বয়স ৪৫, গেছেন স্ত্রীও, তাতে কী! জাবির ভর্তি পরীক্ষায় লড়ছেন তকু
Published: 13th, February 2025 GMT
অসুস্থতা ও নানা প্রতিকূলতাকে জয় করা অদম্য একজন মানুষ তৌহিদুর রহমান তকু। বয়স পঁয়তাল্লিশ। এই বয়স থেকে জীবনে নতুন পাতা খুলতে চান তিনি। দাঁড়াতে চান গবির শিক্ষার্থীদের পাশে।
একবুক স্বপ্ন নিয়ে তিনি এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। তাকে দেখা গেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি পরীক্ষার বেঞ্চে।
২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৪৫ বছর বয়সি লড়াকু শিক্ষার্থী তকু।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কলা ও মানবিক অনুষদের অধীনে ‘সি’ ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি।
মাঝ বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা তৌহিদুর রহমান তকুর সঙ্গে কথা হলে তিনি তার জীবনের গল্প শোনান।
তকুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়। বাবা মৃত বজলুর রশিদ পেশায় ছিলেন একজন স্টেশন মাস্টার। কিশোর বয়সে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার আগেই মস্তিষ্কের জটিল রোগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন । ২৬-২৭ বছর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করেন তিনি। বিয়ে করেছিলেন, সেই স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যান। সুস্থ হওয়ার পরে নওগাঁ সরকারি কে.
তৌহিদুর রহমান তকু বলেন, “অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মস্তিষ্কের এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আমি দীর্ঘদিন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলাম। এরপর ২০১৭-২০১৮ সালের দিকে সুস্থ হয়ে আমি নতুন করে পড়াশোনা শুরু করি। ২০১৯ সালে জেডিসি, ২০২১ সালে এসএসসি/দাখিল এবং ২০২৪ সালে আলিম পাস করি। এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছি। সুস্থ হওয়ার পরে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। নিজেকে আরো সুসংগঠিত ও সুনিয়ন্ত্রিত করে প্রতিষ্ঠিত নাগিরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।”
ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন তৌহিদুর রহমান তকু।
পড়া শেষে কী হতে চান- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই বছর আমার প্রস্তুতি তেমন ভালো না। ইংরেজিতে খানিকটা দুর্বল আমি। এ বছর হয়তো চান্স পাব না। তবে যদি পাই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে একজন শিক্ষক হতে চাই। আমি গরিব শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে চাই এবং তাদের স্বল্প খরচে পড়াতে চাই। দেশের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী যেন কম খরচে ভালো শিক্ষা পায়, সেই প্রচেষ্টা করব সারা জীবন।”
স্ত্রী চলে যাওয়ার পর মা ও বড় বোন তকুর দেখাশোনা করেন। যোগ্যতা অনুসারে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবেন তিনি। সুযোগ পেলে বাংলা অথবা ইংরেজিতে পড়তে চান বছর পঁয়তাল্লিশের এই শিক্ষার্থী।
ঢাকা/রাসেল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকার বাতাস আজ ছুটির দিনেও অস্বাস্থ্যকর
আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সকালেও রাজধানী ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আইকিউএয়ারে ঢাকার বায়ুমান ১৫২। এ মানকে অস্বাস্থ্যকর গণ্য করা হয়। আজ দূষণে বিশ্বের ১২৪টি নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান দশম।
দেশের তিন বিভাগীয় শহরের মধ্যে রাজশাহীর বায়ুর মান ১৬০, রংপুরে ১৫৪ ও চট্টগ্রামে ৯৮।
বায়ুদূষণের এ চিত্র তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে।
ছুটির দিনে সাধারণত যানবাহন চলাচল কম থাকে। কলকারখানাও অনেক বন্ধ থাকে। সে অনুযায়ী দূষণ কম হওয়ার কথা। কিন্তু ঢাকার দূষণ ছুটির দিন আর কর্মদিবস মানে না।
আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে আছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। বায়ুর মান ২৬৩।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৪’ তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দূষিত নগর ছিল ঢাকা। ২০২৩ সালে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। নগর হিসেবে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। গত বছর (২০২৪) বায়ুদূষণে শীর্ষ দেশ ছিল আফ্রিকার চাদ। আর নগর হিসেবে শীর্ষে ছিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি।
সার্বিকভাবে বায়ুদূষণে আগের বছরের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থানের সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। তবে এ পরিবর্তনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন না পরিবেশবাদী ও গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, দূষণ আরও বিস্তৃত হচ্ছে, এবারের প্রতিবেদন সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। কারণ, আগে দেখা গেছে যে রাজধানীর তুলনায় দেশের সার্বিক গড় বায়ুমান কিছুটা ভালো থাকত। কিন্তু এবারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ও দেশের সবচেয়ে দূষিত নগরী ঢাকার বায়ুর মান প্রায় একই। উভয়ের মান ৭৮।
গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এক দিনও নির্মল বায়ু পাননি রাজধানীবাসী। চলতি মাসেরও একই হাল।
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে আছে কলকারখানা ও যানবাহনের দূষিত ধোঁয়া, ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো। দূষণ রোধে হাঁকডাক ও নানা ধরনের প্রকল্পও কম হয়নি সরকারি স্তরে, কিন্তু দূষণ কমছে না।
দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ১১ গুণ বেশি।