পান করলে পানি শেষ হয়ে যেত। সালেহ (আ.) উটের জন্য একদিন ও তাদের জন্য একদিন নির্ধারণ করে দিলেন। অনেকেই সালেহ (আ.)-এর কথা মেনে নিল। এভাবে কিছুদিন চলল। তারা উট ও তার বাচ্চাদের থেকে উপকৃত হলো। এর মধ্যে তারা পানি নিয়ে উটের দিনটাকে ঝামেলা মনে করল। একপর্যায়ে সামুদ জাতির ‘মিসদা’ ও ‘কাসার’ নামের দুই যুবক বিভিন্ন প্রলোভনের নেশায় মত্ত হয়ে এই উটকে হত্যা করল। (কাসাসুল কোরআন, মুহাম্মদ হিফজুর রহমান, অনুবাদ: আবদুস সাত্তার আইনী, ১/১৪৪-১৪৫)

আল্লাহ বললেন, ‘তারা উটকে হত্যা করে স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তারা বলল, হে সালেহ, নিয়ে এসো যা দিয়ে আমাদের ভয় দেখাতে, তুমি যদি রাসুল হয়ে থাকো।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৭৭)

সালেহ (আ.) লোকদের কাছে গিয়ে আজাবের দিনক্ষণ জানিয়ে দিলেন, ‘তোমরা নিজেদের ঘরে আরও তিন দিন বাস করে নাও; এটি ওয়াদা, যাতে বিন্দুমাত্র মিথ্যা নেই।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৬৫)

প্রথম দিন তাদের সবার মুখমণ্ডল হলদে ফ্যাকাসে, দ্বিতীয় দিন লাল এবং তৃতীয় দিন ঘোর কালো হয়ে গেল। এক শনিবার ভোরে গগনবিদারী গর্জন, মুহুর্মুহু বিজলির চমক আর ভয়াবহ ভূমিকম্পে তাদের মৃত্যু হলো। তারা নিজ নিজ ঘরে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকালবেলায় নিজ নিজ ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৭৮)

লেখক: আলেম

আরও পড়ুনরানি বিলকিস ও হজরত সোলায়মানের (আ.) ঘটনা১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অলৌকিক উট